অভ্যুত্থানের ৪ মাস: বিক্ষোভ, অসহযোগে অবিচল মিয়ানমার

0
157

টাইমস বিদেশ : নির্বাচিত সরকারকে হঠিয়ে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করায় জান্তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থীদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের মাধ্যমে অভ্যুত্থানের চার মাস পার করল মিয়ানমার। দেশজুড়ে জান্তার বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল, চার মাসেও তা প্রশমিত হওয়ার বিন্দুমাত্র লক্ষণ দেখা যায়নি বলে মঙ্গলবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ দমনে নিরাপত্তা বাহিনী নিষ্ঠুরতা চালালেও, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এখনও দেশে শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনতে পারেনি। বেসরকারি প্রশাসন জান্তাদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনে নেমেছে, দেশজুড়ে ধর্মঘট এবং বিভিন্ন অঞ্চলে ও সীমান্তে বিদ্রোহীদের সঙ্গে রীতিমত সশস্ত্র লড়াই চলছে। মূলধারার বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ছবিতে দেখা যায়, মঙ্গলবারও মিয়ানমারের লুয়াং লোনের দক্ষিণে, সাগায়িং বিভাগের কালে ও মোনিওয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় এবং বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াংগনে বিক্ষোভ করেছে আন্দোলনকারীরা। ১ ফেব্রæয়ারির অভ্যুত্থানের পর প্রথমবার দেশের বিদ্যালয়গুলো আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হলেও নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে উপস্থিতি ছিলো কম। সামরিক জান্তার বিরোধিতার জেরে হাজার হাজার শিক্ষককে বরখাস্ত করার প্রতিবাদেও বিদ্যালয়ে যোগদান থেকে বিরত ছিলো অনেকে। অনেক শিক্ষার্থী নিজেদের সাদা রঙের পোশাকের ওপর রক্তের ছিটা দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। অধিকারকর্মীদের বরাতে জাতিসংঘের তথ্যে, অভ্যুত্থানের পর নিরাপত্তা বাহিনীর দমন অভিযানে এ পর্যন্ত ৮৪০ জন নিহত হয়েছে। জান্তা অবশ্য ৩০০ জনের প্রাণহানির হিসাব দিয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালিত গেøাবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার সংবাদপত্রে মঙ্গলবার জান্তা প্রধান মিন অং হ্লায়িংকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, নির্বাচনে ‘গণতন্ত্রের অসততার’ কারণেই বর্তমান সংকট উদ্ভুত হয়েছে। বড় করে এই সংবাদের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘তাতমাদো গণতন্ত্রকে মূল্য দেয়’। বিক্ষোভ দমনে নিজ দেশের নাগরিকদের হত্যা করায় পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ ক্ষোভ এবং প্রতিবেশিরা উদ্বেগ জানিয়েছে। এপ্রিলে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ান মিয়ানমারের সংকট সমাধানে পাঁচ-দফা ঐক্য ঘোষণা করে, যদিও এর কোন সময়সীমা দেওয়া হয়নি। অন্তত চারটি ক‚টনৈতিক সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, আসিয়ানের সভাপতি ও মহাসচিব এই সপ্তাহে মিয়ানমার সফরের পরিকল্পনা করছেন। সফরে অন্যান্য পক্ষের পাশাপাশি তারা জান্তার নেতৃত্বের সঙ্গেও আলোচনা করবেন। এই সফরের জান্তার ক্ষমতাকে উপেক্ষা করে গঠিত মিয়ানমারের ছায়া ঐক্য সরকারের সদস্য অথবা বন্দিদের কারো সঙ্গে তারা কথা বলবেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। এদিকে দেশের প্রান্তীয় এলাকাগুলোয় সামরিক অস্ত্রে সুসজ্জিত মিয়ানমারের বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র লড়াইয়ে নেমেছে বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীর বিদ্রোহীরা। দুইপক্ষের লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে উদ্বাস্তু হচ্ছে হাজার হাজার মিয়ানমারবাসী। মঙ্গলবার, স্থানীয় একটি দাতব্য সংস্থা জানিয়েছে, চিন প্রদেশের মিনদাত শহর থেকে পালিয়ে আট হাজার মিয়ানমারবাসী একটি আশ্রয়কেন্দ্রে জড়ো হয়েছে। গত মাসে কয়েকদিনের লড়াইয়ের পর ওই শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয় সামরিক জান্তা। সোমবার রাতে কায়াহ প্রদেশের ডেমোসো শহরে বিমান থেকে গোলা বর্ষণ করে মিয়ানমারের বিমানবাহিনী। শহরের এক বাসিন্দা সেনাদের ছবি সম্বলিত একটি ভিডিওচিত্র দেখান রয়টার্সের সাংবাদিককে। তিনি জানান, গোলার আঘাতে নিহত ছয়জনের দেহ তিনি দেখেছেন। অন্য বাসিন্দাদের হিসাব অনুযায়ী ওই হামলায় ২০ জন মারা গেছে। মিয়ানমারের একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী- কারেননি ন্যাশনালিস্ট ডিফেন্স ফোর্স নিজেদের ফেইসবুক পাতায় দাবি করেছে সোমবার ৮০ জন সেনা সদস্য নিহত হয়েছে। তাদের একজন যোদ্ধা এবং একজন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যুর কথাও উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে। তবে এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি রয়টার্স। সামরিক জান্তার মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা ফোন ধরেনি। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের রাতের সংবাদেও ডেমোসোর অস্থিতিশীলতা নিয়ে কোন খবর দেওয়া হয়নি। জাতিসংঘের হিসাবে, কায়াহর চলমান লড়াই প্রায় ৩৭ হাজার মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে। অনেকেই পালিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে এবং তাদের খাদ্য ও ওষুধ দরকার। নেলসন ম্যান্ডেলা প্রতিষ্ঠিত বিশ্বের সাবেক জাতীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠন দ্য এলডারস মঙ্গলবার মিয়ানমারের জান্তার ওপর আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের প্রতি চাপ প্রয়োগের আহŸান জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি মেরি রবিনসন বলেন, “মিয়ানমার বর্তমানে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার একটি বিপদজনক পথে রয়েছে। “উদ্যোগ নিতে ব্যর্থতার মধ্যদিয়ে অভ্যুত্থানকে সফল হতে দিলে এটা আন্তর্জাতিক আইন-ভিত্তিক শৃঙ্খলা ব্যবস্থার আরও অবমূল্যায়ন করবে।”