অনুসারীরা বড় পদে, মাঠের কর্মীরা বঞ্চিত : খুলনা নগর যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি

0
466

নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘ দেড় বছর পর খুলনা মহানগর যুবদলের ২২৫ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্র থেকে এই কমিটি অনুমোদন দেওয়া হলেও গতকাল রোববার তা প্রকাশ করা হয়। দীর্ঘদিন পর ঘোষিত এই কমিটি নিয়ে খুলনায় যুবদল নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছি। আবার কমিটিতে পদ পেয়ে উচ্ছাসও প্রকাশ করেছেন নতুন নেতারা।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় ও অনুপস্থিত ছিলেন-এমন নেতারাই বড় পদ পেয়েছেন। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজের অনুসারীদের প্রাধান্য দিয়েছেন। এতে কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা। ইতোপূর্বে থানা সভাপতি ছিলেন এমন অনেক নেতাও বাদ পড়েছেন। আবার টাকার জোরে দেশের বিভিন্ন জেলায় ও বিদেশে চাকরি করেও পদ পেয়েছেন অনেকে। তবে মহানগর যুবদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল মাহাবুব হাসান পিয়ারু ও নাজমুল হুদা চৌধুরী সাগরকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর যুবদলের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। প্রায় দেড় বছর পর এই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ২২৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করিয়েছেন। ২২৫ সদস্যের এই কমিটিতে ২৬ জন সহ-সভাপতি, ২৮ জন যুগ্ম সম্পাদক, ১৬ জন সহ-সাধারণ সম্পাদক, ১৪ জন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, ৬৮ জন সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক এবং ৭০ জন সদস্য রয়েছেন।

নেতাকর্মীরা জানান, দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রামে উপস্থিত থেকেও খানজাহান আলী থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি মোল্লা সোহরাব হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক দিদারুল ইসলাম লাভলু, দৌলতপুর থানা সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান পিন্টু, সদর থানার সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া, আশিকুজ্জামান আশিক বাদ পড়েছেন। সব থেকে অবাক করার বিষয় হচ্ছে ৫ সদস্যের মূল কমিটিতে প্রথম যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন সদর থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি জি এম রফিকুল হাসান। মূল কমিটি থেকে তিনি বাদ পড়েছেন।
রফিকুল হাসান সমকালকে বলেন, দলের দুঃসময়ে প্রতিটি মিছিল-সমাবেশ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলাম, কিন্তু আমাকে তো রাখেই নি। আমার সঙ্গে যারা যুবদল করতো তাদের কাউকেই কমিটিতে রাখা হয়নি।

খানজাহান আলী থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি মোল্লা সোহরাব হোসেন বলেন, এরা যুবদলকে ভাইদল বানাতে চায়। আমাকে না রেখে ভাল করেছে। দলকে ধ্বংস করার দায় আমাদের আর নিতে হবে না।
নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে যারা সার্বক্ষণিক ঘোরাফেরা করেন তাদেরকেউ বড় বড় পদ দেওয়া হয়েছে। বিগত আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথের নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হয়েছেন। যাদের কমিটিতে রাখা হয়নি তারা বেচেঁ গেছেন। কিন্তু অনেককে জুনিয়রদের চেয়েও নিচের পদ দেওয়া হয়েছে। তাদের কষ্ট আরও বেশি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নেতা বলেন, মিছিল তো দূরের কথা কোনদিন যুবদলের কোনো সভাতেও যায়নি অথচ ধর্ম সম্পাদক করা হয়েছে মোঃ মিরাজুল ইসলামকে। দপ্তর সম্পাদক পদ পেয়েই খান ইমরানের রাজনীতিতে হাতে খড়ি শুরু। নেতাদের ব্যবসায়ীক অংশীদাররা বড় পদ পেয়েছেন। অথচ গত ১৫ বছর ধরে যুবদল করে আমি হয়েছি সদস্য।
কমিটিতে দেখা গেছে, খুলনা মহানগর ছাত্রদলের আশিংক কমিটিতে সহ-সভাপতির পদ পেয়েছিলো আরমান হোসেন রুপম। পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাকে বাদ দেওয়া হয়। রুপমকে মহানগর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক করা হয়েছে।
তবে দীর্ঘদিন থেকে মালয়শিয়া অবস্থান করেও যুগ্ম সম্পাদক হোসেন মোঃ এনায়েত হোসেন। দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় থেকেও আলমগীর হোসেন লালন সহ-সভাপতি, জিএম তারেক যুগ্ম সম্পাদক হয়েছেন।
এছাড়া শাহীন মল্লিক রাজু বাগেরহাটে এবং মোস্তাফিজুর রহমান উষা দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে চাকরি করছেন। তারাও যুবদলের নগর কমিটির সদস্য হয়েছেন। দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় ধরে রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় থেকেও সহ-সভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক হয়েছেন এমন তালিকা আরও দীর্ঘ।
এ ব্যাপারে মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা চৌধুরী সাগর বলেন, দীর্ঘ ১৪ বছর পর যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ায় অনেকে উচ্ছাসিত। এই কমিটিকে বিতর্কিত করতে অনেকে মিথ্যা ছড়াচ্ছেন।
যুবদলের সভাপতি মাহাবুব হাসান পিয়ারু বলেন, সাবেক থানা সভাপতিদের অনেকে বিএনপিতে চলে যাবেন। এজন্য তাদের রাখা হয়নি। জি এম রফিকুল হাসানের বিরুদ্ধে দলীয় শৃংখলাভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া এনায়েত হোসেন এখন দেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। বাইরে থেকে যুবদলের কমিটি এসেছে-এমন তথ্য সঠিক নয়। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছে, ছোটখাটো কিছু ভুল ত্রুটি হতে পারে। পরে সেগুলো সংশোধন করা হবে।