৪ লক্ষ মানুষের চিকিৎসায় তালা হাপাতালে ডাক্তার ৫জন

0
311

মোঃ রোকনুজ্জামান টিপু তালা:
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার প্রায় ৪লক্ষ মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োজিত রয়েছেন মাত্র ৫ জন ডাক্তার। ফলে উপজেলা ও উপজেলার বাইরে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শ’ শ’ রোগী চিকিৎসা সেবা না নিয়েই ফিরে যান বাড়িতে। কতৃপক্ষের শতভাগ সেবা প্রদানের ইচ্ছা থাকলেও ডাক্তার স্বল্পতায় তা বাধাগ্রস্থ হওয়ায় তারাও প্রতিনিয়ত বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৭২ সালের ৬ জুন ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি ৪ একর ৬৪ শতক জমির উপর যাত্রা শুরু করে। এরপর ২০০৯ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নিত করা হলেও এর চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া হচ্ছে পুরনো জনবল দিয়ে। চলতি সরকারের শাষনামলে সারা দেশে চিকিৎসা সেবায় আমূল পরিবর্তন আসলেও তালা হাসপাতাল রয়ে গেছে সেই পুরনো রুপে।
সূত্র মতে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটির জন্য মোট জনবল চাহিদা রয়েছে ২৩২ টি। এরমধ্যে মধ্যে ১৬৯ টি পদ পূরণ থাকলেও শূন্য রয়েছে আরো ৬৩টি পদ। যার ৩৩টিই ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তার। বর্তমানে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সহ মাত্র ৫টি পদ পূরণ রয়েছে। সব মিলিয়ে ২৮ জন ডাক্তার শূন্যতায় হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে কোন রকম ঢিমে তালে। বিশেষ করে ৪র্থ শ্রেণী আউটসোর্সিং (পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ওয়ার্ডবয়, কুক মশালচী, নিরাপত্তা প্রহরী) স্বল্পতায় স্বাস্থ্যসেবায় কখনো কখনো রীতিমত স্থবিরতা নেমে আসে।
তালা হাসপাতালে পর্যাপ্ত জনবল, উন্নত প্রযুক্তির চিকিৎসা সরঞ্জাম ও পর্যাপ্ত এ্যাম্বুলেন্স সেবা না থাকায় গুরুতর রোগীদের জেলা সদর থেকে শুরু করে অন্যত্র রোগী সরবরাহে স্বজনদের ভোগান্তিরও যেন অন্ত নেই। এমন পরিস্থিতিতে রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। একটি মাত্র লক্কর-ঝক্কর (পুরাতন) এ্যাম্বুলেন্স দিয়ে চলছে কোনরকম জরুরী রোগী সেবা কার্যক্রম। এমন পরিস্থিতিতে ইউএইচ এন্ড এফ পি ও আর জিপ গাড়িসহ একটি এ্যাম্বুলেন্সের খুবই প্রয়োজন। ডেন্টাল ইউনিটের কার্যক্রম দীর্ঘ দিন যাবৎ বন্ধ থাকায় ইতোমধ্যে ইউনিটের সমস্ত সরঞ্জামাদি নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিদিন বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত রোগী সাধারণকে সেবা নিতে যেতে হয় ২৫ কিলোমিটার দূরে জেলা সদর হাসপাতালে।
তবে সর্বশেষ হাসপাতালে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসাবে ডাঃ মীর আবু মাউদ যোগদান করার পর থেকে চিকিৎসা সেবায় যথেষ্ঠ পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। চিকিৎসা সেবায় ডাক্তার-কর্মচারীদের মধ্যে সমন্বয় সাধনে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মী না থাকলেও নিজ অর্থায়নে গোটা হাসপাতাল পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি চিকিৎসক-কর্মচারীদের নজরদারী ও রোগী সাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়েছেন। সাম্প্রতিক দেশব্যাপী আলোচিত ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতার পাশাপাশি রোগী শনাক্ত ও চিকিৎসা সেবায় এখন পর্যন্ত কোন অনাকাংখিত খবর আসেনি। হাসপাতালের বাইরে ঢাকায় প্যানক্রাইসিস অপরেশননের পর চিকিৎসাধীন আবস্থায় গত সোমবার (২ সেপ্টম্বর) ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে তালার এক যুবকের মৃত্যুর খবর পাওয়াগেছে।
জনবল সংকটের মধ্যেও হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় পরিবর্তনের খবরে সরেজমিনে প্রতিবেদনকালে হাসপাতালে আগত একাধিক রোগী ও তাদের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানাযায়, বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার তৎপরতায় চিকিৎসা সেবায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে এতদিন শিশু ওয়ার্ড চালু না থাকায় এলাকার শিশুদের নানা চিকিৎসায় জেলা সদরসহ খুলনায় যেতে হত। আর এখন নতুন স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা যোগদানের পর থেকে চালু করা হয়েছে শিশু ওয়ার্ড। শুধু এখানেই শেষ নয়, দীর্ঘ দিন অচল অবস্থায় পড়ে থাকা একটি এক্স-রে মেশিন নিজ দায়িত্বে ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে সচল করেছেন। একটি আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও তদারকির অভাবে তা দীর্ঘদিন অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
বর্তমান সরকার চিকিৎসা সেবায় আমূল পরিবর্তন আসলেও এখন পর্যন্ত তালা হাসপাতালের কার্যত কোন উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয়নি। এমনটাই মনে করেন সেখানে স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা রোগী সাধারণ। হাসপাতাল সূত্র জানায়,বিস্তীর্ণ তালা উপজেলার বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া উপজেলার একটা বড় অংশের রোগী সাধারণ সেবা নিতে তালায় আসেন। তবে জনবলসহ ও উন্নত প্রযুক্তির চিকিৎসা উপকরণ সংকটে হাসপাতালটিতে আগত রোগী সাধারণ তাদের কাংখিত সেবা পাচ্ছেননা।
এ বিষয়ে তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার বলেন, আমরা বারংবার বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি কিন্তু কাজ নাহওয়ায় তিনি নিজেও হতাশ। উপজেলা চেয়ারম্যানের পাশাপাশি ভুক্তভোগী এলাবাসী সকল সংকট কাটিয়ে তালা হাসপাতালে গতিশীলতা ফেরাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কর্মকর্তা ডাঃ মীর আবু মাউদ এপ্রতিনিধিকে বলেন, ‘আউটডোর ও ইনডোরে দৈনিক ৩শ থেকে ৪শ রোগী চিকিৎসাকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। অল্প সংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নামে ৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও জনবল আছে শয্যার অর্ধেকের মতো। চিকিৎসক সংকটের কথা প্রতিমাসে লিখিত ভাবে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কতৃপক্ষ জানানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাঃ শাহিনুর রহমান এপ্রতিনিধিকে বলেন, চিকিৎসক সংকট সারা বাংলাদেশেই।অতি শিঘ্রই চিকিৎসক সংকট সমাধান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এছাড়া চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগ হচ্ছেনা। সর্বশেষ অকেজো যন্ত্রপাতি সচলের ব্যবস্থাসহ পর্যাপ্ত নতুন যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনে ইতোমধ্যে তালা হাসপাতালে ভিজিট সম্পন্ন করেছেন। যা খুব শীঘ্রই বাস্তবায়ন করা হবে।