৪ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর

0
332

খুলনাটাইমস ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সৌর বিদ্যুৎ সরবরাহ স্থাপনা, বিশ্বের ৭ম বৃহৎ ফোর টায়ার ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার, ভ্রাম্যমান গবেষণা তরী এবং শিপিং কর্পোরেশনের ৫টি নতুন জাহাজসহ চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী এসব উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনে সন্তোষ প্রকাশ করে আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এসব প্রকল্প দেশের জনগণের বিশেষ করে প্রকল্প আওতাধীন স্থানীয় জনগণের জীবন-মানের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
প্রকল্পগুলো হচ্ছে- পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ (১ম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে সৌর বিদ্যুৎ সুবিধার ব্যবস্থা, বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি, কালিয়াকৈর, গাজীপুরে নির্মিত ‘ফোর টায়ার ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার’, চট্টগ্রাম ভেটেরনারি ও এ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে কাপ্তাই লেকে নির্মিত ভ্রাম্যমান গবেষণা তরী (রিসার্চ ভেসেল) এবং বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ৫টি নতুন জাহাজ উদ্বোধন।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুল উশৈ সিং, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মেজর (অব:) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং গণভবনের শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহুল ইসলাম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুস সামাদ নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য দিক এবং পৃথক ভিডিও চিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করেন।
প্রধানমন্ত্রী ৪টি প্রকল্পকে কেন্দ্র করে প্রকল্প এলাকার প্রশাসন এবং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময করেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিবৃন্দ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এক সময় অশান্ত ছিল। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর শান্তি চুক্তির মাধ্যমে তাঁর সরকার এ সমস্যার সমাধান করেছে এবং এক সময়ের অন্ধকার পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন বিদ্যুতের আলো ছড়াচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লক্ষ্য ছিল এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা না হলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে এই বাংলাদেশ উন্নত দেশ হতো। স্বাধীনতার পর পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্ত পরিবেশ ছিল। কিন্তু ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত হয়ে ওঠে।
তিনি বলেন, ’৯৬ সালে তাঁর ক্ষমতায় আসার পর পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার সমাধান এবং এর কারণ চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছিল যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাটা রাজনৈতিক। কাজেই রাজনৈতিক পথেই তাঁর সরকার এটি সমাধানের উদ্যোগ নেয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরে এসেছে। সেখানকার ১ হাজার ৮শ’ অস্ত্রধারী আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের আমরা পুনর্বাসন করেছি।’
বিএনপির আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল। এখন সেখানে উন্নয়নের ঢেউ উঠেছে। সোলার বিদ্যুৎ ব্যবহারের ফলে সেখানে রাতদিন কাজ হচ্ছে। অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হচ্ছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকার বেইলী রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স নির্মাণসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিচ্ছিন্ন দ্বীপ বলে গ্রিড লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ দেয়া সম্ভব না। এ কারণে আমরা সোলার প্যানেলের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলোকিত করেছি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ‘মুজিব বর্ষ’ উদযাপনকালে সারাদেশের প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালাবার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম নয়, বাংলাদেশের একটি ঘরও অন্ধকার থাকবে না। প্রতিটি ঘরে আলো জ্বলবে। কাজের গতি বাড়বে, সময় বাড়বে। বিদ্যুতের আলোয় কাজ হবে।’
উল্লেখ্য, প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল জুলাই ২০১৫ থেকে জুন ২০১৯। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৭৬ কোটি ৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা। সরবরাহকৃত মোট সোলার প্যানেল ১৩ হাজার ৭০৪টি। তিনটি পার্বত্য জেলার ২৬টি উপজেলার ১২৮টি ইউনিয়নের ১৯শ’ ২৭টি গ্রাম বা পাড়ায় বাস্তবায়িত হয়েছে। আরো ৪০ হাজার পরিবারকে সোলার প্যানেলের আওতায় আনার মাধ্যমে পার্বত্য এলকায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের জন্য ২১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
আইটি ডাটা সুরক্ষা, নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য ডাটা ব্যবহার নিশ্চিত করে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরে ফোর টায়ার জাতীয় ডাটা সেন্টারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর তথ্য ধারণ ক্ষমতা দুই পেটাবাইট (১০ লাখ গিগাবাইট=১ পেটাবাইট)।
সরকারী অর্থ এবং চিনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় নির্মিত এই ডাটা সেন্টারের ১৪ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিং পেং যৌথভাবে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর নির্মাণ ব্যয় প্রায় ১ হাজার ৫শ’ ১৬ কোটি টাকা।
বিশ্বের সেরা মান নির্ধারণ প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ‘আপ টাইম ইনস্টিটিউট’ থেকে ডকুমেন্ট সংরক্ষণের ওপর একটি এবং কনষ্ট্রাকশন ফ্যাসিলিটিজ’র জন্য একটি সহ মোট দুইটি সনদ অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
অনুষ্ঠানে সনদপত্র প্রথানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম।
এটি বিশ্বের ৭ম বৃহত্তম ডাটা সেন্টার।এর আপ টাইম ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এখানে ডাটা স্টোরেজ ব্যাকআপ, রিকভারী, ডাটা সিকিউরিটি, ডাটা শেয়ারিং, ই-গর্ভনেন্স, ই সার্ভিস পাওয়া যাবে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন,‘এই ডাটা সেন্টারটি স্থাপনের পর ডাটা সংরক্ষণের জন্য আমাদের আর অন্য কারো ওপর নির্ভর করতে হবে না। এর মাধ্যমে বছরে সাড়ে ৩শ’কোটি টাকা আয় বা খরচ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।’
প্রধানমন্ত্রী ’৯৬ পরর্বর্তী সময়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বেসরকারী খাতে মোবাইল ফোন উন্মুক্তকরণ এবং তাঁর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শে কম্পিউটার সামগ্রী থেকে ট্যাক্স প্রত্যাহার সহ সে সময়কার বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে দেশকে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর করে তোলায় তাঁর সরকারের বাস্তবধর্মী পদক্ষেপের উল্লেখ করেন।
প্রতিহিংসার রাজনীতির একটি উদাহারণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী ২০০১ পরবর্তী বিএনপি সরকারের একটি পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেন।
তিনি সে সময় নেদারল্যান্ডের একটি কোম্পানীর কাছ থেকে অর্ধেক দামে ১০ হাজার কম্পিউটার কেনার একটি সরকারী উদ্যোগের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘১০ হাজার স্কুলকে কম্পিউটার প্রদানের একটি তালিকা করা হয়েছিল। কিন্তু,নেদারল্যান্ডের জাতীয় ফ’ল টিউলিপ’র নামে উক্ত কম্পিউটার কোম্পানীটির নাম হওয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বিএনপি ওয়ালারা (নেতৃবৃন্দ) খালেদা জিয়াকে বোঝালো শেখ রেহানার মেয়ের নামে যেহেতু কোম্পানী ( ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকী) তাই ওদের কম্পিউটার নেওয়া যাবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘ পরে সেই কম্পিউটারতো দেশে এলোই না বরং ঐ টিউলিপ কোম্পানীর রুজু করা মামলায় বাংলাদেশকে ৩২ কোটি টাকা অতিরিক্ত জরিমানা গুনতে হলো। নামের প্রতি প্রতিহিংসা দেখাতে গিয়ে খালেদা জিয়া সরকার দেশের ৩২ কোটি টাকা গচ্চা দিল। আর আমরা যে টাকা জমা দিয়েছিলাম তাও গেল, সমস্তটাই লোকসান।’
তিনি বলেন,সে সময় সরকারের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ এবং স্কুল পর্যায়ে কম্পিউটার সরবরাহে তাঁর সরকারের উদ্যোগটাও থেমে গিয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন,‘আমি এ সম্পর্কে জানতাম (বিএনপি’র এক মন্ত্রীর মনোপলী ব্যবসা) তাই ক্ষমতায় এসেই আমি এই মোবাইল ফোনকে উন্মুক্ত করে দিলাম বেসরকারী খাতে। যাতে প্রত্যেকের হাতে এটি পৌঁছে যায়।’
আওয়ামী লীগের ২০০৮ এর নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন,সত্যিই আজকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক করেছি,সমগ্র দেশে ২৮টি আইটি পার্ক হচ্ছে, পাশাপাশি সমগ্র দেশে আমরা কম্পিউটার প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি । সারাদেশে ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করে কম্পিউটারকে জনগণের নাগালের মধ্যে নিয়ে গেছি।’
কম্পিউটার প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই যুগে ডাটা প্রসেসিং এবং সংরক্ষনের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর জন্যই বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে অত্যাধুনিক ফোর টায়ার ডাটা সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে আরেকটি ধাপে আমরা উপনীত হলাম।’
তিনি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আমি আনন্দিত আজকের এইডাটা সেন্টারটি তৈরী হয়ে যাওয়ায়। যেটি আমাদের দেশের জন্য যথেষ্ট সুযোগ করে দেবে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ আরো সহজ হবে।
কাপ্তাই হ্রদের সামগ্রিক ভৌত রাসায়নিক পরিবর্তন, জীব বৈচিত্র ও মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণ সমূহ নিরুপন ও বিশ্লেষণ এবং কাপ্তাই হ্রদে মৎস উৎপাদনে লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য ‘সিভাসু’ নামের ভ্রাম্যমান গবেষণা তৈরীটি আজ কাপ্তাই লেকে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এই গবেষণাগারের মাধ্যমে হ্রদের উপরিভাগ,তীর সংলগ্ন পরিবেশ ও তলদেশের উপাদানগত পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ এবং বিলুপ্ত প্রায় মাছের প্রজাতি পুণরুদ্ধার, ও অভ্যয়ারণ্য সৃষ্টির প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,কাপ্তাই হ্রদে একটি ভাসমান গবেষণাগার হিসেবে আমরা এই গবেষণা তরীর কাজ আজ উদ্বোধন করলাম।
তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আমাদের বৈজ্ঞানিক ও মৎস গবেষকগণ গবেষণা করে মৎস উৎদপান বৃদ্ধি করতে পারবেন। ফলে আমাদের মৎসজীবী জনগণের জীবন-মানের উন্নয়নের পাশাপাশি জনগণের আমিষের চাহিদাও পূরণ সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে মৎস সম্পদ বৃদ্ধির পাশাপাশি আমরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আকারে মৎস প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পও গড়ে তুলতে পারবো। এতে যেমন কর্মসংস্থান হবে তেমনি দেশের রপ্তানি পণ্যেও সম্ভার বৃদ্ধি পাবে।
চট্টগ্রাম ভেটেরনারী ও এ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যম্পাস’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় (২০১৬-২০২০) ক্রয়কৃত এই ভাসমান তরীর মূল্য ৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আর মোট প্রকল্প ব্যয় ১৭৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। ্এর দৈর্ঘ্য ১৬ মিটার, প্রস্থ ৮ মিটার এবং গভীরতা এক দশমিক ৫ মিটার। এখানে লিমনোলজি,ডিজিজ এবং ফিশিং টেকনোলজির তিনটি গবেষণাগার থাকবে। ৬৮ হাজার ৮শ’হেক্টরের কাপ্তাই লেকে বর্তমানে মৎস উৎপাদনের পরিমান বছরে ১০ হাজার ১৫২ মে.ট.।
প্রকল্পের সুবিধাভোগী হবে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মৎস গবেষণায় সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীগণ এবং কাপ্তাই হ্রদ এলাকার প্রায় ১৮ হাজার জেলে পরিবার।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা ৫টি নতুন সমুদ্রগামী জাহাজ হচ্ছে-‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’, ‘এমভি বাংলার অর্জন’, ‘এমটি বাংলার অগ্রযাত্রা’, ‘এমটি বাংলার অগ্রদূত’ এবং ‘এমটি বাংলার অগ্রগতি।’
বাংলাদেশ এবং চীন সরকারের মধ্যে এক হাজার ৫শ’ ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬টি জাহাজ সংগ্রহের জন্য ১৪ অক্টোবর ২০১৬ সালে সম্পাদিত চুক্তির প্রেক্ষিতে ‘এমভি বাংলার জয়যাত্রা’ নামের জাহাজটি প্রধানমন্ত্রী গত ১ নভেম্বর উদ্বোধন করেন। আজ আরো বাকী ৫টি জাহাজ উদ্বোধন হলো। আর এর মাধ্যমে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন’র (বিএসসি) সামুদ্রিক পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা ২ লাখ ৩৪ হাজার মে.ট. বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ পদ্মা, মেঘনা, মেঘনা যমুনা বিধৌত বিধায় আমাদের নৌপথ অত্যন্ত গরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘এই নদী এবং নৌপথকে যদি আমরা যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারি তাহলে আমাদের শিল্পায়ন থেকে শুরু করে যোগাযোগ,সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যেতে পারবে।’
তবে, অতীতের সরকারগুলো এ বিষয়টি গুরুত্ব না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অথচ জাতির পিতা তাঁর সাড়ে ৩ বছরের শাসনকালে যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশ গড়ে তোলার সময়ই বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন এবং এরজন্য অনেকগুলো জাহাজও সংগ্রহ করে দিয়ে যান।’
জাতির পিতার ১৯৭৪ সালে করে যাওয়া সমুদ্রসীমা আইনের আলোকেই মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আদালতে নিষ্পত্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্র সীমা অর্জিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আর এর মাধ্যমে আমাদের সুনীল অর্থনীতির দুয়ার অবারিত হয়েছে।’
চট্টগ্রাম ড্রাইডক তাঁর সরকারের আমলে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ায় এটি বর্তমানে লাভজনক প্রতিষ্টানে রুপান্তরিত হয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা বরগুণায় একটি শিপ ইয়ার্ড প্রতিষ্ঠাও সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে। যেখানে বড় বড় সমুদ্রগামী জাহাজ তৈরী হবে।’
শিপিং কর্পোরেশন যেন আরো নতুনভাবে শক্তিশালী হয় সেটাও সরকারের লক্ষ্য বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।