৩১জুলাই বাঘ রক্ষায় সুন্দরবন পূর্ব বন বনবিভাগের বর্ণাঢ্য আয়োজন

0
459

সৈয়দ বাদশা হোসেন:বাগেরহাট প্রতিনিধি:
বাঘ রয়েছে বিশ্বের এমন ১৩টি দেশ ভারত, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম ও রাশিয়ার আয়োজনে সোমবার বিশ^ বাঘ দিবস পালন করছে। তবে নির্দিষ্ট দিনের পরিবর্তে আগামী ৩১ জুলাই এই দিনটি উদযাপ করবে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ। বিষয়টি নিঃশ্চিত করেছে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুল হাসান। দিবসটি উদযাপন হবে জেলার সুন্দরবন সংলগ্ন মোংলাতে। দিনটি উদযাপনের জন্য নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ। বাঘ দিবসে বন বিভাগের বর্ণাঢ্য উদযাপন আয়োজনে থাকছে র‌্যালী, উঠান বৈঠক, মাইকিং, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা সহ,নানান কার্মসূচী।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৮০ থেকে ২০১৮পর্যন্ত্য এই ৩৮ বছরে সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন এলাকায় শিকারিদের হানা, গ্রামবাসীর পিটুনি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবনে ৮৭টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। ২০০৪ সালে জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনে ৪৪০টি বাঘ ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের সর্বশেষ জরিপে তা দাড়িয়েছে মাত্র ১১৪টি। বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন ধরে ক্রমান্বয়ে সুন্দরবনের বাঘ কমতে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সচেতন মহল। সুন্দরবন ও বনের বাঘ রক্ষায় এখনই উদ্যোগ না নিলে একসময় সুন্দরবনের বাঘ বিলুপ্ত হবে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, বাগেরহাট জেলা শাখার সভাপতি নূর আলম বলেন, ২০০৪ সালে সুন্দরবনে ৪৪০টি বাঘ ছিল। সর্বশেষ জরিপে সুন্দরবনে মাত্র ১১৪টি বাঘ আছে। এ পরিসংখ্যানে বোঝা যায় সুন্দরবনে বাঘ বিলুপ্ত হচ্ছে। চোরা শিকারীদের দৌরাত্ব বৃদ্ধি,খাদ্যের অভাব, অনুকূল পরিবেশের অভাবে,জলদস্যু-বনদস্যু দের নিরাপত্তায় তাদের হতে শিকার, সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকার ও জলবায়ু প্রভাবের কারণে সুন্দরবনের বাঘ কমছে। এখনই উদ্যোগ না নিলে বাঘের বিলুপ্তি ঠেকানো কষ্টকর হবে। সুন্দরবন একাডেমির পরিচালক সুভাস বিশ্বাস বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সুন্দরবন। এ বন আমাদের নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে রক্ষা করে। এলাকার মানুষের জীবন জীবিকার বড় উৎস্যও সুন্দরবন। আর রয়েল বেঙ্গল টাইগার সুন্দরবনকে রক্ষা করে। তাই সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হলে আমাদের বাঘকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য বনের পরিবেশ বাঘ বসবাসের উপযোগী করার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
এছাড়া ২০১৮ সাল থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত ১০ বছর মেয়াদী “টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান” নামের একটি প্রকল্প নিয়েছে বন বিভাগ। এ প্রকল্পের আওতায় বাঘের উপযুক্ত আবাসস্থল ও খাবারের সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে কাজ করা হবে। বাঘের বংশ বিস্তারের ক্ষেত্রে অভয়াশ্রম এলাকাগুলোতে সকল প্রকার যাতায়াত নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। বাঘের ্রপ্রনন বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিষয়ে গবেষণাকেও অন্তভুক্ত করা হয়েছে এ প্রকল্পে।
এছাড়া ২০১০ সাল থেকে বন্যপ্রাণীর প্রতি মানুষের সহানুভূতি বৃদ্ধি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে স্থানীয়দের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বন্য প্রাণী দ্বারা আক্রন্ত মানুষদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে আসছে বন বিভাগ। ২০১২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাঘের আক্রমণে নিহত দুই জনকে দুই লক্ষ টাকা এবং আহত ৫ জনকে ৫০ হাজার করে মোট দুই লক্ষ ৫০ হাজার টাকা সহযোগিতা করেছে বন বিভাগ। বন বিভাগের পাশাপাশি সুন্দরবনের বাঘ রক্ষায় ওয়াইল্ড টিম নামের একটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। বন সংলগ্ন স্থানীয় জনগনকে সচেতন করার মাধ্যমে বাঘ রক্ষায় ভূমিকা রাখছেন তারা।
ওয়াইল্ড টিমের টিম লিডার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ওয়াইল্ড টিম স্থানীয় মানুষদের নিয়ে সচেতনতামূলক কাজ করছে। স্থানীয় পর্যায়ে আমাদের তিনটি মনিটরিং টিম রয়েছে। যারা সুন্দরবনের বাঘ রক্ষায় মানুষদের সচেতন করে থাকে। যার ফলে বর্তমানে সুন্দরবন থেকে কোনো প্রাণি লোকালয়ে আসলে সেগুলোকে পিটিয়ে হত্যা না করে, টাইগার টিমের সহযোগিতায় পুনরায় বনে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, বাঘ রক্ষার্থে আমরা সুন্দরবনে বাঘের আবাসস্থল বৃদ্ধির চেস্টা করছি। স্মার্ট পেট্রোলিং ও টহল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। অভয়াশ্রম গুলোতে কোনো প্রকার যাতায়েত নিষিদ্ধ করার কার্য্যকম চলছে। ২০১৮ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত্য দশ বছর মেয়াদী “টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান” গ্রহণ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে বাঘের বংশ বৃদ্ধি ও বাঘের আচরণ সম্পর্কে গবেষণা করা হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
বিশ^ বাঘ দিবসে বাঘ রক্ষার আলোচনা সভায় বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ মন্ত্রী হাবিবুন নাহার, খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক আমীর হোসেন চৌধুরী, সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুল হাসান উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্ত।