১১০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ নিউ বসুন্ধরা রিয়েলস্টেট’র এমডি মান্নান তালুকদারসহ দু’জনের বিরুদ্ধে – দুদক

0
625

বাগেরহাট প্রতিনিধি:
বাগেরহাটের নিউ বসুন্ধরা রিয়েলস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল মান্নান তালুকদারসহ দুইজনের বিরুদ্ধে ১১০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগের মামলা করেছে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহষ্পতিবার সকালে দুদকের খুলনা জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক (এডি) মো. শাওন মিয়া বাদী হয়ে বাগেরহাট সদর মডেল থানায় ওই মামলাটি দায়ের করেন।
অন্য আরেক আসামী হলেন নিউ বসুন্ধরা রিয়েলস্টেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান। তিনি বাগেরহাট শহরের মিঠাপুকুরপাড় জামে মসজিদের ঈমাম। নিউ বসুন্ধরা রিয়েলস্টেট লিমিটেডের প্রধান কার্যালয় শহরের মিঠাপুকুরপাড়ে অবস্থিত।
অন্যদিকে, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিকেশনও (পিবিআই) বাগেরহাটের নিউ বসুন্ধরা রিয়েলস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মান্নান তালুকদারের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে।
দুদকের খুলনা জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপ পরিচালক (ডিডি) নাজমুল হাসান মুঠোফোনে প্রতিবেদককে বলেন, ২০১০ সালে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারি আব্দুল মান্নান তালুকদার নামে এক ব্যক্তি সেচ্ছায় অবসর নিয়ে নিউ বসুন্ধরা রিয়েলস্টেট লিমিটেড নামে একটি জমি কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ওই প্রতিষ্ঠানে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং তার ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান করা হয় বাগেরহাট শহরের মিঠাপুকুরপাড় জামে মসজিদের ঈমাম আনিসুর রহমান নামে আরেক ব্যক্তিকে। এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার পর তিনি গ্রাহকদের প্রতিলাখে মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা করে দেয়ার প্রলোভনে বাগেরহাট, খুলনাসহ বেশ কয়েকটি জেলার অন্তত ২০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে অন্তত ২৯৯ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেন। যা ব্যাংকিং আইনের পরিপন্থি। গত কয়েক বছরে বাগেরহাটের ১৬টি ব্যাংকের ৩০টি (একাউন্ট) হিসাব থেকে ১১০ কোটি ৩১ লাখ ৯১৩৫ টাকা ৫৮ পয়সা জমা করেন। গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়া এই বিপুল পরিমান অর্থ তিনি ব্যাংক থেকে তুলে পাচার করেছেন। এই টাকা কোথায় পাচার করা হয়েছে তা জানতে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে। দুদকের প্রাথমিক তদন্তে এসব অভিযোগ উঠে এসেছে। বাগেরহাটের নিউ বসুন্ধরা রিয়েলস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মান্নান তালুকদার ও তার চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে দুদক।
মামলার এজাহারের নথির বরাত দিয়ে সহকারি পরিচালক (এডি) মো. শাওন মিয়া আরো বলেন, ২০১৮ সালের শেষ দিকে বাগেরহাটের নিউ বসুন্ধরা রিয়েলস্টেট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে দুদক অনুসন্ধানে নামে। প্রায় তিন মাস আগে অনুসন্ধান নেমে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে নানা অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা মেলে। গত ফেব্রুয়ারিতে কমিশনের কাছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্ত ও মামলা করার অনুমতি চাওয়া হয়। কমিশন অনুমতি দেয়ায় মামলাটি করা হয়েছে। ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪ (২), ৪ (৩) ও ৪ (৪) ধারায় বাগেরহাট সদর মডেল থানায় নিউ বসুন্ধরা রিয়েলস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মান্নান তালুকদার ও তার চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে ১১০ কোটি ৩১লাখ ৯হাজার ১৩৫টাকা ৫৮পয়সা পাচারের অভিযোগের মামলা করা হয়েছে।
বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহাতাব উদ্দীন বলেন, দুদকের মামলাটি এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে।
বাগেরহাট সদর উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, আমি চার বছর আগে চাকরি থেকে অবসরে যাই। অবসরে যাওয়ার পর আমার চাকরির জীবনে অর্জিত ২০ লাখ টাকা নিউ বসুন্ধরা লিমিটেডে জমা রাখি। নিউ বসুন্ধরা আমাকে প্রতিলাখে মাসে দুই হাজার টাকা করে লভ্যাংশ দিয়ে আসছিল। গত প্রায় দশ মাস ধরে ওই প্রতিষ্ঠানটি আমাকে কোন লভ্যাংশ দিচ্ছেনা। আমি এখন লভ্যাংশ ছেড়ে আমার মূলধন ফেরৎ চেয়ে পাচ্ছি না।
তিনি আরও বলেন, নিউ বসুন্ধরা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মান্নান তালুকদার খুবই চতুর প্রকৃতির মানুষ। তিনি বাগেরহাটের পয়সাওলা ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহের কৌশল হিসেবে বিভিন্ন মসজিদের ঈমামদের কাজে লাগিয়ে শতশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার এই ফাঁদে পড়ে হাজার হাজার গ্রাহক আজ সর্বশান্ত। আমার মত যারা তার এই ফাঁদে পা দিয়েছেন তারা আদৌ তাদের মূলধন ফেরৎ পাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এবিষয়ে কথা বলতে নিউ বসুন্ধরা রিয়েলস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল মান্নান তালুকদারের মুঠোফোনে (০১৭১২১০০৬৪৩) যোগাযোগের চেষ্টা করে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।