হাইকোর্টের রুল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট নিয়োগ জরুরি

0
303

স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর (পরামর্শক) ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট (মনোবিদ) কেন নিয়োগ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান, শিক্ষা সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত ২৪ নভেম্বর দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর (পরামর্শক) ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট (মনোবিদ) নিয়োগের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। আইনজীবী ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া এ রিট দায়ের করেন। রিট আবেদনে বলা হয়, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট নিয়োগের নিষ্ক্রিয়তা বাংলাদেশ সংবিধানের ১৭ (ক ও খ), ১৮ (১ ও ২) ও ৩২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় এ রিট দায়ের করা হয়েছে। এতে বলা হয়, দেশের প্রতিটি নাগরিকের উপযুক্ত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এগুলো নিশ্চিতের বিষয়ে রাষ্ট্র কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে শিশু-কিশোরদের বিপথগামীতা রোধে সরকারের যথার্থ উদ্যোগ দেখা যায় না।
রিটে আরও উল্লেখ করা হয়, সংবিধানের ১৫ (ক) অনুচ্ছেদ অনুসারে একটি পরিকল্পিত অর্থনৈতিক ও কর্মক্ষম জনশক্তি গড়ে তোলা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব। সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুসারে, প্রত্যেক নাগরিকের সুস্বাস্থ্য ও মানসম্পন্নভাবে বেঁচে থাকার অধিকার রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে। অথচ সে সুবিধা থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। এর ফলে বিভিন্ন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা বিগত কয়েক বছর ধরে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সমাজে মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর (পরামর্শক) ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।
আমরা শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা দেখালেও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা করি না। অথচ শরীরের মতো মনেরও অসুখ হয় এবং তা যথাযথ শুশ্রুষার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়। বিশেষ করে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের জন্য বিশে^র সচেতন দেশগুলোর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলকভাবে মনোবিদ বা মনোচিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশে দুএকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া অধিকাংশ স্কুল-কলেজ সংশ্লিষ্টদের এমনকি অভিভাবকদেরও এ সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই।
দেশে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপ্তির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকাসক্তি, যৌন হয়রানি ও আত্মহত্যা চেষ্টা, হত্যাসহ নানা রকম নৈতিক অবক্ষয়, বেপরোয়া জীবনযাপন, ব্যক্তিত্বের সংকট, পড়াশোনায় অমনযোগিতা, অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খল জীবনযাপনের ঘটনা ঘটছে। সাম্প্রতিককালে এ বিষয়গুলো আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। এসব বিষয় ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমেও উঠে এসেছে যার কারণে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি অনিশ্চিত পরিণতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এমতাবস্থায় শিশু-কিশোরদের সচেতন করার জন্য এবং বিশুদ্ধ মনন গঠনের জন্য মনোবিদের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিং ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় উচ্চ আদালতের এ বিষয়ে রিট করা সময়োপযোগী পদক্ষেপ। আমরা আশা করি সরকার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ও কাউন্সিরল নিয়োগে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।