সড়ক পরিবহন আইনের প্রতিবাদে বিভিন্ন জেলায় বাস বন্ধ

0
692

খুলনাটাইমস: বিভিন্ন অপরাধে শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করার বিরোধিতায় দেশের বিভিন্ন জেলায় গতকাল সোমবার বাস চলাচল বন্ধ রাখেন পরিবহন শ্রমিকরা। পাশাপাশি নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রত্যাহারের দাবিতে রাজশাহী থেকেও বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। গতকাল সোমবার সকাল থেকে তাদের আকস্মিক এই কর্মসূচির কারণে ভোগান্তিতে পড়েন দূরপাল্লার যাত্রীরা। অনেকেই বাস স্ট্যান্ডে এসে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে বাস না পেয়ে ফিরে যান। খুলনা বিভাগীয় শ্রমিক ফেডারশনের যুগ্ম সম্পাদক মোর্তজা হোসেন বলেন, যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গার পরিবহন শ্রমিকরা সকাল থেকে ‘স্বেচ্ছায়’ এই কর্মবিরতি পালন করছেন। শ্রমিকরা কাউকে ইচ্ছে করে হত্যা করে না। অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনার জন্য নতুন সড়ক আইনে তাদেরকে ঘাতক বলা হচ্ছে। তাদের জন্য এমন আইন করা হয়েছে যা সন্ত্রাসীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। নতুন আইনের অনেক ধারার ব্যাপারে শ্রমিকদের আপত্তি রয়েছে। সরকার সমাধানের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। গত বছর ঢাকায় বাসচাপায় দুই ছাত্রছাত্রীর মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনের মুখে নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংসদে পাস হয়। তবে তা এ বছর ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর করার কথা বলা হয়। বেপরোয়া মোটরযানের কবলে পড়ে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদ-, সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে এ আইনে, যা আগের তুলনায় বেশি। এ কারণে আইনটি প্রণয়নের পর থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ বলেন, ১৪ নভেম্বর যশোরে এক সমাবেশ থেকে ২০১৮ সালের সড়ক আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছিলেন তারা। এরপর গত রোববার থেকে যশোরের ১৮ রুটের শ্রমিকরা কর্মবিরতি শুরু করেন। পরে গতকাল সোমবার সকালে অন্যান্য জেলাতেও কর্মবিরতি শুরু হয়। যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ছাত্রী আফসোনা আফরিন পাঁপড়ি কলেজে যাওয়ার জন্য গতকাল সোমবার সকালে বেনাপোল বাসস্ট্যান্ডে এসে বাস পাননি। আমাদের বেনাপোল প্রতিনিধিকে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ, তারপরেও জরুরি কাজে কলেজে যেতে হবে। কিন্তু এখন কো বাসই বন্ধ, যেতে পারছি না। যশোর-বেনাপোল ও যশোর-সাতক্ষীরার অভ্যন্তরীণ রুটে কোনো যাত্রীবাহী বাস চলাচল না করলেও ঢাকা-কলকাতা ও বেনাপোল থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও দেশের অন্যান্য স্থানে দূরপাল্লার বাস চলাচল করছে বলে ঈগল পরিবহনের বেনাপোল অফিসের ব্যবস্থাপক এম আর রহমান জানান। এছাড়া প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, ইজিবাইক, মাহেন্দ্র, নসিমন-করিমন জাতীয় ছোট যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে ঝিনাইদহে ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার চালকরাও কর্মবিরতি পালন করেন। গতকাল সোমবার সকাল থেকে ঝিনাইদহ-যশোর, ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ -মাগুরা, ঝিনাইদহ- চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ হাটফাজিলপুর ও ঝিনাইদহ-হরিণাকু-ু রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বাস না পেয়ে অনেকে ইজিবাইক ও মহাসড়কে চলাচলে নিষিদ্ধ তিন চাকার যানবাহনে চলাচল করেছেন। স্থানীয় সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও ঢাকাসহ দূরপাল্লার বাস ও ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহন চলাচল করতে দেখা গেছে। গাড়াগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে কামাল হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, জরুরি কাজে তার খুলনা যাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু বাস বন্ধ থাকায় বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন তিনি। ঝিনাইদহ বাস, মিনিবাস ও মাইক্রো শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান খোকন বলেন, যান চলাচল ঠেকাতে সড়কে কোনো ব্যারিকেড দেননি তারা। শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় কাজ বন্ধ রেখেছে। ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মো. হামানুজ্জামান বলেন, শ্রমিকদের অঘোষিত কর্ম বিরতিতে লোকাল রুটগুলোতে বাস, মিনিবাস চলছে না। তবে দূরপাল্লার রুটে যানবাহন চলাচল করছে। গতকাল সোমবার সকাল থেকেই চুয়াডাঙ্গা জেলার অভ্যন্তরীণ রুটের বাস চলাচল বন্ধ ছিল। সকাল ১০টার পর ঢাকা-চুয়াডাঙ্গা রুটের বাসও বন্ধ হয়ে যায়। খুলনা বিভাগীয় শ্রমিক ফেডারশনের যুগ্ম সম্পাদক মোর্তজা হোসেন বলেন, আইন সংশোধনের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মবিরতি চলবে।
রাজশাহী: গতকাল সোমবার সকাল থেকে রাজশাহীর সঙ্গে বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় শ্রমিকরা। ফলে রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে সকালে ঢাকাগামী বেশ কয়েকটি বাস রাজশাহী থেকে ছেড়ে যায়। সকালে রাজশাহীর নগরীর শিরোইল ও নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল এবং ভদ্রা মোড়ে অবস্থান নিয়ে মোটর শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। এ সময় দু-একটি বাস ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তা আটকে দিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এ সময় তারা নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রত্যাহারের দাবি জানান। রাজশাহী ছাড়াও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলাতেও শ্রমিকরা বাস চালাচ্ছেন না। সেসব জেলার মত রাজশাহীতেও বাস বন্ধের জন্য ইউনিয়ন ‘ডাক দেয়নি।’ তবে শ্রমিকদের এই কর্মবিরতি সমর্থন করেন না বলে জানিয়েছেন রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম। এই শ্রমিক নেতা বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি এটাকে সমর্থন করি না। প্রতিবাদ জানানোর আরও ভাষা আছে। এভাবে বাস বন্ধ করে যাত্রীদের দুর্ভোগে ফেলা আমি সমর্থন করি না। গত বছর ঢাকায় বাসচাপায় দুই ছাত্রছাত্রীর মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনের মুখে নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংসদে পাস হয়। তবে তা এ বছর ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর করার কথা বলা হয়। পরে সময় পিছিয়ে গত রোববার থেকে তা কার্যকর করা হয়েছে। বেপরোয়া মোটরযানের কবলে পড়ে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদ-, সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে এ আইনে, যা আগের তুলনায় বেশি। এ কারণে আইনটি প্রণয়নের পর থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। স্থানীয় পরিবহন নেতারা জানান, সকালে রাজশাহীর মালিকদের বাস দু-একটি করে নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে ছেড়ে যায়। তবে বাইরের জেলার মালিকদের বাসগুলো রাজশাহী আসার পর পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। রাজশাহী-নওগাঁ রুটে বাস চলছে না। এ ছাড়া রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ের রুটেও শহর থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।