সৌদি বিনিয়োগে সম্ভাবনা

0
720

বিদ্যুত, জ্বালানি ও জনশক্তিসহ কয়েকটি খাতে বিনিয়োগের জন্য সৌদি আরবের সঙ্গে দুটি চুক্তি ও চারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। অবকাঠামোসহ কয়েকটি উৎপাদনশীল খাতে সৌদি আরবের কাছে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে সৌদি আরব। মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী অর্থনীতির এই দেশটি বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এসব চুক্তি ও সমঝোতার মাধ্যমে দেশে বড় ধরনের সৌদি বিনিয়োগ আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। মধ্য প্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোর অন্যতম সৌদি আরব। সারা দুনিয়ায় তাদের শত শত বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গেও দেশটির সুদীর্ঘ ও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। রয়েছে ঐতিহ্যগত ও সাংস্কৃতিক ঘনিষ্ঠতা। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে এ পর্যন্ত সৌদি বিনিয়োগ প্রায় হয়নি বললেই চলে। আশা করা যায় এখন থেকে সৌদি বিনিয়োগ আসবে বাংলাদেশে।
দীর্ঘ সম্পর্ক সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ দেড় শ’ কোটি ডলারেরও কম। তার মধ্যে আমদানির পরিমাণই বেশি। উভয় দেশ সচেষ্ট হলে এই পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় আসে সৌদি আরব থেকেই। প্রায় ২০ লাখ বাংলাদেশী বর্তমানে সৌদি আরবে কর্মরত রয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই অদক্ষ শ্রমিক। সৌদি আরবের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনবল পাঠানো গেলে বাংলাদেশের বহু যুবকের সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। তখন প্রবাসী আয়ের পরিমাণও অনেক বেড়ে যাবে।
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবকাঠামো খাতে এত বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন, যেটি কোন একক অর্থনৈতিক সংস্থার পক্ষে মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্বব্যাংকের আইডা থেকে বছরে ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো ঋণ দেয়া হয়, যা ১৮০টি দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতেই বাংলাদেশের শুধু অবকাঠামো খাতে (বিদ্যুত, পরিবহন, টেলিকমিউনিকেশন, স্যানিটেশন ইত্যাদি) বিনিয়োগ প্রয়োজন বছরে ৭ থেকে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য খাত বাদ দিয়েই এই হিসাব। এক্ষেত্রে শুধু বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও আইডিবিই নয়, এর বাইরে আরও একটি সম্ভাবনাময় অর্থদাতা এআইআইবি বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। মার্কিন ব্যবসায়ীসহ ইউরোপের ব্যবসায়ী মহল আগামীতে সমৃদ্ধির অংশীদার হতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করবে এমনটা প্রত্যাশিত। লন্ডনের জ্যেষ্ঠ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে কমনওয়েলথভুক্ত সরকারপ্রধানদের এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এশিয়ার সেরা বিনিয়োগ হাব হিসেবে উল্লেখ করে বিশ্বের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ছে। অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও টেকসই উন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকারের নেয়া বিভিন্ন নীতি ও কর্মসূচীর সুফল আসতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ হজযাত্রী মক্কা-মদিনা ভ্রমণ করে অবদান রাখছে সৌদি আরবের অর্থনীতিতে। বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরবের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ দুই দেশকেই দেবে নতুন মাত্রা।