সোনালি ধানে ভরেছে কৃষকের মন

0
640

আজিজুর রহমান, দাকোপ থেকে ফিরে :
বাতাসে এখন শীতের গন্ধ। মাঠের পর মাঠ জোড়া সবুজ ধানের শীষগুলোতেও এখন সোনা রঙের হাসি। শেষ অগ্রহায়ণের সোনালি রোদে সেই হাসি আরও ঝলমল করে ওঠছে। অনেক মাঠেই কাস্তে নিয়ে ধান কাটার উৎসবে নেমে পড়েছেন কৃষক। ফুরফুরে মনে ফসল উঠানে তুলছেন তাঁরা। আবহাওয়া ও পরিবেশ প্রতিকূলে থাকার সর্ত্বেও এ বছর যে ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে।

খুলনার দাকোপ উপজেলার কালিনগর, সুতারখালী, বানিশান্তা ও রামনগর গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, কুয়াশা মাখা ভোর থেকে দলবেধে আইল ধরে কৃষক ছুটছেন জমিতে। কয়েকটি ফসলের মাঠে দলবেধেই কাস্তে হাতে নেমে পড়ছেন তাঁরা। ধান কেটে আঁটি বেঁধে রাখছনে খেতের মাঝেই। বিকেল থেকেই সেই আঁটি বোঝা বেধেঁ মাথায় করে বাড়ি নেওয়া শুরু। মাঠে নারী কৃষকদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।

এ সময় কৃষকরা বলেন, ‘এবার ধান ভালো হুয়েছে। যেদিক তাকাবা দ্যাখবা ধান আর ধান। এখন সবাই কেম্মায় ধান ঘরে তোলবে, তা নে ব্যস্ত।’

সুতারখালি গ্রামের কৃষক ইয়াসিন মোল্যা বলেন, ৬বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছি। বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ৩ হাজার টাকা। তিনি আরও বলেন, এ বছর আষাঢ় মাসে নির্দিষ্ট সময় বর্ষা না হওয়ায় বীজতলা প্রস্তুত করতে অনেক দেরি হয়েছিল। নাবীতে আমন চাষ করলেও ফসলের মাঠে দেখেছি ভালো হয়েছে। প্রতি বিঘায় ১৭ থেকে ১৮ মণ করে ধান পাবো।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ১৮ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে এ বছর আমন চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে বিআর-২৩, ১০, ১১, ব্রি-৩০, ৪৯, ৫১, ৫২, ৭২, ৭৩, ৭৬, ৭৭ সহ স্থানীয় কিছু উচ্চমূল্য জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। ২৮টি ব্লকের মধ্যে ৩৩ নম্বর পোল্ডারে কিছু কিছু ব্লকে ধান কাটা মাত্র শুরু হয়েছে।

উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অন্তত ১৫ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর আমন ফসল অনেকটাই ভালো। বৈরী আবহাওয়ার কারণে বীজতলা প্রস্তুত করতে বেশ সমস্যা হয়েছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরেও মাঠে মাঠে ধানের ফলন ভালো। তারপর কোন সমস্যা দেখা গেলে উপজেলা কৃষি অফিসকে অবহিত করা হতো। কৃষি অফিস সঙ্গে সঙ্গে পরামর্শ দিয়ে সব সমস্যার সমাধান করে দেয়। যে জন্য উপজেলার মাঠে মাঠে কৃষিতে বিল্পব ঘটে।

রামনগর গ্রামের কৃষক তপন কুমার মণ্ডল বলেন, এবার ৪ বিঘা জমিতে ব্রি-৩০ জাতের ধান লাগিয়ে ছিলাম। ফলন ভালো হয়েছে। চলতি বছর ধানের ছড়া বের হওয়ার মুখে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানে। এতে ফসলহানির আশঙ্কাও করেছিলাম। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরেও ধানের বাম্পার ফলন দেখে খুশি আছি।

ভালো ধান হওয়ায় ভীষণ খুশি বানিশান্তা গ্রামের কৃষক লিটন বাওয়ালী। তিনি বলেন, বর্গা নিয়ে ২বিঘা জমিতে বিআর-২৩ জাতের ধান চাষ করেছি। ধানের ফলন বেশ ভালো। ধান দেখে কাটতে ভালো লাগছে। তিনি আরও জানায়, ধানের আঁটি ধরে অনুমান করছি ১০০ আঁটিতে ৫ মণের বেশি ধান পাবো।

দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান খুলনাটাইমসকে বলেন, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমন চাষ হয় এই উপজেলায়। আমন নির্ভক দাকোপে এখন নানান ফসলের শস্যভান্ডারে পরিণত হয়েছে। চলতি আমন মৌসুমে, গত বছরের তুলনায় এ বছর ফসলের লক্ষমাত্রা ছাড়ানোর জন্য আমরা নতুন নতুন জাতের ধান দিয়েছি কৃষকদের।

তিনি আরও বলেন, শ্রমিক সংকট নিরসনের জন্য প্রযুক্তির যন্ত্র কিনতে উৎসাহিত করছি। কয়েক জন কৃষক এ মেশিন ক্রয় করেছে। তাছাড়া এবার বীজতলা প্রস্তুত থেকে শুরু করে ফসলের মাঠে ধানের ছড়া বের হওয়া পর্যন্ত আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকলেও ফলন ভাল হয়েছে।