সুন্দরবনে তিন মাস পর্যটন নিষিদ্ধ হচ্ছে

0
362

ফকির শহিদুল ইসলাম:
তিন মাস সুন্দরবনে সব ধরনের পর্যটন নিষিদ্ধ। বন্যপ্রাণীর প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে পর্যটন নিষিদ্ধ করার কাজ শুরু করেছে বনবিভাগ। এ ব্যাপারে বনবিভাগের সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে নির্দেশনা আনতে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তারা। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তাদের প্রস্তাব অনুমোদিত হলে আগামী বছর ২০১৯ সাল থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হতে পারে। তবে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মো. আমির হোসাইন চৌধুরী জানিয়েছেন, কোনও নির্দিষ্ট সময় পর্যটন নিষিদ্ধের বিষয়ে আগে বিভিন্ন পর্যায়ে মতবিনিময় করা হবে। পরে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। তবে সেভ দা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লায়ন ড.ফরিদুল ইসলাম জানান, সুন্দরবন সুরক্ষার জন্য সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে তাতে বাধা নেই কিন্তু মাথা ব্যাথা হলে মাথা কেটে ফেলতে হবে তা হতে পারেনা।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা ও মায়া হরিণসহ বনের প্রায় ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর প্রজনন নির্বিঘœ করতে নির্দিষ্ট এই প্রজনন মৌসুমে সব ধরণের পর্যটন নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড বা বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত এই বনের ছয় হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাংলাদেশ অংশে রয়েছে বাঘ, চিত্রা ও মায়া হরিণ, বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতীসহ বিভিন্ন প্রজাতির ডলফিন, লোনা পানির কুমির, বন্য শুকর ও উদবিড়ালসহ ৩৭৫ প্রজাতির প্রাণী। জরিপে দেখা গেছে, বেঙ্গল টাইগার ও হরিণসহ বন্যপ্রাণীর আধিক্য রয়েছে এমন এলাকাগুলোতেই পর্যটকরা ভ্রমণে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। জলবায়ু পরিবর্তনসহ মানুষ সৃষ্ট নানা কারণে সুন্দরবনের প্রাণীকূল সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যেই সুন্দরবন থেকে বিলুপ্ত হয়েছে দুই প্রজাতির হরিণ, দুই প্রজাতির গন্ডার, এক প্রজাতির মিঠা পানির কুমির ও এক প্রজাতির বন্য মহিষ।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) আমির হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এখনই এ ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। সুন্দরবনের ওপর যারা কাজ করেন এরকম বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবিদ, বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে মতবিনিময় করবো। আলোচনার পর মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে। পরে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
সুন্দরবন একাডেমির মংলাস্থ পরিচালক সুভাষ বিশ্বাস জানান, জুন থেকে আগস্ট এই তিন মাস বর্ষা মৌসুম।এসময় সুন্দরবনের বাঘ ও হরিণসহ বহু সংখ্যক বন্যপ্রাণীর প্রজনন মৌসুম।তাই এই সময় সব ধরনের পর্যটন নিষিদ্ধ করা হলে একদিকে ভাল হবে তবে পর্যাটন ব্যবসার দিকেও নজর রাখতে হবে।
সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লায়ন ড.ফরিদুল ইসলাম জানান, সুন্দরবন সুরক্ষার জন্য সরকার ব্যবস্থাগ্রহণ করবে এটা ভাল উদ্যোগ। যে সব এলাকা অভয়ারণ্য হিসেবে আছে, সেই সব এলাকায় এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। তাই বলে সারা সুন্দরবন এলাকায় এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা ঠিক হবেনা। মাথায় ব্যাথা হলে মাথা কেটে ফেলতে হবে এটা সমাধান হতে পারেনা। সব এলাকা পর্যাটন হিসেবে রয়েছে সেই এলাকা এই নিষিদ্ধের বাইরে রাখতে হবে। বাকি সব এলাকা সারা বছরই সুরক্ষার আওতায় আনা উচিৎ। বন্ধ করা উচিৎ বনজ ও বণ্য প্রাণী পাচার। সেই সাথে আরও বাড়ানো উচিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।