সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে বন কর্মকর্তাদের নির্যাতন ও জুলুমের শিকার মৎস্যজীবীরা

0
419

নিজস্ব প্রতিবেদক:
সুন্দরবনের নীলকমল অভয়ারণ্যে প্রতিনিয়ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ রায়সহ অন্যান্য বন কর্মকর্তাদের নির্যাতন ও জুলুমের শিকার হচ্ছেন মৎস্যজীবীরা। এদের নির্যাতনের হাত থেকে প্রতিকার চেয়ে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সুন্দরবনের মৎস্যজীবীরা। সংবাদ সম্মেলনে মৎস্যজীবীদেরে পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদর গ্রামের মোঃ বাচ্চু আলী বেগ।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, আমরা মৎসজীবিগণ সুন্দরবন এবং দুবলার চর এলাকায় পাস পারমিটের মাধ্যমে মৎস আহরণ করে থাকি। সুন্দরবনের নীলকমলে কর্মরত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ রায়, মোঃ ইকরামুল হক (বি.এম), মমিন (বি.এম), লালন (বি.এম), মঞ্জু (এফ.জি) ও ফারুক (বি.এম) এর অমানুষিক, অমানবিক নির্যাতনে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি।
তিনি বলেন, সুন্দরবনের নীলকমল অভয়ারণ্যের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ও.সি) বিগত জুন’ ২০১৯ মাসে আমাদের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে মৎস্য আহরণের জন্য নিয়ে যায় এবং দুবলা হতে পাস নিয়ে আমরা ইলিশ মাছ আহরণ শুরু করি। তিনি মাসে আড়াই লক্ষ টাকা চুক্তিতে সম্মত হয়ে আমাদের সঙ্গে রাজি হয়। আমরা নিয়মিত চুক্তির টাকা, অর্থাৎ তিন মাসে সাড়ে সাত লক্ষ টাকা পরিশোধ করি। ইতোমধ্যে, মাছ ধরা বন্ধ হওয়ায় আমরা বিগত ০৭/১০/২০১৯ তারিখে আমরা সাগর থেকে উঠে আসার জন্য প্রস্তুতি নেই। এ সময়ে তিনি স্টাফসহ আমাদের কাছে আসেন এবং মাসিক টাকা অগ্রিম দাবী করেন। আমরা অগ্রিম টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তিনি ফাঁকা ফায়ার করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন এবং প্রত্যেক জেলেকে বেদম প্রহর করেন। মার খেয়ে অনেকে আহত হয়ে পরে। যার মধ্যে হান্নান গাজী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার এখানেই শেষ নয়। নীলকমলের ঐ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও স্টাফগণ দ্রুতগতি সম্পন্ন ট্রলার যোগে সাগরে টহল করতে যান এবং মাছ ধরা ট্রলার তাড়া শুরু করেন। তিনি পাখি মারার মত গুলি করতে থাকেন। জেলেদের পাস পারমিট ট্রলার আটক করেন এবং জোর পূর্বক নীলকমল নিয়ে আসেন। সি.ও.আর করার নামে প্রতিটি ট্রলার হতে কমপক্ষে এক লক্ষ টাকা তিনি আদায় করে থাকেন। কয়েকদিন পরে তিনি বলেন যে, সি.ও.আর হয়ে গেছে, তোমরা ট্রলার নিয়ে যাও। ওসি সাহেবের কাছে সি.ও.আর এর রশিদ চাইলে তিনি বলেন, পিটিয়ে ছাল ছাড়িয়ে দেব। যা উপকার করলাম, তা কোন দিন ভুলতে পারবি না।
ঐ বন কর্মকর্তা প্রতি ট্রলার হতে ১০টি করে ৩২টি ট্রলারের জেলেদের কাছ থেকে ৩২০টি ইলিশ মাছ জোর করে নিয়ে গেছে। যে মাছ তিনি এ.সি.এফ ও ডি.এফ.ও কে দিয়েছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। ঐ ৩২০টি মাছের আনুমানিক মূল্য প্রায় তিন লক্ষ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, নীলকমলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জেলেদের নিয়ে নীলকমলে আশ্রয় দেন। বিনাপাসে অভয়ারণ্য কেন্দ্রে মাছ ধরতে অনুমতি দেন। নীলকমলের হাতিমঘানি, কলাতলা, সেচখালি ও বালির গাং এলাকায় শত শত জেলে প্রতি ঘোনে মাছ/ কাঁকড়া ধরে চুক্তির মাধ্যমে। এই জেলেদের বহদ্দারের নাম হলো শংকর (ডুমুরিয়া), আশরাফুল (গড়ইখালী), মালেক গণি (গোবরা)। ঐ বন কর্মকর্তা বহদ্দারদের মাধ্যমে যাবতীয় বাজার ঘাট, স্টাফগণ পেয়ে থাকেন এবং মাসিক তিন লক্ষ টাকা ঘুষ গ্রহণ করে থাকেন। পূর্বে এই দায়িত্ব পালন করত মুসা মেম্বার (বাড়ী কয়রা), মাজেদ (কয়রা)। বহদ্দার আশরাফুল, শ্যামা প্রসাদকে আব্বা বলে থাকেন।
এমতাবস্থায় মৎস্যজীবীরা প্রতিকার এবং সু-বিচারের আশায় অত্যাচার, নির্যাতন ও দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে ধরেন এবং এ ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
উল্লেখ্য, গত ২০১৮ সালে কালাবগি স্টেশনে কর্মরত থাকা অবস্থায় বন কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ রায় (ফরেষ্ট্রারের) বিরুদ্ধে দাকোপ থানায় চাঁদাবাজির মামলা হয়েছিল। তিনি উপরমহলের প্রভাব খাটিয়ে সেই মামলা নিস্পত্তি করেছিলেন।