সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত মাদকের আখড়া

0
998

কামরুল হোসেন মনি:

নগরীতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ও নর্দান ইউনিভার্সিটিতে ২৭ জন ইয়াবা, গাঁজা, ফেন্সিডিল সরবরাহকারীকে অবিলম্বে গ্রেফতারে নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়। কেএমপি কমিশনার, জেলাপ্রশাসককে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তর থেকে দাপ্তরিক পত্র দেওয়া হয়।

এছাড়া যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে হল ও ক্যাম্পাসে মাদক সরবরাহকারীর সংখ্যা রয়েছে ৩৬ জন।


এ রকম নির্দেশনার পর থেকে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছেন। ইতোমধ্যেই মাদক স¤্রাট জাহানারা ওরফে জানু, তার বোন জামাই বাবলুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই মাদক বিক্রেতার দুই বোন লুৎফার নাহার লুতু ও হোসনে আরাকে গ্রেফতারের জন্য রোববার জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় ‘ক’ ও ‘খ’ সার্কেল ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে একটি যৌথ টিম গ্রেফতারের অভিযানে মাঠে নামেন। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আরাফাতুল আলম উপস্থিত ছিলেন।


খুলনা বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ আবুল হোসেন বলেন, রোববার বিকেল থেকে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের একটি টিম থ্রী সিস্টার নামে পরিচিত মাদক ব্যবসায়ী জাহানারা ওরফে জানু ও তার দুই বোন হোসনে আরা ও লুৎফার নাহারের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান টের পেয়ে হোসনে রারা ও লুৎফার নাহার লুতু পালিয়ে যায়।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ে উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান বলেন, খুলনায় এই প্রথম অভিযানে কোন চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ীর বাড়িতে চারদিকে সিসি ক্যামেরায় নিয়ন্ত্রিত। তার ধারণা এই সিসি ক্যামেরাটির একটি সংযোগ মেইন রাস্তায় ওপর দেওয়া আছে। তাদের অভিযান টের পেয়ে হোসনে আরা ও লুতু পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ইতোমধ্যেই জাহানারা মাদকসহ গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, খুলনা নগরীর ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইয়াবা, ফেন্সিডিল ও গাঁজা সরবরাহের ফলে দেশের অর্থনীতি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে; তেমনি শিক্ষার্থীদের মেধা নষ্ট হচ্ছে। সৃজনশীল ও উন্নত সাংস্কৃতিক চর্চা থেকে শিক্ষার্থীরা দূরে সরে আছে। ধারাবাহিকভাবে ইয়াবা ও ফেন্সিডিল সেবন করার ফলে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা থেকে দূরে রয়েছে। মাদক বিকিকিনি ও এর অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দলাদলি, কোন্দল, ছুরিকাঘাত, খুন ও মারপিটের ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-১২ এর যুগ্ম-সচিব ফরিদ আহম্মাদ এক প্রতিবেদনে এ নির্দেশনা এরকমটি উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো তালিকায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও হলসমূহে ইয়াবা সরবরাহের জন্য শহরতলীর মোহাম্মদনগর এলাকার মোঃ কালুর স্ত্রী তানিয়া, হরিণটানা ইসলামনগর এলাকার আলমগীর হোসেনের স্ত্রী পারভীন, রুস্তুম আলীর ছেলে কবির, মোহাম্মদনগর এলাকার রাবি, সাগর, মজিদ শেখের ছেলে হাসান শেখ, কালু, হরিণটানা ইসলামনগর এলাকার লাল মিয়ার ছেলে চায়ের দোকানদার রুবেল, একই এলাকার জয়নালের ছেলে চায়ের দোকানদার সাইদুর রহমান, হরিণটানা থানার এএসআই মোঃ রিপন মোল্যা, মোঃ হাসানুজ্জামান। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েটে) মাদক বিক্রেতা ও সরবরাহকারীদের মধ্যে গিলেতলার দক্ষিণপাড়ার আবু হানিফের স্ত্রী মোছাঃ শাবানা বেগম, একই এলাকার আজমত আলীর ছেলে নূরে আলম খান, গিলেতলা মীরপাড়া এলাকার মৃত রজব আলীর খাঁ’র ছেলে মোঃ জামাত খাঁ, ফুলবাড়ীগেট এলাকার বাদশা মিয়ার স্ত্রী বিলকিস, রঙ মিল গেট এলাকার ইউসুফ হায়দারের স্ত্রী রেখা, গাবতলা এলাকার সৈয়দ মোশারেফের ছেলে সৈয়দ আশরাফুল, একই এলাকার বাবুল মীরের ছেলে টুকু মীর, মীরেরডাঙ্গা এলাকার মৃত শেখ আব্দুল জলিলের ছেলে শেখ মোহাম্মদ এমদাদুল হক, ফুলতলা উপজেলার মশিয়ালী পূর্বপাড়া গ্রামের মোঃ ইসলাম শেখের ছেলে মোঃ রাজিব শেখ, একই গ্রামের নূরু শেখের ছেলে রাজু শেখ। নর্থ ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ও নর্দান ইউনিভার্সিটি এলাকায় সরবরাহকারীরা হচ্ছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক লীগ খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি নিখিল কুমার সাহা, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন সোহেল, বয়রা ইসলামিয়া কলেজ রোড এলাকার মোঃ রমজান আলীর ছেলে আলমগীর কবির খোকন, সোনাডাঙ্গা সোনালীনগর হাতেম আলী বাইলেনের বাবুল হোসেন সরদারের মেয়ে হোসনে আরা, সোনাডাঙ্গা থানা রোড এলাকার আল কাফি মল্লিক জনির স্ত্রী এমিলি রহমান বুবলি ও সোনাডাঙ্গা সোনালীনগর এলাকার ফকরুদ্দীন বাহাদুরের মেয়ে জাহানারা বেগম।
এছাড়া যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে হল ও ক্যাম্পাসে মাদক সরবরাহকারীদের সংখ্যা রয়েছে ৩৬ জন। এর মধ্যে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হলসহ ক্যাম্পাসে ইয়াবাসহ অবৈধ মাদক সরবরাহকারীর তালিকায় রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই চারজন শিক্ষার্থীর নাম। তারা হলেন- মোঃ আল মামুন, মাসুদুর রহমান রনি, মোঃ কামরুজ্জামান সনি ও স্বাগত। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হলে ও ক্যাম্পাসে ইয়াবা সরবরাহ করেন বিএনসিসি অফিস সহায়ক মোঃ বকুল জোয়ার্দ্দার। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহই শ্রমিক লীগ খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন সোহেল বলেন, তিনি কোন মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত নন। জড়িত থাকলে পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে তদন্ত করুক। একটি পক্ষ ষড়যন্ত্রে নেমেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কতিপয় ব্যক্তি ইমেজ নষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে।