সাতক্ষীরায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে দু’ছিনতাইকারি নিহত

0
348

সাতক্ষীরা প্রতিিিনধ: পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে দু’ ছিনতাইকারি নিহত হয়েছে। শনিবার ভোর সাড়ে তিনটার দিকে সাতক্ষীরা শহরের কামাননগরের বাইপাস সড়ক সংলগ্ন শরিফুল ইসলামের মুদি দোকানের সামনে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দু’টি দেশী পিস্তল, চার রাউ- রাউ- গুলি, দু’টি চাকু ও একটি নাম্বারবিহীন পালচার মোটর সাইকেল উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় সদর থানায় হত্যা ও অস্ত্র আইনে দু’টি মামলা হয়েছে।
নিহতরা হলেন, সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুরের মঈনুল ইসলামের ছেলে মাহামুদুর রহমান দীপ (২৪) ও কালিগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর গ্রামের মুদি ব্যবসায়ি আব্দুস সবুর সরদারের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩০)।
এদিকে ৩১ অক্টোবর কালিগঞ্জে বিকাশ এজেন্ট এর টাকা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে সোহান ও শামীম এহসান কিরণ শনিবার বিকেলে সাতক্ষীরার বিচারিক হকিম বিলাস ম-লের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া ১০ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সোহান সাতক্ষীরা শহরের মেহেদীবাগের আনিছুর রহমানের ছেলে ও শামীম এহসান কিরণ কালিগঞ্জের বসন্তপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে ও মথুরেশপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মো. মিজানুর রহমান জানান, গত ৩১ অক্টোবর বিকেলে কালিগঞ্জের কাটাখালি নামকস্থানে বিকাশ এজেন্টের কাছ থেকে ২৬ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় বৃহস্পতিবার গ্রেফতারের পর শুক্রবার গভীর রাতে দীপ ও সাইফুলকে নিয়ে শহরের কাছে কামালনগরের বাইপাস সড়কের ধারে অন্য সহযোগীদের আটক করতে তাদের নিয়ে আসা হলে শরিফুল ইসলামের দোকানের সামনে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে । পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে নেওয়ার পথে নিহত হয় দ্বীপ ও সাইফুল। তিনি জানান কালিগঞ্জ থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ যৌথভাবে দ্বীপ ও সাইফুলকে শহরের বাইপাস সড়ক ধারে কামালনগরে সন্ত্রাসীদের ডেরায় নিয়ে আসে। তাদের বিরুদ্ধে স্ব স্ব থানায় চাঁদাবাজি ও ছিনতাইসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
পুলিশ পরিদর্শক আরও জানান এ সময় দুটি দেশি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি, একটি মোটর সাইকেল ও দুটি চাকু উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সদর থানার উপপরিদর্শক হাফিজুর রহমান বাদি হয়ে শনিবার নিহতদের নাম উল্লেখ করে হত্যা ও অস্ত্র আইনে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেছেন। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে নিহতদের লাশ শনিবার বিকেলে তাদের স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ৩১ অক্টোবর বিকাশ এজেন্ট এর কাছ থেকে ২৬ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় আবু বকর ছিদ্দিক মীরুর দায়েরকৃত মামলার (১নং) তদন্তকারি কর্মকর্তা কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, বন্দুকযুদ্ধে নিহত দীপ ও সাইফুলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ি গ্রেপ্তারকৃত সোহান ও শামীমের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া ১০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। শনিবার বিকেলে তারা সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম বিলাস ম-লের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ি অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
তবে একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মুন্সিপাড়া এলাকায় বসবাসকারি সোহাগ( বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জের বাঁশঘাটা গ্রামে, শ্বশুর বাড়ি সাতক্ষীরার তালা উপজেরার খলিশখালি গ্রামে) মুনজিতপুরে এক আওয়ামী লীগ নেতার ছত্রছায়ায় থাকাকালিন ২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যান। এ হত্যার সঙ্গে সাইফুল ও দীপ জড়িত ছিল।
তবে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমান সাদিক তার ফেইসবুকে এক স্টাটাস দিয়ে বলেছেন, ‘ভাই তোদেরকে এইভাবে হারায়ে ফেলব তা বুঝতে পারিনি। পারলে মাফ করে দিস। দুয়া করি আল্লাহ তোদের বেহেশত বাসি করুন।
এদিকে নিহত সাইফুল ইসলামের মা ফতেমা খাতুন জানান, তার ছেলে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুরে থাকতো। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমান সাদিকের হয়ে বিভিন্ন কাজ করতো সাইফুল ও দীপ। খোড়া বাক্কারের ভাগ্নি চৈতিকে বিয়ে করে সে। বৃহষ্পতিবার রাতে পুলিশ তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে টাকা উদ্ধারের নামে গুলি করে হত্যা করেছে।
মইনুল ইসলাম জানান, তার ছেলে দীপকে বৃহষ্পতিবার রাতে পুলিশ পরিচয়ে বাড়ি থেকে তুৃলে নিয়ে যায়। পরদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রশাসনের দুয়ারে দুয়ারে সন্ধান করতে গেলেও কেই তাকে আটকের সত্যতা স্বীকার করেনি। শনিবার ভোরে তিনি দীপ বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে বলে খবর পান।
প্রসঙ্গত, কালিগঞ্জে বিকাশ এজেন্টের টাকা ছিনতাইকে ঘিরে বৃহষ্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত পুলিশ মুনজিতপুরের আজিজ, দীপ ও একই এলাকায় বসবাসরত সাইফুল, শহরের মেহেদীবাগের সোহান, একটি পালচার মোটর সাইকেলসহ রসুলপুরের সিরাজুল ইসলামের ছেলে রাসেল, কালিগঞ্জের বসন্তপুর গ্রামের আব্দুল নুর বিশ্বাসের ছেলে উপজেলা তাঁতীলীগের সভাপতি ময়নুল বিশ্বাস (৩০), একই এলাকার রফিুকল ইসলামের ছেলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম এহসান কিরণ (২২), একই এলাকার আফসার আলীর ছেলে ছাত্রলীগ সদস্য আশিকুর রহমান (২৩) ও আজিজ আহমেদের ছেলে উপজেলা তাঁতী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুর রহমানকে (২৪) আটক করে। যদিও পুলিশের কোন কর্মকর্তাই এ আটকের বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার না করলেও শনিবার বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় এ সম্পর্কিত সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়।