সহযোদ্ধা জালাল উদ্দীনের স্মৃতিতে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের শেষ যুদ্ধ

0
224

কাজী মোতাহার রহমান
খুলনার শরণখোলা থেকে শ্যামনগর পর্যন্ত মুক্ত বাতাসে বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে। চারিদিকে বারুদের গন্ধ। ময়ুর, ভদ্রা, ভৈরব, রূপসা, পশুর ও কপোতাক্ষ নদের তীরে শত শত নারী-পুরুষের লাশ। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকাররা থানা সদর থেকে ক্যাম্প গুটিয়ে খুলনায় আশ্রয় নিয়েছে। শিপইয়ার্ড, টুটপাড়া, পিএমজি কলোনি, ওয়াপদা ভবন, গোয়ালপাড়া, নিউ ফায়ার ব্রিগেড ও নিউজপ্রিন্ট মিল এলাকায় সেনা ছাউনি। খালিশপুর তীতুমীর নৌÑঘাঁটিতে পাক বাহিনীর শক্ত অবস্থান। সার্কিট হাউসের বিপরীতে সবুর লজের পূর্ব পার্শ্বে সোদা দোতলা ভবনে আল বদরের অবস্থান। বিবিসি, আকাশ বাণী ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ইথারে ইথারে প্রতি মুহূর্তে খবর আসছে সারা দেশে পাক বাহিনীর পরাজয়ের দুঃসংবাদ।
একাত্তরের সাত ডিসেম্বর কলকাতার হলদিয়া সমুদ্র বন্দর থেকে বাংলাদেশের যুদ্ধ জাহাজ পদ্মা পলাশ ও ভারতীয় বাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ পানভেল রওনা হয়, খালিশপুর তীতুমীর নৌÑঘাঁটি দখলের উদ্দেশ্যে। নৌ-কমান্ডের উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন ভারতীয় নৌ-বাহিনীর কমান্ডার এম এন সামান্ত। নয় ডিসেম্বর যুদ্ধ জাহাজ তিনটি সকাল আটটা নাগাদ রায়মঙ্গল অতিক্রম করে খুলনার জলসীমায় প্রবেশ করে। নৌ-সেনাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। নয় ডিসেম্বর দুপুরে জাহাজ তিনটি আকরাম পয়েন্টে অবস্থান নেয়।
দশ ডিসেম্বর শুক্রবার, কনকনে শীত। ঘন কুয়াশা। ভোর চারটার দিকে নৌ-কমান্ডার এমএন সামান্তর নির্দেশে নোঙর তুলে জাহাজ তিনটি চালনা বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। সবার মনে প্রত্যাশা পাক বাহিনীকে পরাজিত করে খুলনার আকাশে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়াবে। শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ বিনা বাঁধায় তারা চালনা বন্দর এলাকা জয় করে। মোংলা থানা সদরের বিভিন্ন দপ্তরে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়তে থাকে।
নৌ-কমান্ডের নির্দেশে প্রথমে ভারতীয় জাহাজ আইএনএস পানভেল, মাঝে বিএনএস পলাশ ও শেষে বিএনএস পদ্মা খুলনা অভিমুখে যাত্রা করে। সতর্কতার সাথে তারা রূপসা নদী দিয়ে খুলনা অভিমুখে অগ্রসর হতে থাকে। লেঃ কমান্ডার জালাল উদ্দীন বীর উত্তম দখিনা নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের রণাঙ্গণে আমরা ক’জন (মার্চ, ২০১২) স্মরণিকায় স্মৃতিচারণ করতে যেয়ে বলেন দুপুর আনুমানিক পৌঁনে বারোটা নাগাদ জাহাজ তিনটি শিপইয়ার্ডের অদূরে পৌঁছায়। ঠিক সে সময় মিত্র বাহিনীর জঙ্গি বিমান খুলনার আকাশে ওড়ে। বিমানগুলো শিপইয়ার্ডের কাছাকাছি এলে যুদ্ধ জাহাজে অবস্থানরত নৌ-সেনারা ওয়াকিটকি সেটের মাধ্যমে বিমানগুলোকে আক্রমণ করার জন্য কামান্ডার সামান্তর অনুমতি চেয়ে অনুরোধ করেন। ভারতীয় নৌ-কমান্ডার উত্তরে ইংরেজিতে জানালেন ‘ডোন্ট স্যুট এট দা ফাইটার বিমান, দেয়া’র আওয়ার ফ্রেন্ডস’। প্রথম দফায় জঙ্গি বিমানগুলো জাহাজের ওপর দিয়ে চক্কর দিয়ে পশ্চিম দিকে চলে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে বিমানগুলো নিচু হয়ে দ্রুত গতিতে উড়ে এসে রণতরী পদ্মাকে লক্ষ্য করে বোমা বর্ষণ করে। স্মৃতিচারণ করতে যেয়ে জালাল উদ্দীন উল্লেখ করেন এ সময় তিনি পদ্মা জাহাজের পেছনে কামানের দায়িত্বে ছিলেন। বোমা বর্ষণে পদ্মা জাহাজের রেডিও টেকনিশিয়ান ফরিদ উদ্দিন শহীদ হন। পদ্মার ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। নৌ-জাহাজ পলাশকে লক্ষ্য করেও বিমান থেকে বোমা বর্ষণ করা হয়। নৌ-কমান্ডার সামান্তর নির্দেশ অমান্য করে নৌ-জাহাজ থেকে জঙ্গি বিমানকে লক্ষ্য করে গোলা বর্ষণ শুরু হয়। ততক্ষণে বিমানগুলো নাগালের বাইরে চলে যায়। পদ্মার ইঞ্জিন বিকল হয়ে রূপসা নদীর পূর্ব তীরে চরে আটকা পড়ে। ভারতীয় যুদ্ধ জাহাজ পানভেলের ওপর কোনোরূপ হামলা হয়নি। এই জাহাজটি নির্বিঘেœ রূপসা নদী থেকে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। স্মৃতিচারণ করতে যেয়ে তিনি বলেন দুটি জাহাজের যোদ্ধারা নিশ্চিত মৃত্যু ভেবে অনেকেই রূপসা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পদ্মা নামক জাহাজটি রূপসা নদীতে ডুবে যায়। পদ্মার অধিনায়ক লেঃ মিত্র প্রতিপক্ষের হাতে ধরা পড়ে। গোলার আঘাতে রুহুল আমিনের ডান হাতটি সম্পূর্ণ উড়ে যায়। অগ্নিদগ্ধ রণতরী ও বিপন্ন মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাঁচাতে যেয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ইঞ্জিনরুম আর্টিফিশিয়ার রুহুল আমিন শহীদ হন। এছাড়া শহীদ হন ফরিদ উদ্দিন, আখতার উদ্দিন, দৌলত হোসেন, মহিবুল্লাহ, নৌ-কমান্ড রকিবসহ মোট দশ জন। লেঃ জালাল উদ্দিনের উদ্বৃতি দিয়ে মোল্লা আমির হোসেন তার মুক্তিযুদ্ধে খুলনা নামক বইয়ে উল্লেখ করেছেন পলাশ নামক যুদ্ধ জাহাজ রূপসা নদীর পূর্ব পাড়ের চরে আটকা পরে। পলাশ জাহাজেই সনাক্ত করা হয় রুহুল আমিনের লাশ। রূপসা নদীর পূর্ব পাড়ে এই গর্বিত সন্তানের লাশ দাফন করা হয়। খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রুহুল আমিন ও মহিবুল্লাহ’র মাজার স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছে। নৌ-বাহিনী, উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও রূপসা প্রেসক্লাব প্রতিবছর দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে।
১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর সরকারি গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সাতজন বীর সন্তানকে মরণোত্তর বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। রুহুল আমিন সেই সাতজনের অন্যতম।
মোহাম্মদ রুহুল আমিন ১৯৩৫ সালে নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার বাঘপাঁচড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আজহার পাটোয়ারী এবং মায়ের নাম জোলেখা খাতুন। তিনি ছিলেন বাবা মায়ের প্রথম সন্তান। তারা ছিলেন ছয় ভাইবোন। তিনি বাঘচাপড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে আমিষাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এখান থেকে এসএসসি পাশ করে ১৯৫৩ সালে জুনিয়র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগদান করেন।

“স্বাচিপ’র শোক”
খবর বিজ্ঞপ্তি: স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ), কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও খুলনা জেলা শাখার সাবেক সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম এর মায়ের মৃত্যুতে তার বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা ও তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করে বিবৃতি দিয়েছেন সংগঠনের খুলনা জেলা শাখার সভাপতি ডা. এস. এম. সামছুল আহসান মাসুম, সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. মোল্লা হারুন অর রশিদ, ডা. মো: সালাহউদ্দিন রহমতুল্ল্যা, সাধারণ সম্পাদক ডা. মো: মেহেদী নেওয়াজ, ডা. যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. সুমন রায়, ডা. নিয়াজ মুস্তাফি চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ ডা. বিষ্ণু পদ সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মো: ইউনুস-উজ-জামান খাঁন তারিম, দপ্তর সম্পাদক ডা. এস. এম. তুষার আলম, প্রচার সম্পাদক ডা. মো: জিল্লুর রহমান তরুন, বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ডা. এস. এম. মাহমুদুর রহমান রিজভী, গ্রš’াগার ও প্রকাশনা সম্পাদক ডা. শৈলেন্দ্রনাথ বিশ^াস, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক ডা. অনল রায়, ক্রীড়া সম্পাদক ডা. কাজী করিম নেওয়াজ, দূর্যোগ ব্যব¯’াপনা সম্পাদক ডা. সুদীপ পাল। স্বাচিপ, খুলনা জেলা শাখার কার্যকরী পরিষদের সিনিয়র সদস্যবৃন্দ হলেন ডা. আনোয়ারুল আজাদ, প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ মহসীন, প্রফেসর ডা. পরিতোষ কুমার চৌধুরী, ডা. গোলাম সারোয়ার ফারুক, ডা. মো: তোজাম্মেল হোসেন জোয়ার্দ্দার, ডা. শেখ ফরিদউদ্দিন আহমেদ, ডা. এ.টি.এম. মঞ্জুর মোর্শেদ, ডা. এস. এম. দিদারুল আলম শাহীন, ডা. উৎপল কুমার চন্দ, ডা. শ. ম. জুলকার নাইম, ডা. মোসা: ডালিয়া আখতার, ডা. শেখ শহীদুর রহমান, ডা. এস. এম. খালিদুজ্জামান, ডা. মো: কুতুব উদ্দীন মল্লিক, ডা. শীতেষ চন্দ্র ব্যানার্জী, ডা. ডলি হালদার, ডা. বিপ্লব বিশ^াস, ডা. পার্থ প্রতিম দেবনাথ, ডা. বাপ্পা রাজ দত্ত, ডা. খালেদ মাহমুদ, ডা. পলাশ কুমার দে, ডা. উপানন্দ্য রায়, ডা. মো: মেহেদী হাসান, ডা. মো: ফিরোজ হাসান, ডা. হিমেল সাহা, ডা. শাহীন আকতার শেখ, ডা. অনিক দেউড়ি, ডা. মোহাম্মদ হাসান, ডা. শাহেদ মাহমুদ খান, ডা. নাজিমুল ইসলাম লিটন, ডা. মো: রফিকুল ইসলাম, ডা. ফিরোজ আহমেদ, ডা. সাইফুল্লাহ মানসুর, ডা. শিমুল চক্রবর্তী, ডা. সাফাত আল দ্বীন ও ডা. সরদার তানভীর আহমেদ সহ সম্মানিত সকল চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ।