সরকার খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করবে

0
350

খুলনাটাইমস অর্থনীতি: মূল্য বৃদ্ধিতে লাগাম টানতে খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় গত শুক্রবার পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য তিন গুণ করে ভারত সরকার। এর পরদিনই ঢাকার বাজারে পেঁয়াজের দাম চড়তে থাকে। ভারতীয় পেঁয়াজের পাশাপাশি দেশি পেঁয়াজের দাম খুচরায় ইতোমধ্যে কেজিতে ২০ টাকার মতো বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে রোববার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে সোমবার থেকে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্য মূলে ট্রাক সেলের মাধ্যমে খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি শুরুর সিদ্ধান্ত হয় বলে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন ও সুদের হার কমাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া বন্দরে আমদানি করা পেঁয়াজ দ্রুত খালাস করা ও নির্বিঘœ পরিবহন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর কাছেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে টিসিবির একজন মুখপাত্র বলেন, রোববারই খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। সোমবার প্রথম দিনে সীমান্ত এলাকা থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করে তার দাম নির্ধারণ করা হবে। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার অধিকাংশ বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল প্রতি কেজি ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা। ওই রাতেই পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য ৮৫০ ডলার বেঁধে দিয়ে নির্দেশ জারি করে ভারত সরকার। শনিবারই এর প্রভাব পড়তে শুরু করে ঢাকার বাজারে। অনেক দোকানেই পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। রোববার সকালে অধিকাংশ দোকানেই ৭০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়, বিকালে অনেক জায়গায় তা আরও ১০ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা নেওয়া হয়। কারওয়ানবাজারে পেঁয়াজের পাইকারি বিক্রেতা আলাউদ্দিন বলেন, শুক্রবার রাত থেকেই ফরিদপুর, কুষ্টিয়া ও মানিকগঞ্জের সরবরাহকারীরা পেঁয়াজের দাম বাড়াতে শুরু করেছে। শুক্রবার প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম ছিল দুই হাজার টাকা, শনিবার আড়াই হাজার টাকা এবং রোববার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬০০ টাকায়। এদিন প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৬৬ টাকা। ফয়েজ উদ্দিন নামে কারওয়ান বাজারের আরেক ব্যবসায়ী জানান, বাজারে পাবনা অঞ্চলের পেঁয়াজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি এবং মানও ভালো। এই পেঁয়াজ এখন পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ টাকায়। পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের আকস্মিক এই মূল্যবৃদ্ধির হার খুচরায় সর্বত্র এখনও প্রভাব ফেলেনি। যেমন পীরেরবাগে রোববার বিকালেও ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছিল পেঁয়াজ। তবে আগারগাঁও কাচাবাজারে অন্তত পাঁচটি দোকান ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজের দাম প্রতিকেজি ৮০ টাকা করে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৬৫ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারের আল মক্কা বাণিজ্যালয়ের ব্যবস্থাপক ইউনুস হাওলাদার বলেন, শনিবার ভারতীয় পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য ৬০ টাকায় উঠলেও রোববার তা আবার ৫৫ টাকায় নেমে এসেছে। পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য বাড়িয়ে ভারতের নির্দেশনা জারির কারণে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়ে অস্বাভাবিক উপায়ে দাম বাড়াবে বলে আগেই সতর্ক করেছিলেন খাত সংশ্লিষ্টরা। বাস্তবতায় এর ব্যতিক্রম হয়নি। শ্যামবাজারের পেঁয়াজের ব্যবসায়ী আবদুল মাজেদ শুক্রবারই বলেছিলেন, ভারতের রপ্তানিমূল্য বাড়ানোর খবরকে কাজে লাগিয়ে অনেক দেশীয় ব্যবসায়ী পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দিতে পারেন। এটা পেঁয়াজের সঙ্কটের কারণে হবে না, বরং তাদের অসাধু চিন্তার কারণে হবে। ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেঁছনে যৌক্তিকতা থাকলেও এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের দাম বাড়ার যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছেন না জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের মুনাফার চিন্তার সঙ্গে নৈতিকতার সমন্বয় প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। মনজুর শাহরিয়ার বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজের দাম যখন ২৮ টাকা ছিল তখনও দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তখন দাম কমে ২৮ টাকা হয়ে যায়নি। এখন আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বাড়ার সুযোগে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়াটা প্রশ্নবিদ্ধ। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত বাজার বিশ্লেষণ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকগুলো বিষয় থাকে যেখানে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের সুযোগ কম। সেখানে আসলে ব্যবসায়ীদের নৈতিকতার ব্যাপারটি জড়িত। এই ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়র নেতারা তাদের সমিতিভুক্ত ব্যবসায়ীদের নিয়ে বিষয়গুলো দেখভাল করতে পারেন।