শিক্ষকরা আন্দোলনেই বেশি মনোযোগী চরম অস্থিরতায় প্রাথমিক শিক্ষা

0
554

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষায় মনোযোগী না হয়ে বর্তমানে আন্দোলনের দিকেই বেশি মনোযোগী। সরকারের পক্ষ থেকে এসব সমস্যা নিরসনের জন্য কিছু পদক্ষেপ নিলেও শেষ পর্যন্ত তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি শিক্ষকরা। চলমান এই অস্থিরতার কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষকরা আন্দোলনে থাকায় নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হতে পারছেন না। যার কারণে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব পদক্ষেপে বাস্তবায়নে দরকার শিক্ষকদের পূর্ণসহযোগিতা। ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে বর্তমান সরকার। কিন্তু সে সময় ৩৪টি রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৮৬টি অস্থায়ী রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩ হাজার ৩৩২টি নন রেজিঃ ও মাদার স্কুলের নামে সমাপনী ৫০৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ থেকে বঞ্চিত হয়।
আমরা দেখছি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেতনবৈষম্য নিরসনের দাবি, দ্বিতীয়তঃ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ ইস্যু দুটি নিয়ে বছরজুড়ে থেমে থেমে আন্দোলন করছেন শিক্ষকরা। এ সমস্যা সমাধানে সরকারকে আন্তরিক হওয়া উচিত। জাতীয়করণের দাবিতে কিছু বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন। সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে যেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সেসব প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। সেখানে যেসব শিক্ষার্থী রয়েছে তাদের কথা চিন্তা করে হলেও প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে সরকারের ভাবা জরুরি।
এছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনবৈষম্য রয়েছে দাবি করে গত কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করছেন প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা। পৃথকভাবে তারা নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার প্রধান শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড এবং সহকারি শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে বেতন দিতে সম্মত হয়। কিন্তু শিক্ষকরা তা মানতে নারাজ। গত শুক্রবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ক্র্যাব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক নেতারা বলেন, ওই প্রস্তাব বাদ দিয়ে প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে এবং সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১১তম গ্রেডে নির্ধারণ করতে হবে।
এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণের দাবিতে ২০১৮ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে টানা ১৮ দিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলন করে শিক্ষকরা। একপর্যায়ে ২০ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তালিকা বহির্ভূত প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহের তালিকা চাওয়া হয়। তখন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রণলয় থেকে সঠিক তথ্য না দেয়ায় ওই বিদ্যালয়গুলো বাদ পড়ে যায়। পরে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণের দাবিতে একই বছর ৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কর্মসূচি পালন করে। পুলিশ ওই কর্মসূচিতে বাধা দেয়াসহ পাঁচজন শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১৬ জুন থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশন কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলকারী শিক্ষকরা। ওইসময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীর এপিএসের আশ্বাসে আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছিলো।
আমরা আশা করছি, প্রাথমিকপর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত ও চলমান অস্থিরতা নিরসনে সরকারকে যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নিয়ে শিক্ষকদের নিয়মিত পাঠদানে ফিরিয়ে আনতে হবে।