শতকরা ১৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক রোগী : শিশু-কিশোরদের হার ১৮ : আজ বিশ্ব মানিসক স্বাস্থ্য দিবস 

0
576

কামরুল হোসেন মনি : গোপালগঞ্জের ডুমদিয়া এলাকার বাসিন্দা তামান্না (২৪)। হতদরিদ্র পরিবারের ৫ ভাই বোনের মধ্যে সে  মেঝ। ২০১৩ সালে খুলনা দৌলতপুর কলেজ (ডে নাইট কলেজ) থেকে এইচএসসি পাস করে। বাবার অস্বচ্ছলতা সংসার নিয়ে প্রায়াই চিন্তিত থাকতেন। যুবতী এই মেয়েটির রাতে ঘুমাতো না। রুটি-ফলমুল খুবই পছন্দ। কাউকে দেখলে বলে ওঠেন আমাকে ফল কিনে দেবেন। তার পরিবার তার আচরণে বিব্রত। ঘুম না হওয়া ও পারিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতা মূলত সে এখন মানসিক রোগীতে পরিণত হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মানসিক বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। শুধু তামান্না নয়, বাংলাদেশে অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে মানসিক রোগী। বর্তমানে দেশে শতকরা ১৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ মানসিক রোগে ভুগছে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে মানসিক রোগির হার ১৮ শতাংশ। চলতি বছরের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত গত ৯ মাসে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে মানসিক বিভাগ ইউনিটে ভর্তি মানসিক রোগীর চিকিৎসার সংখ্যা ১৭৯ জন । যাদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৯০ জন। আজ (বুধবার) ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এবছরের প্রতিপাদ্য ‘পরিবর্তনশীল বিশ্বে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য’।
খুলনা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র মতে, দেশের মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য সরকারী পর্যায়ে নানা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সরকার অন্যান্য রোগের মত মানসিক রোগের চিকিৎসাও জনগণের দৌড়গাড়ায় নিয়ে আসার জন্য সদা সচেষ্ট। এ সূত্রটির মতে, দেশের শতকরা ১৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ মানসিক রোগে ভুগছে। এছাড়া শিশু-কিশোরদের মধ্যে মানসিক রোগির হার ১৮ শতাংশ। সিভিল সাার্জন অফিসের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, দিবসটি উপলক্ষে জেনারেল হাসপাতালের চত্বর থেকে সকাল ৯টায় র‌্যালী হয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ মাহবুবুর রহমানে সভাপতিত্ব সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন ডেপুটি সিভিল সাজর্ন ডাঃ আতিয়ার রহমান। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মেডিসিন কানস্যালট্যান্ট ডাঃ উৎপল কুমার চন্দ। ওই কর্মকর্তা জানান, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক গুরুত্বপুর্ন তথ্য তুলে ধরে শহরের মাইকিং করা হবে।
খুমেক হাসপাতালে মানসিক বিভাগে সূত্র মতে, চলতি বছরে গত ৭ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালের সুপার ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ আনুষ্ঠানিকভাবে ১০টি বেডের মানসিক বিভাগ চালুর উদ্ধোধন করেন। এর আগে হাসপাতালে এ বিভাগটি চালু ছিলো না। সেবাটি চালুর হওয়ার পর থেকে গত ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১৭৯ মানসিক রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। যার মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৯০ জন বাকী মহিলারা। আক্রান্তদের বয়স ২০-৬০ এর মধ্যে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এটি এম মঞ্জুর মোর্শেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, এই হাসপাতাল চালুর পর থেকেই মানসিক রোগীদের জন্য আলাদা কোন বিভাগ ছিল না। রোগীরা বহিঃবিভাগ থেকে চিকিৎসা পেতো। এতে অনেক হতদরিদ্র রোগীরা টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে হিমশিম খেতেন। এখন থেকেই মানসিক রোগীরা সব ধরণের চিকিৎসা সেবা এই হাসপাতাল থেকেই পাচ্ছেন।। ৫টি পুরুষ ও ৫টি মহিলা বেড নিয়ে এই বিভাগের যাত্রা শুরু।
তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে যাতে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার কোন ত্রুুটি না হয়, সেই জন্য যা যা করার দরকার সব কিছুই ধীরে ধীরে চালু করা হবে।
খুমেক হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারি অধ্যাপক ডাঃ এস এম ফরিদুজ্জামান এ প্রতিবেদককে বলেন, দিবসটি উপলক্ষে ৯ অক্টোবর আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে খুমেক হাসপাতালের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মুলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খুমেক হাসপাতালের সহকারি রেজিস্টার মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ও গবেষক ডাঃ এস এম সাইফুল ইসলাম (রাজু) ও ডাঃ মাহবুব কিবরিয়া। আলোচনা সভায় আবু নাসের হাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগের ডাক্তররা উপস্থিত ছিলেন।
সহকারি অধ্যাপক ডাঃ এস এম ফরিদুজ্জামান বলেন, বর্তমানে আগের থেকে মানসিক রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পারিবারিক বন্ধন শীতিল হওয়া, বিদেশী সংস্কৃতি আগ্রাসন, মাদকের প্রভাব হৃদয়হীনতা, সামাজিক অস্থিরতা, আর্থ-সামাজিক অস্থিরতা কারণে বেড়েছে মানিসক রোগীর সংখ্যা। মনস্তাত্ত্বিক সক্ষমতা, মানিয়ে নেওয়ার শক্তি হারিয়ে হতাশায় ডুবে যাচ্ছে মানুষ।