লজ্জা ও ভয়ে আপোষ ধর্ষণ মামলা

0
413

সাজার হার ১.৩৬ শতাংশ, ৯৯ ভাগ আসামি খালাস-
দেশে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক আইন, নারী ও মানবাধিকার সংগঠন, সরকারের প্রচেষ্টা থাকার পরও দুর্ভাগ্যজনকভাবে নারীর প্রতি সহিংস আচরণ, চরম নিরাপত্তাহীনতা, যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের সংখ্যা বাড়ছে। ধর্ষকের লোলুপ দৃষ্টি থেকে বাদ যাচ্ছে না শিক্ষার্থী, শিশু ও বৃদ্ধরাও। এমনকি রেহাই পাচ্ছেন না বাকপ্রতিবন্ধী বা পাগলও। নারী ও শিশু নির্যাতনের মাত্রা যে ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তা দেখে মনে হয় সমাজ একটি বিবেকহীন, পাশবিক বৈকলাঙ্গের দিকে এগুচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় বিচারের ধীরগতির জন্য পুলিশের গাফিলতি ও আদালতের কাঠামো অনেকাংশে দায়ী। বিচারক সংকট, সাক্ষী গরহাজিরসহ নানা কারণে এ সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির হার খুবই কম।
অসহায়ত্ব, সামাজিক লজ্জা, ভয়, আর্থিক অসচ্ছলতাসহ নানা প্রতিকূলতার কারণে ধর্ষণ বা যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যার ঘটনা আমরা শুনে থাকি। যারা বেঁচে থাকে, তাদের স্বাভাবিক সত্তারও মৃত্যু ঘটে। আজীবন শিকার হতে হয় সামাজিক নিগ্রহের। তদন্ত কর্মকর্তার আসামিকে বাঁচানোর প্রবণতা মামলাকে আরও বাধাগ্রস্ত করে। অপরাধীদের রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি, তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা ও সাক্ষ্য গ্রহণের সময় ভিকটিমকে হয়রানির কারণেই ধর্ষণ মামলার বিচার হয় না। মূলত মামলার ধীরগতি, বাড়তি ঝামেলা ও লোকলজ্জার ভয়ে ধর্ষিতার পরিবার আসামির সাথে সমঝোতায় বাধ্য হওয়ায় ধর্ষণ মামলার অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ার বড় কারণ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ধর্ষণের শিকার নারী-শিশু দরিদ্র পরিবারের। আবার অনেক ক্ষেত্রে ডাক্তারি পরীক্ষা বা প্রমাণ সংগ্রহের অভাবেও ভিকটিমের পক্ষে ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তখন তারা বাধ্য হয়েই অভিযুক্তের শর্ত মেনে সমঝোতায় যেতে বাধ্য হয়। বিচারের ধীরগতির সুযোগে প্রভাবশালীরা মামলার বিভিন্ন প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বাদিকে হুমকি বা অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে নাজেহাল করে থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে সাক্ষ্য-প্রমাণের ঘাটতি মেনে নিয়ে আপস-মীমাংসায় বাধ্য হচ্ছেন।
নারীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা নারীপক্ষের সর্বশেষ এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা মামলায় ৯৮ দশমিক ৬৪ ভাগ আসামি খালাস পেয়ে পাচ্ছে। সাজা হয় মাত্র ১ দশমিক ৩৬ ভাগ আসামির। বাদি ও আসামিপক্ষের আপস-মীমাংসা, বিচারের ধীরগতি, তদন্তে গাফিলতি, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, সাক্ষীর আদালতে হাজির না হওয়া, যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ না থাকাসহ নানা কারণে এসব মামলায় আসামিরা খালাস পেয়েছে।
আমরা আশা করি নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালকে আরও গতিশীল করা হবে। রাষ্ট্রপক্ষের দুর্বলতার কারণে নারী ও শিশু নির্যাতন-সংক্রান্ত মামলাগুলোর যথাযথ বিচার না হওয়া মেনে নেওয়া যায় না। মামলার তদন্ত, অভিযোগপত্র দাখিল ও সাক্ষী হাজিরেই পুলিশ অনেক সময় নষ্ট করে ফেলেন। ফলে বিচার বিলম্ব হয়। এ ব্যাপারে প্রসিকিউশনের অধীনে পুলিশের একটি নির্দিষ্ট ইউনিট করা যেতে পারে বলেও মনে করি আমরা।