রুটের সেঞ্চুরিতে সিরিজ ইংল্যান্ডের

0
341
রুটের সেঞ্চুরিতে সিরিজ ইংল্যান্ডের

স্পোর্টস ডেস্ক:
দলের জয়ের জন্য প্রয়োজন চার রান। অপরদিকে রুটের সেঞ্চুরির জন্য দরকার ছয় রান। এমন সমীকরণ নিয়ে খানিকটা বিপদেই ছিলেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান জো রুট। বোলিং করতে প্রস্তুত হার্দিক পান্ডিয়া। প্রথম বলে দুই রান নিয়ে দলের ও নিজের রান সংখ্যা কমালেন রুট। পরের বল দিলেন ডট। তৃতীয় বল পান্ডিয়া করলেন ওয়াইড। আর তখনই শংকা জাগে টানা সেঞ্চুরি পাবেন তো জো রুট। কিন্তু নিজের প্রতি বিশ্বাস ছিল রুটের। তাই তৃতীয় বলটিকে মিড উইকেটে ঠেলে চার হাঁকিয়ে নিজের সেঞ্চুরি ও দলের জয় এক সঙ্গেই উদযাপন করলেন রুট।

অথচ এই রুটকে ছাড়াই টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছিল ইংল্যান্ড। তাকে ছাড়া ওই সিরিজ ভারতের কাছে খুইয়ে বসে ইংলিশরা। তবে শেষ ম্যাচের জয়ের কৃতিত্বটা শুধু একা রুটকে দিলেও জিনিসটা বেশ বেমানান ঠেকবে। কারণ আগেই ভারতের লাগাম টেনে ধরেন ইংলিশ বোলাররা। আর ব্যাটিংয়ে এসে রুটকে যোগ্য সাপোর্ট দেন ইয়ান মরগ্যান। তিনিও শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৮৮ রানে। রুট ও মরগ্যান তৃতীয় উইকেট অপরাজিত ১৮৬ রানের জুটি গড়েন।

মঙ্গলবার হেডেংলির লিডসে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে ইংল্যান্ড টস জিতে সফরকারীদের ব্যাটিংয়ে পাঠায়। তিন ম্যাচ সিরিজের আগের দু’ম্যাচ ১-১ এ সমতা বিরাজ করায় শেষ ম্যাচটি অঘোষিত ফাইনাল হিসেবে পরিচিতি পায়।

টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ইংলিশ বোলারদের সামনে সুবিধা করতে পারেনি উদ্বোধনী জুটি। মার্ক উড ও উইলির আঁটসাঁট বোলিংয়ে রানের জন্য সংগ্রাম করতে হয় অতিথিদের। ষষ্ঠ ওভারে রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে প্রথম আঘাত হানেন উইলি। অপরপ্রান্তে থাকা শিখর ধাওয়ান অধিনায়ক কোহলিকে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাট চালিয়ে যান। দলীয় ৮৪ রানে দ্বিতীয় উইকেট হিসেবে ধাওয়ান রান আউট হন। তার আগে ৪৯ বলে ৭টি চারের সাহায্যে ৪৪ রানের ছোট্ট ইনিংস উপহার দেন।

তৃতীয় উইকেটে দিনেশ কার্তিক প্রথম তিন বলে দুটি বাউন্ডারী মেরে নিজের সামর্থ্যের জানান দেন। তবে বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি তিনি। আদিল রশিদের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান ২১ রান করে। কার্তিকের বিদায়ের পর ভারতকে আরও বড় ধাক্কা দেন আদিল রশিদ। লেগ স্টাম্পে পড়ে কোহলির ব্যাটের কানা ফাঁকি দিয়ে বল আঘাত হানে অফ স্টাম্পে। এমন ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে কোহলি যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না এরকম ডেলিভারি রশিদ করতে পারেন। বিদায়ের আগে অবশ্য কোহলি ৭২ বলে ৮ চারের সাহায্যে ৭১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দেন।

এরপর রায়না (১) ব্যর্থ হলেও ধোনির লড়াকু ৪২ ভারতকে পথে রাখে। শেষ দিকে ভুবনেশ্বর ২১, হার্দিক ২১ আর ঠাকুর ১৩ বলে অপরাজিত ২২ রান করলে লড়ার পুঁজি পায় সফরকারীরা।

ইংলিশদের পক্ষে পেস বোলার উইলি ও লেগ স্পিনার আদিল রশিদ ৩টি এবং মার্ক উড একটি উইকেট লাভ করেন।

ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা স্পিন খেলতে ভীষণ পারদর্শী। কিন্তু তাদেরই এদিন বেঁধে ফেলার কাজটা নিপুণভাবে করেছেন ইংলিশ স্পিনাররা। বিশেষ করে আদিল রশিদের কথা বলতেই হবে। কারণ তার তিনটি উইকেটই ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপের মিডলঅর্ডারের মূল ভরসা। কোহলি, কার্তিক আর রায়নাকে ফিরিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নেন।

সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে নিজেদের শুরুটা ভালোই করেন জেমস ভিন্স ও জনি বেরিষ্ট্রো। প্রথম পাঁচ ওভারেই ৪৩ রান দলীয় স্কোরবোর্ডে যোগ করেন এ দুজন। বেরিষ্ট্রোর বিদায়ের পর বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি ভিন্সও। দলীয় ৭৪ রানে রান আউটের ফাঁদে পড়ে দ্বিতীয় উইকেট হিসেব বিদায় নেন ভিন্স। এরপর শুধুই ভারতীয়দের ব্যর্থতাই ছিল বলা চলে।

মাঝারি ধরনের স্কোরে জয় পেতে যে বোলিং, ফিল্ডিং দরকার ছিল তা করতে পারেনি ভারত। পেসারদের বোলিং ছিল এলোমেলো, ফিল্ডিং ছিল ছন্নছাড়া। তাই সুবিধা দুই হাতে কাজে লাগিয়েছে ইংল্যান্ড।

৭৪ রানে দ্বিতীয় উইকেটের পতনের পর ভারতীয় বোলারদের আর কোনও সুযোগ দেননি মরগ্যান ও রুট। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৮৬ রানের অপরাজিত পার্টনারশিপে দলকে ৮ উইকেটের বিশাল জয় পাইয়ে মাঠ ছাড়েন এ দু’জন।

আগের ম্যাচে শতক হাঁকিয়ে ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ডে বসেছিলেন মার্কাস ট্রেসকোথিকের পাশে। এদিন ১৩ সেঞ্চুরিতে রেকর্ডটি একার করে নিলেন রুট। আর এ সিরিজ জয়ের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সাত বছর পর ভারতের বিপক্ষে কোনও ওয়ানডে সিরিজ জিতল ইংল্যান্ড। এর আগে ২০১১ সালে সবশেষ পূর্ণাঙ্গ সিরিজ জিতেছিল ইংলিশরা।

এদিন ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করায় প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান আদিল রশিদ ও পুরো সিরিজে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে প্লেয়ার অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান জো রুট।