রাশিয়া বিশ্বকাপে না থেকেও আছে বাংলাদেশ

0
607

স্পোর্টস ডেস্কঃ

বিশ্বের বৃহত্তম দেশ রাশিয়ায় শুরু হচ্ছে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ হিসেবে পরিচিত ফুটবলের বিশ্ব লড়াই। সুদূর রাশিয়ার ফুটবল বিশ্বকাপে খেলার প্রতিযোগিতায় না থাকলেও দারুণভাবে রয়েছে লাল সবুজের বাংলাদেশ। শুধুমাত্র বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলগুলোকে সমর্থন বা সে দেশের পতাকা উড়ানোর জন্য নয়। রাশিয়ার মাঠে বিশ্ব মাতানো খেলোয়াড়দের পরিহিত জার্তিতেও লেখা থাকবে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’।

বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকটি দেশের অফিসিয়াল জার্সি ও জ্যাকেট তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। রাজধানী ঢাকা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের পোশাক কারখানায় এসব জার্সি তৈরি করা হয়েছে। তেমনি ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা জার্সিতে খেলবে ইংল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দল। আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি আর আন্দ্রেস ইনিয়েস্তারাও পড়বেন ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা জ্যাকেট।

মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, ইংল্যান্ড দলের জার্সি তৈরি হয়েছে রাজধানীর সাভারে অবস্থিত এক পোশাক কারখানায়। এ খবরের সত্যতা মিলেছে ব্রিটিশ দৈনিক দ্যা টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনেও। তবে প্রতিবেদনে শ্রমিকদের মজুরি নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম থেকে রাশিয়া :
একবার ভাবুন তো, মস্কোর ঐতিহাসিক রেড স্কয়ার। আর সেই শহরের লুঝনিকি স্টেডিয়ামের ডাগ আউটে বসে থাকা মেসি কিংবা ওজিলের গায়ে থাকা জ্যাকেটটা তৈরি করেছেন চট্টগ্রামের কেইপিজেডের পোশাক কারখানায় কোনো এক বাংলাদেশি শ্রমিক। পরম যতœ আর মমতায় যে জ্যাকেটটি তিনি তৈরি করেছেন, তা-ই পরে আছেন ফুটবলে মাঝমাঠের মস্তিস্ক নামে খ্যাত ‘আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা’। তার গায়ে শুধু জার্সিই নয়, জার্সিতে লেখা রয়েছে বাংলাদেশের নাম।

বাংলাদেশে তৈরি বিশ্বকাপের জ্যাকেট পরবেন বিশ্বের নামী ফুটবলারা। চট্টগ্রামের কেইপিজেডের পোশাক কারখানায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের হাতে তৈরি হয়েছে আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেন, বেলজিয়াম, কলম্বিয়া, মেক্সিকো, স্বাগতিক রাশিয়ার ফুটবল দলের অফিশিয়াল জ্যাকেট।

চট্টগ্রামের রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) ইয়াংওয়ান কর্পোরেশনের জনসংযোগ পরামর্শক নজরুল ইসলাম খোকন জানান, ইয়াংওয়ানের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী শু ইন্ডাস্ট্রিজ তৈরি করেছে আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেন, বেলজিয়াম, কলম্বিয়া, মেক্সিকো, স্বাগতিক রাশিয়া ফুটবল দলের অফিশিয়াল জ্যাকেট। খ্যাতনামা খেলার সামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাসের পক্ষে ইয়াংওয়ান এসব জ্যাকেট বাংলাদেশ থেকে তৈরি করেছে।

তিনি আরও জানান, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসব পোশাকের শীপমেন্ট হয়েছে। এর আগে গত বছরের আগস্ট থেকে শুরু হয় এ পোশাক তৈরির কাজ।

সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৮ মাস ধরে চলা এসব পোশাক অত্যন্ত গোপনীয়তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। বিষয়টি যেন কোনোভাবেই আগেই ফাঁস হয়ে না যায় তার জন্য খুব সতর্কতা অবলম্বন করে প্রতিষ্ঠানটি।

আলোর নিচে অন্ধকার :
ফুটবলের বিশ্ব মঞ্চে চট্টগ্রামের জাহানারা (ছদ্মনাম) কিংবা সাভারের কহিনুরের হাতে গড়া পোশাক পড়ে মেসি-ওজিলরা যখন মাঠ মাতাবেন তখন জাহানার পরিবার কী অবস্থায় থাকবেন? কত টাকাইবা পাচ্ছেন বিশ্বকাপের এ পোশাক নির্মণের কারিগররা? সে প্রশ্ন তুলেছে বিশ্ব মিডিয়া।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্যা টেলিগ্রাফের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এবারের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড জাতীয় দলের ফুটবল কিটের মূল্য দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল। ভক্ত-সমর্থকদের জন্য দলটির অফিশিয়াল জার্সি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ পাউন্ডে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৮ হাজার টাকা। কিন্তু বাংলাদেশের সাভার ইপিজেডের যে কারখানায় এসব পোশাক তৈরি করা হয়েছে সেখানকার শ্রমিকরা ঘণ্টায় পেয়েছেন মাত্র ২১ পেনি অর্থাৎ বাংলাদেশি ২৩ টাকার কিছু বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ) নাইকির সঙ্গে ৪৫২ কোটির টাকায় ১২ বছরের চুক্তি হয়। যার আওতায় ইংলিশ দলের সমর্থক ও খেলোয়াড়দের জন্য ‘রেপ্লিকা’ ও ‘ম্যাচ কিট’ সরবরাহ করছে বিশ্বব্যাপী খেলাধুলার সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নাইকি। আন্তর্জাতিক বাজারে নাইকির এসব পোশাক চড়া দামে বিক্রি হলেও বাংলাদেশে শ্রমিকরা পাচ্ছেন ঘণ্টায় মাত্র ২৩ টাকা।

 

ইংলিশ ফুটবল দলের অফিশিয়াল জার্সি ও শর্টস তৈরি হয়েছে সাভার ইপিজেডের এক কারখানায়। এর মধ্যে রেপ্লিকা টি-শার্ট প্রতিটি ১১০ পাউন্ডে (বাংলাদেশি ১২ হাজার ৩৭৫ টাকা) বিক্রি হচ্ছে। আর ম্যাচ কিট অর্থাৎ জার্সি ও শর্টস বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ১৬০ পাউন্ডে (বাংলাদেশি ১৮ হাজার টাকা)।

বিষয়টি নিয়ে সরব ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যরাও। বিষয়টি তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন হাউস অব কমন্সের ডিজিটাল, কালচার, মিডিয়া অ্যান্ড স্পোর্টস কমিটির রক্ষণশীল দলীয় সদস্য সাইমন হার্ট এমপি। তিনি বলেছেন, ‘এ-সংক্রান্ত চুক্তি কীভাবে সই ও পূরণ হয়েছে তা খতিয়ে দেখা উচিত।’

জো স্টিভেনস এমপি বলেছেন, ‘বিশ্বকাপে কিটসহ ইংল্যান্ড জাতীয় দলের সংশ্লিষ্ট সব বিষয় জাতি হিসেবে আমাদের গর্বিত করে তুলতে পারে। এসব বিষয় খতিয়ে দেখাটা এফএ’র দায়িত্ব। যদি মানুষকে কর্মক্ষেত্রে শোষণ করে এগুলো বানানো হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে আমাদের পক্ষে গর্বিত হওয়াটা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।’

এ ব্যাপারে নাইকির এক মুখপাত্র জানান, ‘তারা ‘নৈতিক ও টেকসইভাবে’ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। যা আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থার (আইএলও) বেধে দেওয়া মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।’

ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন কর্মকর্তারা বলেছেন, ইংল্যান্ড জাতীয় দলের পাশাপাশি প্রিমিয়ার লিগের এবং ইউরোপীয় ও আন্তর্জাতিক অন্যান্য দলের সঙ্গে কাজ করছে নাইকি। ইংল্যান্ড দলের জন্য সরবরাহ করা সব পণ্যই আইন মেনে এবং সংশ্লিষ্ট কার্যবিধি মেনেই উৎপাদন করা হয়েছে বলে নিশ্চয়তা পেয়েছে এফএ।