রাবেয়া ও রুকাইয়ার মত জটিল অপারেশনে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর

0
445

খুলনাটাইমস ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাবেয়া এবং রুকাইয়া’র মত সংযুক্ত জটিল জমজদের অপারেশনে সম্ভব সবধরণের সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস প্রদান করেছেন। জাতীয় বার্ণ এন্ড প্লাষ্টিক সার্জারি ইনষ্টিটিউট’র প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন আজ সকালে প্রধানমন্ত্রীর তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে (পিএমও) শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলে শেখ হাসিনা একথা বলেন। ডা. সেন এ সময় রাবেয়া এবং রুকাইয়ার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন এবং তাঁদের বর্তমান ছবি দেখান। ডা. সেন এ সম্পর্কে বাসসকে বলেন, ‘আমরা যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের জটিল অপারেশন আরো সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারি সেজন্য সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন আমাদের মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী।’ ডা. সেন আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী এই ধরনের অপারেশনের জন্য মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সকল ধরণের শিক্ষা গ্রহণের উপর জোর দিয়েছেন। উল্লেখ্য, যুক্ত মাথা নিয়ে জন্মগ্রহণকারী রাবেয়া এবং রুকাইয়াকে গত বছর ২ আগষ্ট সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ‘অপারেশন ফ্রিডম’ নামের সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পৃথক করা হয়। ছবিতে রাবেয়া এবং রুকাইয়াকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে দেখে প্রধানমন্ত্রী খুব খুশি হয়েছেন বলেও ডা. সেন জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই ঘটনাটির ওপরে একটি ভিডিও চিত্র নির্মানের জন্য আমাকে বলেন, যাতে করে আমাদের স্বাস্থ্যখাতের অগ্রগতির চিত্র জনসম্মুখে তুেল ধরা যায়।’ ডা. সেন বলেন, পরস্পর যুক্ত থাকা জমজ শিশুকে পৃথক করার অস্ত্রোপচার বিশ্বে একটি বিরল ঘটনা। এধরনের অপারেশনই বিশ্বে এ পর্যন্ত ১৭টি হয়েছে এবং রাবেয়া ও রুকাইয়া’র অপারেশনটি সমগ্র এশিয়া মহাদেশেই প্রথম। ‘আমি খুব ভাগ্যবান যে, আমি এই অপারেশনটির সমন্বয় করেছি, যা প্রধানমন্ত্রীর আশীর্বাদের জন্যই সম্ভব হয়েছে, ‘যোগ করেন তিনি। ডা. সেন বলেন, প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা প্রধানমন্ত্রীকে এই জমজ বোন বাবেয়া এবং রুকাইয়ার বিষয়টি অবহিত করেন এবং সম্ভব হলে চিকিৎসার আহবান জানান। তিনি বলেন, এরপরই প্রধানমন্ত্রী আমাকে ডেকে নেন এবং আমাকে এর দায়িত্ব দেন।’ ‘তাঁরা এখন স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে কিন্তু প্রায় একমাস আগে আমরা রাবেয়ার মস্তিস্কের একটি অপারেশন করি এবং একমাস পরে তাঁর আর একটি অপারেশন লাগবে’ বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং হাঙ্গেরী সরকারের সংস্থা এজেন্সি ডিফেন্সলেস পিপল ফাউন্ডেশন (এডিপিএফ) এর সহায়তায় সংযুক্ত যুগলদের অপারেশন পরিচালনা করা হয়েছিল। এর আগে তাঁদেরকে চিকিৎসার জন্য হাঙ্গেরী পাঠানো হয়েছিল এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে এবং বিদেশে তাঁদের চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করেন। সংযুক্ত যুগলদের পৃথক করার এই অপারেশন করতে দেশি-বিদেশি শতাধিক শল্যবিদ এবং এ্যানেস্থেসিস্টের ৩৩ ঘন্টা সময় লেগেছে। যেখানে তাঁদের মস্তিস্কের খুলী এবং মগজ পৃথক করা হয়। সাড়ে ৩ বছর বয়েসি এই জমজ বোনেরা পরষ্পর যুক্তমস্তিস্ক নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তারা ভ্রুণতন্ত্রের জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিলো যা প্রতি ৫০ থেকে ৬০ লাখ শিশুর জন্মগ্রহনের ক্ষেত্রে একজনের হতে পারে। পাবনার চাটমোহর উপজেলার রফিকুল ইসলামের কন্যা এই দুজন। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, জাতীয় হৃদরোগ ফাউন্ডেশন, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাপাতাল এবং হাঙ্গেরীর বিশেষজ্ঞগণ এই জটিলতর অস্ত্রোপচারে অংশগ্রহণ করেন। সশস্র বাহিনী মেডিকেল সার্ভিস বিভাগের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. ফশিউর রহমান, কনসালটেন্ট সার্জন জেনারেল অব ডিজিএমএস মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান, ডা. হাবিবে মিল্লাত এমপি, হাঙ্গেরীয় মেডিকেল দলের প্রধান ডা. সিসাপদী এবং সদস্য ডা. সিসোকি এবং পাতাকি এবং অন্যান্য চিকিৎসকবৃন্দ এই অস্ত্রোপচারে অন্যান্যের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন।