রাজনীতিজীবীরাই আওয়ামীলীগের ঘরের শত্রু বিভীষণ

0
779

দীপক রায়

গ্রামবাংলায় একটি প্রচলিত প্রবাদ রয়েছে, সেটি হলো ‘চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী’। অর্থাৎ চোরা যদি ধর্মের কাহিনী শোনে তাহলে সে আর চুরি করতে পারে না। আর তাই বেদ বাক্য বা ধর্মের বিধি বিধানের মতই প্রতিটি দলকে সঠিকভাবে পরিচালিত করার জন্য রয়েছে কিছু নীতিমালা যা দলটির আদর্শকে ধরে রাখে। কিন্তু বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এমন হয়েছে যে দল যখন ক্ষমতায় আসে সে দলে তখন অন্য দল থেকে রাতারাতি কিছু রাজনীতিবিদের নামে রাজনীতিজীবীদের অনুপ্রবেশ ঘটে।

 

এই দলছুট নেতারা দল থেকে বেরিয়ে এসে যেমন তার দলের নীতি আদর্শকে জলাঞ্জলী দেয় তেমনি যে দলটি তাদের অনুপ্রবেশে স্বাগত জানায় তারাও সে দলটির নীতি আদর্শকে কবর দেয়। আসলে এসব দলছুট নেতারা দলবদল করে তাদের ফয়দা লোটার জন্য। ওসব দল, নীতি, আদর্শ এসব কিছুর মূল্য ওদের কাছে একেবারেই নেই। গিরগিটির রঙ বদলাতে একটু সময় লাগলেও এদের কথার ধরণ বদলে যায় সাথে সাথেই। ওদের দলপ্রীতির কথা শুনে দলের বহু পুরাতন ত্যাগী নেতাদের হার্টবিট বেড়ে যায় অনেক সময়। ওরা একসময় দলের মধ্যে বড় জায়গা করে নেয় এবং স্বার্থসিদ্ধির জন্য পুরানো ত্যাগী আদর্শবান নেতাদের দল থেকে তাড়াবার ফন্দি করে। এমন পরিস্থিতির বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আছে বর্তমানের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে এখানে জায়গা করে নিয়েছে অনেক অনুপ্রবেশকারী আবার তাদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে দল ছেড়েছেন অনেক আদর্শ রাজনীতিবীদ। দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা অনুপ্রবেশকারিরা ঘুন পোকার মত আস্তে আস্তে দলটির সর্বনাশ করে চলেছে। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরা যে ঘর সন্ধানী বিভিষনের ভূমিকায় অবতীর্ন হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? ইতোমধ্যে এরা দলটির আদর্শ ও নৈতীকতায় যথেষ্ট চিড় ধরিয়েছে তার প্রমান দিবালোকের মত পরিষ্কার হয়েছে দেশবাসির কাছে।

৭১-এর মুক্তি যুদ্ধে যার নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের বড় স্বপ্ন ছিল, দীর্ঘদিন পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠির নিপিড়ন নির্যাতনের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করেছি এবার যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাকে সোনার বালায় রূপান্তরিত করব। কিন্ত ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট রাতে স্বাধীন বাংলাদেশে ছদ্মবেশে লুকিয়ে থাকা পাকিস্তানি দোসর কতিপয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাতে জাতির পিতা স্ব-পরিবারে নিহত হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মৃত্যুর সাথে সাথে আওয়ামীলীগ অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। তখন বিদেশে অবস্থানরত দৈবাত বেঁচে যাওয়া শেখ মুজিবের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা দলের হাল ধরেন।

 

তারপর দীর্ঘ রক্তক্ষয়ি আন্দোলন সংগ্রামের পর আওয়ামীলীগ এখন বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসেন। পিতার স্বপ্ন ‘সোনার বাংলা’ গড়ার জন্য দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। তাঁর দূরদর্শী চিন্তা এবং নতুন নতুন পরিকল্পনা দেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তাঁর সময়ে বিস্ময়কর অর্থনৈতিক উন্নয়ন শুধু এশিয়ার বেশ কিছু দেশকে নয় ইউরোপের অনেক দেশকে হারমানাতে চলেছে বিষয়টি বিশ্ব ব্যাংক এবং জাতিসংঘ এখন স্বীকার করেন। তারা শুধু একটি কথাই বলেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশটি আরও উন্নতি হত যদি দেশটিতে দুর্নীতির বিশাল পাহাড় তৈরী না হতো। বহুজনের মতে, শুধু দুর্নীতি নয়, ক্ষমতার অপব্যবহার, সন্ত্রাস, স্বজনপ্রীতি, অনাচার দেশটির উন্নয়নে বাধা হয়ে রয়েছে। আর এর অধিকাংশের সাথে জড়িত রয়েছে আওয়ামীলীগের ভিতরে থাকা স্বেচ্ছাচারী নেতা, এমপি ও মন্ত্রীরা। এরা কারা? একটু ইতিহাস ঘুটলেই দেখা যাবে এরা দলছুট নেতা, স্বার্থসিদ্ধীর জন্য আজ আওয়ামীলীগের সাথে মিশে আছে আগামীতে নতুন সুযোগ এলে এরা হয়ত অন্য কোনো দলে চলে যাবে। আগে যে কথা বলেছিলাম, এরা জনগণের কল্যানে কাজ করে না এরা নিজেদের জীবন জীবিকার জন্য রাজনীতি করে তাই এরা রাজনীতিজীবী।

 

দেশে যেন কোনো মানুষ না খেয়ে মরে তাই ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য সরকার ভিজিডি, ভিজিএফ, বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বয়স্কভাতা, চল্লিশ দিনের কাজসহ ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে বিভিন্ন সেফটিনেট সহায়তা চালু করেছেন যা পৃথিবীর অনেক দেশ কল্পনা করতেও পারে না। আওয়ামীলীগ নামধারী অনেক চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা এসব সাপোর্ট দিতে গিয়ে দুর্নীতি করেছেন। পত্রিকায় পড়েছি আওয়ামীলীগের এক চেয়ারম্যান তার নিকট আত্মীয়ের নামে এসব কার্ড দিয়েছেন। এলাকার উন্নয়নের জন্য সরকারের টিআর, কাবিখা, কাবিটা প্রকল্প চালু রয়েছে। সরাসরি এমপিদের মাধ্যমে কাজগুলো হয়ে থাকে সেখানে কাজ বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কাজগুলি দেখভাল করেন। এসব কাজে দুর্নীতির সাথে আওয়ামীলীগের অনেক নেতা, ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও এমপিরা জড়িত যা অনেক সময়ে গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে দেশবাসি জেনেছে। এদের দুর্নীতি আওয়ামীলীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে? এরা সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট করছে। অনেকের প্রশ্ন কেন শেখ হাসিনা এদেরকে এখনও দলে এবং পদে রেখেছেন কেন এদেরকে দল থেকে বিতাড়িত করছেন না?

একদিকে শেখ হাসিনা যখন সোনার বাংলা গড়ার দৃড় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন, দেশ বিদেশে তাঁর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ছে ঠিক তখন আওয়ামী লীগনামধারী কিছু মন্ত্রী, এমপি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দলের মুখে কালিমা লেপন করার কাজে ব্যস্ত রয়েছে। এরা দল করে অথচ দলের আদর্শকে মানে না। হাই কমান্ডের নির্দেশ মানে না। এই ঘরশত্রু বিভীষণদের তালিকা প্রস্তুতির জন্য আওয়ামীলীগের নিতীনির্ধারনী পর্যায়ের নেতাদের দিয়ে তদন্ত কমিটির দল তৈরী করতে হবে। অনুপ্রবেশকারীদের বেছে বের করতে হবে। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এসব দূর্নীতিবাজ মন্ত্রী এবং এমপিরা যাতে দলীয় মনোনয়ন না পায় আবার কোনো ত্যাগী এবং জনপ্রিয় নেতা দলীয় নমিনেশন থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

 

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সরকার দেশের যে অভাবনীয় উন্নয়ন করেছে তা দেশের মানুষ কখনও ভূলে যাবে না। তারা হয়ত আবারও আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় আনার জন্য সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকাকেই বেছে নেবে। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগকে সতর্ক হতে হবে, তাদের দলে অনুপ্রবেশকারী রাজনীতিজীবি ও ঘরসন্ধানী বিভীষণদের বিষয়ে।

লেখক : যুগান্তরের দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি।