‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পৃথিবীর সব নারীদের সিনেমা

0
597

খুলনাটাইমস বিনোদন: ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হলো রুবাইয়াত হোসেনের তৃতীয় ছবি ‘মেড ইন বাংলাদেশ’-এর। গত ৬ সেপ্টেম্বর বিশ্বের অন্যতম দাপুটে চলচ্চিত্র উৎসব ‘টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’-এ প্রথমবারের মতো দেখানো হয় ছবিটি। একই উৎসবে এখন পর্যন্ত ছবিটির মোট চারটি প্রদর্শনী হয়েছে। যার শেষ প্রদর্শনী ১৪ সেপ্টেম্বর। ‘হাই অন ফিল্মস’ এর লেখক হওয়ার সুবাদে বাংলাদেশে বসে ফিল্মটি প্রিমিয়ারের পূর্বেই দেখার সুযোগ পেয়েছেন চলচ্চিত্র সমালোচক বিদিতা জামান। টরেন্টোতে প্রিমিয়ারের পর ছবিটি নিয়ে একটি রিভিউ প্রকাশ করেন এই লেখিকা। রিভিউতে ছবিটি নিয়ে বিদিতা জামান বলেন, ফিল্মের প্লট নারীকেন্দ্রিক হলেও ফিল্মটি নারী-পুরুষ সবার দেখা খুবই প্রয়োজন। বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টর নিয়ে এত বাস্তববাদী সিনেমা এই প্রথমই বানানো হয়েছে। ক্যামেরার কাজ, প্রোডাকশন, স্কোর সবই এক কথায় দারুণ। ‘হাই অন ফিল্মস’ এ দেয়া রিভিউতে তিনি লিখেছেন, ২৩ বছরের এক বিবাহিতা মেয়ে তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের রেডিমেড গার্মেন্টস এ চাকরি করে। তার অত্যাচারী স্বামী কাজ খুঁজছে। জীবনধারণের জন্য অমানুষিক খাটনি করতে হয় মেয়েটির। কাজের জায়গাতেও নিপীড়িত মেয়েটি। ওভারটাইমের অর্থ পায়না, মৌখিক এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হতে হয়। কিন্তু অভাবের কারণে চাকরী ছাড়তে পারে না মেয়েটি। এই দূর্বিসহ জীবন মেনে নিতে হয় কারণ সে একজন নারী। রুবাইয়াত হোসেনের ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ছবির শিমুর চরিত্রটি ঠিক এমন। নিয়মিত প্রার্থনার পাশাপাশি নাচতে ভালোবাসে শিমু। সহকর্মীদের সঙ্গে ঝগড়াও করে। শিমু এবং তার বন্ধুদের মাধ্যমে নির্মাতা যুব সমাজের শক্তি দেখাতে চেয়েছেন। কর্মীদের অধিকার আদায়ের জন্য শিমুর ইউনিয়ন লিডার হতে চাওয়ার সংগ্রাম দেখানো হয়েছে। একদিকে মিডিয়ায় নারীকে পণ্য বানানো, অন্যদিকে ধর্মীয় গোঁড়ামি- দুটি দিকই দেখানো হয়েছে। এই ছবি নির্মাণের আগে রুবাইয়াত হোসেন তিন বছর রিসার্চ করেছেন। কিছু বাস্তব ঘটনার উপর নির্মাণ করা হয়েছে ছবিটি। ডালিয়া নামের এক নারীর জীবন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে জন্ম নিয়েছে ছবির মূল চরিত্র শিমু। ছবি নির্মাণের পুরো সময়টাতেই ডালিয়ার সম্পৃক্ততা ছিল। ছবিতে আছে অনেক রঙের খেলা। ছায়া এবং অন্ধকারের শহরেও দৃশ্য বুঝে দেখানো হয়েছে অনেক রঙ। রং এবং শব্দের খেলায় দর্শক ছবির সঙ্গে মিশে যাবে। ছবিতে নারীর প্রতি নারীর সমর্থন ও একতা দেখানো হয়েছে। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ শুধু বাংলাদেশের নারীদের জন্য নির্মিত হয়নি। শুধু নারী কর্মীদের জন্য নির্মাণ করা হয়নি। এটা পৃথিবীর সব নারীদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। মেড ইন বাংলাদেশ’ সম্পর্কে ওয়েব সাইটে প্রাপ্ত তথ্যমতে জানা যায়, ছবিটির দৈর্ঘ্য ৯১ মিনিট। এটি ফ্রান্স, পর্তুগাল, বাংলাদেশ ও ডেনমার্কের যৌথ-প্রযোজনায় নির্মিত একটি ছবি। ছবি নির্মাণের আগেই ‘মেড ইন বাংলাদেশ’-এর বিশ্ব পরিবেশকের দায়িত্ব নিয়েছিলো ফরাসি সেলস এজেন্ট ও পরিবেশক প্রতিষ্ঠান পিরামিড ফিল্ম। তখন রুবাইয়াত জানিয়েছিলেন, ফ্রান্সের স্থানীয় প্রেক্ষাগৃহেও ছবিটির পরিবেশনার দায়িত্ব পালন করবে এই প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৭ সালে লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসবের ওপেন ডোরস-এ অংশ নিয়ে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ চিত্রনাট্যের জন্য জিতে নিয়েছিলো আর্টে ইন্টারন্যাশনালের নগদ পুরস্কার। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’-এ মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিকিতা নন্দিনী শিমু, দীপান্বিতা মার্টিন, মায়াবী মায়া, নভেরা রহমান ও পারভীন পারু। এছাড়াও দেখা যাবে মুস্তাফা মনোয়ার, শতাব্দী ওয়াদুদ, জয়রাজ, মোমেনা চৌধুরী, ওয়াহিদা মল্লিক জলি ও সামিনা লুৎফা। দুটি অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিতা চৌধুরী ও ভারতের শাহানা গোস্বামী। চলতি বছরে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির কথা থাকলেও বিষয়টি এখনো চ‚ড়ান্ত নয়।