মংলা বন্দর প্রতিষ্ঠা দিবসের কেক কাটবেন রাষ্ট্রপতি : প্রস্তুতি সম্পন্ন

0
1206

মাহমুদ হাসান, মংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি:
মংলা বন্দরের ৬৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে মংলায় আসছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। বুধবার (৪ এপ্রিল ) তিনি মংলায় আসবেন। এদিন তিনি রাত ৮ টায় কেক কেটে বন্দর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর উদযাপন শুরু করবেন। এর আগে ৭ টা ৫০ মিনিটে বন্দর দিবসের আনুষ্ঠানিক ভাষন দিবেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর ফারুক হাসান এ তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে রাষ্ট্রপতি মংলা বন্দরে আগমন উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সকল রাস্তাঘাট ও বন্দরের সরকারী ভবন সমুহকে সাজিয়েছে নানা রকম আলোক সজ্জায় সজ্জিত করে। এছাড়াও বন্দরের জলযান সমুহকেও সাজানো হয়েছে। অন্যদিকে প্রসাশনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা। প্রস্তুত রাখা হয়েছে নৌবাহিনী, কোষ্টগার্ড, র‌্যাব, পুলিশসহ ও বন বিভাগের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।

চেয়ারম্যান আরো জানান, ১৯৫০ সালের ১১ ডিসেম্বর বন্দরটি বিদেশি একটি জাহাজ নোঙরের মাধ্যমে প্রথম এর নামকরন করা হয় চালনা বন্দর। কিন্তু সমুদ্রগামী জাহাজ নোঙরের ক্ষেত্রে মংলা অধিকতর সুবিধাজনক বিধায় ১৯৫৪ সালে বন্দরটি মংলায় স্থানান্তরিত করা হয়। মংলা বন্দর দীর্ঘদিন ধরে চালনা নামেই পরিচিত হতে থাকে। কিন্ত তৎকালীন বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার শেহালাবুনিয়া মৌজায় পশুর ও মংলা নদীর সঙ্গমস্থলে এই বন্দরের অবস্থান। পাকিস্তান আমলে মংলা বন্দরের প্রশাসনিক দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল একজন বাঙ্গালী পরিচালকের উপর। এর প্রধান কার্যালয় ছিল খুলনা শহরে। দিতীয় সমুদ্র বন্দর হলেও কখনও কখনও প্রায় ৫০/৬০টি সমুদ্রগামী জাহাজ মংলা বন্দরে নোঙর করতে দেখা গেছে। সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচলের উপযোগী এ বন্দরের প্রবেশ মুখ ও পশুর নদীর গভীরতা হারিয়ে ফেলায় পরবর্তী সময়ে, বিশেষ করে ১৯৮০ সাল থেকে বন্দরটি প্রায়ই বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে ছিল। এ বন্দরে রয়েছে ১১টি জেটি, পণ্য বোঝাই ও খালাসের জন্য ৭টি শেড এবং ৮টি ওয়্যারহাউজ। নদীর গভীরে রয়েছে ১২টি ঝুলন্ত বা ভাসমান নোঙর। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সাগর থেকে বন্দরে প্রবেশমুখ অর্থাৎ হিরন পয়েন্ট নামক স্থানে বিদেশী নাবিকদের জন্য একটি রেস্ট হাউজ নির্মাণ করেছে।

তিনি আরো জানান, পৃথিবীর প্রায় সব প্রধান বন্দরের সঙ্গেই মংলা বন্দরের বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। তবে প্রধানত এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার জাহাজগুলো এই বন্দরে নোঙর করে থাকে। সৃষ্টির পর থেকে এ বন্দরটি দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে। ইদানিং এ মংলা বন্দরকে ঘিরে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। ভারত ও নেপালের সাথে সরকারের চুক্তির ফলে এ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভারত, নেপাল, ভূটানকে মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এটি একটি বৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিনত হবে। এ বিষয়কে সামনে রেখে বন্দরের আধুনিকায়নের জন্য উন্ন্যয়নের সকল কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। পদ্মাসেতুর কাজ শেষ হলে রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ সহজ হবে এবং এ বন্দরের কার্যক্রম আরো বেড়ে যাবে। এছাড়া বন্দরকে ঘিরে এর চারপাশে বহু শিল্প ও বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপিত হওয়ায় অনেক নতুন কর্ম উদ্যোগ ও চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এ অঞ্চলের মানুষের। সম্ভাবনাময় এ মংলা বন্দরকে গতিশিল করার জন্য এ অঞ্চলের মানুষ নিরালস ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ বন্দরকে গতিশীল করার লক্ষে বিপুলসংখ্যক স্থানীয় লোক মংলা বন্দরে মালামাল বোঝাই ও খালাসের কাজে সরাসরি নিয়োজিত রয়েছে। তাই বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আরো উৎসাহি করার জন্য এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের পাশাপাশি ডিজিটাল পদ্ধতিতে দুটি প্রকল্পের উদ্ধোধন ও আরো দুটি প্রকল্পের ভিত্তি বসাবেন।
তিনি জানান, পাপলিক প্রাইভেট পার্টানারশিপ (পিপিপি) এর আওতায় ফিনল্যান্ড থেকে ক্রয় করা বন্দরে তেল অপসারনকারী জাহাজ পশুর-১, পশুর নদী থেকে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পের ছয় কিলোমিটার ড্রেজিং প্রকল্পের উদ্ধোধন এবং বন্দরের ৩ ও ৪ নং জেটি নির্মান কাজের ভিত্তি বসাবেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। পরে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ রাত ৮ টা ১০ মিনিটে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন। পরদিন বৃহস্পতিবার তার সুন্দরবন ভ্রমনের কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য ১ ডিসেম্বর বন্দর প্রতিষ্ঠা দিবস পালিত হলেও রাষ্ট্রপতির আগমন উপলক্ষে তা পিছিয়ে ৪ এপ্রিলে আনা হয়েছে বলে জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। # #