ভয়াবহ আগুনে ভস্মীভূত ফেরিঘাটের অস্থায়ী শীতবস্ত্র মার্কেট : নিঃস্ব হকারেরা

0
734

মারুফ গাজী:
নগরীতে অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা শীতবস্ত্র মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে সব হারিয়ে নি:স্ব হকারেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৬ টার দিকে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি ঘটে। প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে বস্ত্র ব্যবসায়ীরা জানান। পাশপাশি কোন বিশেষ মহল স্বেচ্ছায় অগ্নিকান্ড ঘটিয়েছে আশংকা তাদের। ঘটনার পর পরই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে আসেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক, সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আব্দুল গফফার বিশ্বাস ও বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
সূত্রমতে, নগরীর ফেরিঘাট মোড় বাস স্ট্যান্ডের পার্শ্বে অস্থায়ীভাবে গড়ে উঠেছে ৩৪টি কাপড়ের দোকান। মঙ্গলবারের অগ্নিকান্ডে সবকটি দোকানের রক্ষিত শীতবস্ত্র ভস্মীভূত হয়ে গেছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী ২টি চায়ের দোকান অগ্নিকান্ডে অস্তিত্বহীন। ফুটপাত উচ্ছেদ অভিযানের পর বিগত কয়েক বছর ধরে তারা অত্রস্থানে দোকান বসিয়ে ব্যবসা করে আসছিল। ব্যবসায়ীদের ভাষ্যানুযায়ী, ইচ্ছাকৃত ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাদের এ ক্ষতি করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে মো: জাহিদুর রহমান বলেন, আমাদের এ মার্কেটে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয় বিকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত। এছাড়া অন্যান্য সময়ে মার্কেটে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকে না। বিদ্যুতের সর্ট সার্কিট থেকে ভোর বেলা এখানে আগুন লাগার সম্ভাবনা নেই। রাতে আমরা দোকান বন্ধ করে প্রত্যেকে বাসায় চলে যাই। এখানে আমাদের কোন কর্মচারী বা মালিক রাত্রিযাপন করেন না।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানা যায়, ব্যবসায়ীদের সংসার সম্পূর্ণ নির্ভর এর উপর, এমনটাই আহাজারী ক্ষতিগ্রস্থদের। এমনকি এ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীদের সবাই বিভিন্ন এনজিও সমিতি থেকে ঋণের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। আগুনে সবকিছু পুড়ে যাবার পর এখন তারা সর্বস্বান্ত। অত্রস্থানে কাপড় ব্যবসায়ীদের একজন মো: রনি। তার দোকানের ২ লাখ টাকারও বেশি ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন সমিতি থেকে তিনি প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করে দোকানে মালামাল তুলেছিলেন। একই স্থানের সব চেয়ে বড় কাপড়ের দোকানের মালিক অপর এক ব্যবসায়ী মো: মাছুম খাঁন বলেন, আমরা তিন ভাই মিলে এ দোকান পরিচালনা করে আসছিলাম। আমাদের দোকানের প্রায় ৫লক্ষাধিক টাকার শীতবস্ত্র পুড়ে বিলীন হয়ে গেছে। ভিন্ন ভিন্ন ৪টা সমিতি থেকে এ ব্যবসার জন্য আমাদের প্রায় ৬লক্ষ টাকা ঋণ করা আছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওই স্থানে থাকা কাপড়ের দোকানগুলোতে মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। তখন আসেপাশে থাকা দোকান মালিকরা দৃশ্যপটে ছুটে আসেন। ভয়াবহ আগুনের কাছে নিরূপায় তাদের সামনেই সবকিছু দাবানলে রুপ নেয়। অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক ইকবাল বাহার বুলবুল এর নেতৃত্বে খুলনা সদর, দৌলতপুর ও টুটপাড়া স্টেশন থেকে মোট আটটি ইউনিট আঁধা ঘন্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণ আনতে সক্ষম হয়। ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, বিপুল পরিমান আর্থিক ক্ষতি হলেও এতে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক ইকবাল বাহার বুলবুল এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মার্কেটে আগুন লাগার খবর জানতে পেরে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যাই, সম্পূর্ণ মার্কেটজুড়ে তখন আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল। অত:পর আমাদের চেষ্টায় খ্বু দ্রুত সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। আগুন লাগার ব্যাপারে সঠিক কোন কারন এখনো উদঘাটন হয়নি। তবে তিনি বলেন, সর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার সম্ভাবনা নেই, মার্কেটে রাত ১২টার পর বিদ্যুৎ সংযোগ থাকে না। ধারণা করা হচ্ছে, যে কোন শত্রুমহল কতৃক এমনটা ঘটতে পারে। তবে, সুষ্ঠ তদন্তের পর আসল রহস্য উদঘাটন হতে পারে মুঠোফনে এমনটাই জানান তিনি।