ভোট দিন, সমৃদ্ধি আর উন্নত জীবন দিব : শেখ হাসিনা

0
1058

খুলনা টাইমস ডেস্ক : উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে তরুণসহ সব দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নিজের শ্বশুরবাড়ির এলাকা পীরগঞ্জে নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারুণ্যের কাছে ভোট চাই, মা-বোনদের কাছে ভোট চাই, বয়ঃবৃদ্ধ মুরুব্বি সবার কাছে ভোট চাই। আপনারা ভোট দিন, আমরা উন্নয়ন দিব, সমৃদ্ধি দিব, সুন্দর জীবন দিব, উন্নত জীবন দিব। দোয়া করবেন, যেন ভালোভাবে কাজ করতে পারি।
পীরগঞ্জ উপজেলায় নিয়ে গঠিত রংপুর-৬ আসনে আগে নির্বাচন করতেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের বিজয়ের পর শেখ হাসিনা এই আসন ছেড়ে দিলে সেখানে নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার হন শিরীন শারমিন চৌধুরী। তার সমর্থনে পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে, নৌকার বিজয় হবেই।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে যারা ধানের শীষ করে… বিএনপি-জামায়াত জোট… একাত্তর সালে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যা চালিয়েছে, আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে সেই বিএনপি জামায়াত… বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে, গ্রাম পুড়িয়েছে, রাস্তাঘাট কেটে দিয়েছে, গাছ কেটেছে, আপনারা তাদের কথা একবার চিন্তা করুন।
যারা মানুষের গায়ে আগুন দিয়ে পোড়ায়, ওরা মানুষ না, ওরা দানব। ওদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। আজকে যারা ধানের শীষ নিয়ে আসছে, মানুষ পোড়ার গন্ধ তাদের গায়ে। তাদের থেকে সাবধান থাকবেন।
খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের সমালোচনায় শেখ হাসিনা বলেন, তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া চুরি করে আজকে জেলে আছেন। আর তার ছেলে টাকা পাচার করেছে, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলায় সাজাপ্রাপ্ত, এতিমের টাকা মেরে খেয়েছে- যারা একাধিক সাজাপ্রাপ্ত- এরা দেশের কী উন্নয়ন করবে? এরা দেশের কী কল্যাণ করবে? কাজেই এদের থেকে দেশবাসীকে সাবধান থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে মানুষের উন্নতি হয়, তার যথেষ্ট উদাহরণ আপনারা দেখেছেন। আমরা যুব সমাজের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। কারো কাছে চাকরি চাইতে হবে না, নিজেরা চাকরি দিতে পারবে, সে ব্যবস্থা আমরা করেছি। আমরা তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাব।
সবার কাছে দোয়া চেয়ে তিনি বলেন, আপনাদের কাছে দোয়া চাই, আপনারা দোয়া করবেন, যেন দেশের মানুষের কল্যাণ পারতে পারি। বাংলাদেশ হবে দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত সোনার বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশ জাতির পিতা শেখ মুজিব চেয়েছিলেন। সেই বাংলাদেশ আমরা করে দিব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে প্রত্যেক ঘরে ঘরে আলো, যার জন্য আমাদের ছেলে-মেয়েরা কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। সারা পীরগঞ্জে শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়ে দিয়েছি। সারা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমরা দিচ্ছি। ইনশাআল্লাহ ২০২১ সালের মধ্যে দেশের কোনো ঘর অন্ধকার থাকবে না, সব ঘর আলোকিত হবে।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ‘অবহেলিত’ রংপুরের উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছিল বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আপনারা একটা কথা চিন্তা করুন, ১০ বছর আগে কোথায় ছিলেন, আর আজকে কত উন্নয়ন হয়েছে। আজ প্রত্যেকটা মানুষের উপার্জন বেড়েছে। আমরা ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি। ছেলে-মেয়েরা সেখানে বসে কাজ করছে।
১০ বছর আগে রংপুর এলাকার মানুষ খাবারের জন্য হাত পাততো মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, তখন থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম, যদি ক্ষমতায় আসি, এই রংপুর থেকে মঙ্গা দূর করব। প্রতিটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করব।
৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে মঙ্গা দূর করেছিলাম। কিন্তু ওই বিএনপি-জামায়াত জোট, লুটেরার দল, খুনির দল, আগুন পুড়িয়ে মানুষ মারে… তারা ক্ষমতায় এসে আবার সেই মঙ্গা শুরু করেছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা জয়ী হই, ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি, তখন থেকে এই ২০১৮ পর্যন্ত এই ১০টা বছর রংপুরে কোনো মঙ্গা নাই। মঙ্গা আমরা দূর করে দিয়েছি। আর জীবনে কখনো এখানে মঙ্গা-দুর্ভিক্ষ ইনশাআল্লাহ হবে না।
রংপুর-৬ আসনের প্রার্থী শিরীন শারমিন ছাড়াও রংপুর-৪ আসনের প্রার্থী টিপু মুন্সি ও রংপুর-৫ আসনের এইচ এন আশিকুর রহমানকে জনসভার মঞ্চে পরিচয় করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। পীরগঞ্জে শেখ হাসিনার নির্বাচনী জনসভায় নৌকার পক্ষে ভোট চান চিত্রনায়ক ফেরদৌস, নায়িকা পূর্ণিমা ও অভিনেত্রী তারিন জাহান।
উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আজিজুর রহমান রাঙ্গার সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বক্তব্য দেন। উত্তর জনপদে ভোটের প্রচারে অংশ নিতে রোববার সকালে ঢাকা থেকে আকাশ পথে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে পৌঁছান শেখ হাসিনা। সেখান থেকে সড়ক পথে তিনি যান রংপুরের তারাগঞ্জে। সেখানে রংপুর-২ আসনে নৌকার প্রার্থী ডিউক চৌধুরীর পথসভায় বক্তব্য দেন তিনি। এরপর পীরগঞ্জে ফতেহপুরে শ্বশুরবাড়িতে যান শেখ হাসিনা। স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত করেন তিনি।
এরপর শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের সঙ্গে সময় কাটিয়ে এবং দুপুরের খাবার খেয়ে পীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। সেখান থেকে সড়কপথে দিনাজপুরে ভোটের প্রচারে যান শেখ হাসিনা। দিনাজপুরে কয়েকটি আসনে নির্বাচনী সভায় বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে তার।
পীরগঞ্জে শেখ হাসিনার নির্বাচনী জনসভায় এসে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন বিএনপি থেকে সম্প্রতি আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া নূর মোহাম্মদ মণ্ডল। পীরগঞ্জের ‘অভূতপূর্ব’ উন্নয়নে শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে থেকেও আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার কথা জানান তিনি।
বক্তব্যে বর্তমানে পীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মণ্ডল বলেন, পীরগঞ্জে দৃশ্যমান সব প্রকল্প চলছে। আমাদের কাজ চালু রাখার জন্য সবাইকে সহযোগিতা করাই শ্রেয়। উন্নয়নের ধারার সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য আমি শেখ হাসিনার কথায় আওয়ামী লীগ যোগ দিয়েছি।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখন শুধু নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতাই বাকি আছে। এখন উৎসবের আমেজ। কোনো হৈ-হল্লা নাই। ৩০ তারিখে বিজয়ের পর আমরা গণভবনে দাওয়াত খেতে যাব।
রংপুরের পীরগঞ্জ আসনে ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে শেখ হাসিনাকে হারিয়ে দিয়েছিলেন নূর মোহাম্মদ মণ্ডল। এরপর ২০০৮ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচন করে শেখ হাসিনার কাছে হেরে যান তিনি। গত নভেম্বর মাসে শেখ হাসিনার হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন মণ্ডল। তাকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ঘরের মানুষ ঘরেই ফিরে এসেছে। আমি তাকে স্বাগত জানাই।