ব্যাংকের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে ‘অর্থনৈতিক যুদ্ধ’ হিসেবে দেখবে রাশিয়া

0
448

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

শুক্রবার মস্কো ওয়াশিংটনকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, কোনও রুশ ব্যাংকের ওপর যদি নিষেধাজ্ঞা জারি হয় তাহলে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ‘অর্থনৈতিক যুদ্ধ শুরুর ঘোষণা’ হিসেবে দেখবে রাশিয়া এবং সেই অনুযায়ী পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। বার্তাসংস্থা রয়টার্স লিখেছে, যুক্তরাজ্যে সাবেক পক্ষত্যাগী সাবেক রুশ গুপ্তচরকে রাসায়নিক প্রয়োগে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তবে সেখানেই থামার লক্ষণ নেই যুক্তরাষ্ট্রের। মার্কিন কংগ্রেস রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নতুন নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব তৈরি করেছে যাতে রুশ ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবের পাশাপাশি তাদের ডলার ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবও রয়েছে। সংশ্লিষ্ট একজন মার্কিন আইনপ্রণেতা প্রস্তাবিত নিষেধাজ্ঞাগুলোকে ‘দোজখ বানিয়ে ছেড়ে দেবে এমন নিষেধাজ্ঞা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন! রুশ প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ গত জুলাইতে ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে পুতিন ট্রাম্পের বৈঠকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন সে দেশে রাজনীতিবিদরা। ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, রাশিয়া বন্ধু রাষ্ট্র নয়। আর অন্যদিকে রিপাবলিকান সিনেটররাও ট্রাম্পকে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ওই সময় বেশ কয়েকজন রুশ হ্যাকারকে ২০১৬ সালের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগে দায়ী করেছিল মার্কিন আইনমন্ত্রী। তারপরও ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। রয়টার্স লিখেছে, মার্কিন আইন প্রণেতারা রাশিয়ার বিষয়ে ট্রাম্পকে খুবই নমনীয় বলে মনে করছেন। এদিকে আগামী নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে তাই চাপ বাড়ছে ট্রাম্পের ওপর। সমালোচকদের জবাব দিতে গত বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই নিষেধাজ্ঞার পর এবার কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান সিনেটররা মিলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা জারির পরিকল্পনা করেছেন। এ প্রক্রিয়ায় জড়িত একজন সিনেটর নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলোকে ‘দোজখ বানিয়ে ছেড়ে দেবে এমন নিষেধাজ্ঞা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। প্রস্তাবের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে কার্যক্রম চালানো রুশ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একাধিক ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও তাদের ডলার ব্যবহার করতে না দেওয়ার বিষয়ে ধারা যুক্ত করা হয়েছে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জেরে ইতোমধ্যেই রুশ মুদ্রা রুবলের ছয় শতাংশ দরপতন হয়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থার ওপরও খারাপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ রুশ ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়িত হলে তাকে ‘অর্থনৈতিক যুদ্ধ শুরুর ঘোষণা’ হিসেবে দেখার হুমকি দিয়েছেন। মেদভেদেভের ভাষ্য, ‘আমি একটা কথাই বলতে পারি: ব্যাংকের কার্যক্রমে বা বিদেশি কোনও মুদ্রা ব্যবহারের ওপর যদি নিষেধাজ্ঞা আসে তাহলে তাকে আমরা অর্থনৈতিক যুদ্ধের ঘোষণা হিসেবেই ধরে নেব। আর সে যুদ্ধে পাল্টা জবাব দেওয়াটাও দরকারি হয়ে পড়বে। এজন্য অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কৌশলের পাশাপাশি বা অন্য কৌশলও গ্রহণ করতে পারি আমরা। আমাদের মার্কিন বন্ধুদের এ বিষয়টি বোঝা উচিত।’

নিকোনোভ একজন পুতিনপন্থি রুশ সংসদ সদস্য। ২০১৬ সালে ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়ার খবর জানিয়ে তিনি রুশ সংসদকে তালি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেই নিকোনোভ এবার টুটারে লিখেছেন, ‘আমাদের উচিত আমাদের প্রতিপক্ষের ওপর থেকে নির্ভরতা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা। শুধু একই মাত্রার পাল্টা পদক্ষেপ নিলেই হবে না; প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার কথাও ভাবতে হবে। আমাদের এখনই ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং তা হতে হবে খুব কড়া।’

এ বছর রাশিয়ার প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি ১.৮ শতাংশ। কিন্তু যদি কংগ্রেস ও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব করা নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়, তাহলে রুশ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি শূন্যতে ঠেকার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।