বিশ্ব ভালবাসা দিবসে সুন্দরবনকেও ভালবাসার অঙ্গীকার করুন

0
710

দীপক রায়
বসন্ত জাগ্রত দ্বারে তার সাথে বিশ্ব ভালবাসা দিবস। সারা পৃথিবী সেজেছে এক বর্ণিল সাঁজে। প্রিয়জনদের অনেক ঐতিহাসিক ভালোবাসার কাহিনী আজ আবার আমাদের স্মরণপটে ভেসে উঠবে। প্রিয়জনকে ভালোবাসা জানাবার আশায় গোটা পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ যেন আজকের দিনটির অপেক্ষায় থাকে। যে যার সখ ও সাধ্যমত প্রিয়জনকে উপহার দিয়ে থাকেন। যারা আজকের দিনে প্রিয়জন থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছেন তাদের উচাটন মন ঘরে আর রয়না। তাই টেলিফোন, মুঠোফোন মোবাইল, পার্সেলে উপহার পাঠানোর মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানাতে হচ্ছে।

জীবনের অনেকটাই দুঃখ তাই মানুষ একটু সুযোগ পেলেই খুশীতে মেতে উঠতে চায়। ভালোবাসাকে অনন্তে রূপ দিতে চায়। প্রিয় পাঠক আজকের ভালোসা দিবসে আরও একটি বিষয় যুক্ত করতে চাই সেটি হল, ভালোবাসা দিবসে সুন্দরবনকে ভালোবাসার আহবান জানাবো। একটু ভেবে দেখুন আমাদের চারপাশের এই পরিবেশ প্রকৃতি ঠিকঠাক মতো থাকলেই তো আমরা বেঁচে থাকব আর আমরা বেঁচে থাকলে আমাদের অনেক কিছুই বাঁচবে। একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, যে সুন্দরবন সমুদ্র তীরে দাঁড়িয়ে দেওয়ালের মত আমাদের বড় বড় ঝড়ঝঞ্জা থেকে রক্ষা করছে। অক্সিজেন দিয়ে, জলবায়ু পরিবর্তনের খারাপ প্রভাব থেকে মুক্ত করে আমাদের রক্ষা করছে। কোটি কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। খাদ্য জ্বালানী দিয়ে আমাদের জীবনকে আরও সুখময় করে তুলছে তাই তাকে বাঁচিয়ে রাখতে ভালোবাসতে আমাদের অসুবিধা কোথায়? মা যেমন আঁচল দিয়ে তাঁর সন্তানকে রক্ষা করে সুন্দরবনও তেমনি আমাদেরকে রক্ষা করে চলেছে। কিন্তু এই আমরা বুঝে না বুঝে প্রতিনিয়ত সুন্দরবনকে ধ্বংস করে চলেছি। এমনটা চলতে থাকলে কয়েক দশকের মধ্যে হয়ত সুন্দরবন চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে।

গোটা পৃথিবীর তিনটি ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের মধ্যে সুন্দরবন তার উদ্ভীদ, জীবজন্তু ও সম্পদের জন্য খুবই বিখ্যাত। আর তাই ইউনেস্কো ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। জরিপ মোতাবেক ১০৬ বাঘ ও এক থেকে দেড় লাখ হরিণ রয়েছে সুন্দরবনে। ১৯০৩ সালে প্রকাশিত ঈস্খননের হিসেব মতে ২৪৫ শ্রেণি এবং ৩৩৪টি উদ্ভীদ রয়েছে সুন্দরবনে। জীববৈচিত্রের আধার সুন্দরবন, এখানে রয়েছে ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ি ৩৫ সরিসৃপ এবং ৮টি উভচর প্রাণির বসবাস এখানে। কিন্তু ভোগবিলাসী মানুষের করাল থাবা থেকে এ সুন্দরবনকে বাঁচাতে হবে এটা অত্যন্ত সময়ের দাবি। পরিবেশ প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে এখন গোটা প্রথিবীর মানুষের দাবি যে কোনো মূল্যে সুন্দরবনকে বাঁচাতে হবে। তাই আসুন আজকের দিনে আমরা অঙ্গীকার করি, মাতা-পিতা, সন্তান ও প্রিয়জনের সঙ্গে সুন্দরবনকেও ভালোবাসি এবং তা রক্ষা করি।

লেখক: উন্নয়নকর্মী ও দৈনিক যুগান্তরের সংবাদকর্মী