বসন্তের বাতাসে শোভা ছড়াচ্ছে স্বর্ণালি মুকুল

0
755

আজিজুর রহমান, খুলনাটাইমস :
শীত পেরিয়ে প্রকৃতিতে বসন্ত এসেছে সপ্তাহ দুয়েক হলো। এবার তীব্র শীতের শেষে এসেছে বসন্ত। গাছে গাছে ফুটেছে নানান রঙের ফুল। আমগাছের শাখাগুলো ভরা উজ্জ্বল সোনালি মুকুল যেন আকাশের বুকে ডানা মেলে দিয়েছে। দালানে ঠাসা এই স্বল্পবৃক্ষের খুলনা শহরে মুকুলে ছেয়ে যাওয়া আমগাছগুলো আলাদা শোভা ছড়িয়েছে। সবুজ পাতার কিনার ছাপিয়ে ওঠা মুকুলের সোনালি রেণু যেন ফুলশয্যা সাজিয়ে স্বাগত জানাচ্ছে বসন্তকে।

খুলনা নগরের হাজী মহাসিন রোড়ের পাশে বেসরকারি একটি কোচিং সেন্টারের সামনে আমের মুকুল শোভা ছড়াচ্ছে। কয়েকজন শিক্ষার্থী সেখানে দাঁড়িয়ে খোশগল্পে মেতেছিলেন। খুলনা সরকারি বিএল কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী বৈশায়ন বিশ্বাস বলেন, ‘বছরের এ সময়ের প্রকৃতি আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগে। নগরজুড়ে হরেক রকমের ফুল ফোটে। আমের মুকুল বাতাসে দোল খায়। দেখলেই যেনো মনটা ভালো হয়ে যায়।’

এসব মুকুল অনেকের মনে শৈশবের স্মৃতি নাড়া দেয়। নিয়ে যায় ছোটবেলার সেই হারানো দিনগুলোর কাছে। টুটপাড়া পুরাতন পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার পঞ্চাশোর্ধ্ব শেখ সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘ সাতক্ষীরায় আমার বাড়ি। ছোটবেলা থেকেই আমের সঙ্গে বড় হওয়া। ঝড়ঝাপটা হলে বন্ধুরা মিলে ব্যাগ হাতে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ছুটতাম আমবাগানে। এখন আর বাড়ি যাওয়া হয় না। আমের মুকুল দেখলে শৈশবের সেই স্মৃতিগুলো ফিরে আসে।’

শহর ঘুরে সবচেয়ে বেশি আমের মুকুল দেখা গেছে, নিরালা, শের-এ-বাংলা রোড, বি কে রায় রোড, নর্থ খাল ব্যাংক রোড, হাজি মহাসিন রোড়, খান জাহান আলী রোড, খালিশপুর ও দৌলতপুর এলাকার গাছগুলোতে। কোনো কোনো গাছে আমের মুকুল থেকে বেরিয়েছে ছোট ছোট আমগুটি। গুটি যতই বড় হচ্ছে ততই বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা ভালো ফলনের স্বপ্ন দেখছেন।

বাগান মলিকরা জানান, আমের ভালো ফলন এবং রং ঠিক রাখার জন্য এখন থেকে গাছের গোড়ায় পানি দিচ্ছেন। মুকুল থেকে গুটি হলে ভিটামিন রিপকট স্প্রে করা হবে। মুকুলে যাতে কোনো ছত্রাক জাতীয় রোগবালাই না হয়, এ জন্য কীটনাশক স্প্রে করে পরিচর্যা চালিয়ে যাচ্ছে তাঁরা। খালিশপুর এলাকার আমচাষি হিরন্ময় কুন্ডু বলেন, পুরাপুরি সকল গাছে মুকুল আসেনি। কয়েকদিনের মধ্যেই মুকুল আসবে।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন মুঠোফোনে খুলনাটাইমসকে জানান, খুলনাসহ ডুমুরিয়ার আবহাওয়া ও মাটি আম চাষের জন্য উপযোগী। এ বছর গাছে মুকুলের পরিমাণ বেশি। তাই এবার আমের বাম্পার ফলনের আশা করা যাচ্ছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং সময় মতো পরিচর্যা হলে চলতি মৌসুমে কৃষকরা আমের আশা অনুরূপ ফলন পাবে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলায় ছোট বড় মিলে প্রায় ১৫০ হেক্টর জমির আম বাগানে বিভিন্ন প্রকারের আম গাছ রয়েছে। তবে দিন দিন লাভের কারণে বাগান ও আমগাছ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে দাবি করেন এ কর্মকর্তা।

এছাড়া শহরের বাইরে পাইকগাছা, রূপসা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, কয়রা, ফুলতলা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলায় শোভা ছড়াচ্ছে আমের মুকুল। ফাগুনী হাওয়ায় সবুজ পাতার ফাঁকে গেলে দোল খাওয়া সোনাঝরা মুকুল মন ভালো করে দেয় নগরবাসীর। যা নগরের মানুষের মধ্যে বিলায় অন্য রকম আনন্দ।

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পঙ্কজ কান্তি মজুমদার খুলনাটাইমসকে বলেন, ‘এ বছর আম গাছে প্রচুর মুকুল এসেছে। প্রায় ৮০ শতাংশ আম গাছে মুকুল এসেছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সেগুলিতে মোটরদানার মতো আমের গুটি চলে আসবে। প্রত্যাশা করা হচ্ছে বাগান মালিক ও চাষিরা এবার লাভবান হবেন।’

তিনি জানান, যেহেতু শীত এবার দীর্ঘায়ূ হয়েছে, তাছাড়া কুয়াশা ও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি নেই। তাই ফলনও ভালো হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই আম বাগানের সংখ্যাও বাড়ছে। তবে গড়ে ওঠা নতুন আম বাগানগুলোর প্রায়ই বনেদি জাতের। বিশেষ করে নিয়মিত জাত আম্রপালি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, হিমসাগর, খিরসাপাত ও আশ্বিনা জাতেরই গাছ বেশি লাগানো হচ্ছে।