বঙ্গোপসাগরে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ভারতীয় জেলেরা মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে

0
435

শেখ মোহাম্মদ আলী, শরণখোলা:
বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় দেশীয় জেলেরা মাছ ধরতে না পারলেও ভারতীয় জেলেরা ট্রলিং ট্রলার নিয়ে সাগরের বয়া এলাকা থেকে পূর্বে কুয়াকাটা উপকুল, সোনারচর, ঢালচর পর্যন্ত দাপিয়ে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা । রবিবার বঙ্গোপসাগরে কোষ্টগার্ডের অভিযানে ৩২ ফিসিং বোট সহ ৫ শতাধিক ভারতীয় জেলে আটক হয়েছে। অপরদিকে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও কতিপয় জেলে ফিসিংবোট নিয়ে সাগরে মাছ ধরে রাতের আধারে ফিরে আসছে।
ফিসিংবোট এফবি খাইরুল ইসলামের মিস্ত্রি শরণখোলা উপজেলার পূর্ব খোন্তাকাটা গ্রামের মোঃ রফিক জানান, বরাবরের মত ভারতীয় ট্রলিং ট্রলার বঙ্গোপসাগরের বয়া এলাকা থেকে পূর্বে কুয়াকাটা উপকুল, সোনারচর, ঢালচর পর্যন্ত সাগরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তারা অবাধে ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট বড় মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি তিনি গত ২২ জুন সাগরের সোনারচর এলাকায় শতাধিক ভারতীয় ফিসিং বোটকে মাছ ধরতে দেখেছেন। ওই সময় তিনি তার বোটের মবিল ফুরিয়ে যাওয়ায় ভারতীয় একটি বোট থেকে কয়েক লিটার মবিল চেয়ে নেন বলে রফিক মিস্ত্রি জানান। বাংলাদেশ ফিসিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা চৌধুরী জানান, সাগরে বাংলাদেশ জলসীমায় অবৈধভাবে মাছ শিকার করা ভারতীয় জেলেদের নিত্যদিনের ঘটনা। ৬৫ দিনের অবরোধে আমাদের দেশীয় জেলেরা মাছ ধরতে না পারলেও ভারতীয়রা ঠিকই ধরে নিয়ে যাচ্ছে । যার জলজ্যান্ত প্রমাণ গত ৭ জুলাই পায়রা সমুদ্র বন্দরের অদুরে সাগরে মাছ ধরার সময় কোষ্টগার্ড ৩২ ফিসিং বোট সহ ৫ শতাধিক ভারতীয় জেলে আটকের ঘটনা। ঝড়ের কবলে পড়ে তারা এসেছে ভারতীয় জেলেদের এ দাবী তিনি নাকচ করে বলেন, তাই যদি হয় তা হলে তাদের নিদেন পক্ষে হিরণপয়েন্ট দুবলারচর আলোরকোল পর্যন্ত আসার কথা। শরণখোলা ফিসিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, আমাদের ছোট ছোট ইঞ্জিন চালিত নৌকা ট্রলারের জেলেরা সুন্দরবনের দুবলারচর এলাকায় মাছ ধরার সময় গত কয়েকদিনে সাগরের বয়া এলাকায় অসংখ্য ভারতীয় ফিসিং ট্রলারের জেলেদের মাছ ধরতে দেখেছেন । আবহাওয়া খারাপ হলে ভারতীয় জেলেরা হিরণপয়েন্টের অদুরে ছোট খালে আশ্রয় নিয়ে থাকে বলে আবুল হোসেন জানান। মৎস্য ও প্রানী সম্পদ মন্ত্রনালয় ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সাগরে সকল ধরনের মাছ ধরা বন্ধের প্রজ্ঞাপন জারি করায় শরণখোলাসহ উপকুলীয় এলাকার জেলে পল্লীগুলিতে হতাশার পাশাপাশি ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সরকারকে পুনঃ বিবেচনা করার দাবী জানিয়ে জেলে নেতৃবৃন্দের বক্তব্য ছিলো নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ভারতসহ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের জেলেরা বঙ্গোপসাগর থেকে সকল প্রকার মাছ ধরে নেয়ার আশংকা রয়েছে।
দুবলা ফিসারমেন গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সাগরে অবরোধ দিয়ে লাভ কি দেশীয় জেলেরা মাছ ধরতে না পেরে না খেয়ে মরছে অথচ ভারতীয় জেলেরা অবাধে আমাদের মৎস্য সম্পদ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। ৭ জুলাই পায়রা বন্দরের অদুরে সাগরে কোষ্টগার্ডের অভিযানের সময় অসংখ্য ভারতীয় ফিসিং ট্রলিং বোট পালিয়ে যেতে পারলেও ৩২ টি বোট ধরা পড়ে যায়। তিনি দুবলারচরে ফিসারমেন গ্রুপের মাছের গদি পাহারায় থাকা দুজন কর্মীর বরাত দিয়ে আরো বলেন, তার লোকেরা সাগরে গত কয়েকদিনে অনেক ফিসিং বোট বিচরন করতে দেখেছেন ।
অপরদিকে শরণখোলা, পাথরঘাটাসহ অন্যান্য এলাকার অনেক ফিসিংবোট রাতের আধারে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মাছ শিকার করে শরণখোলা ও পাথরঘাটা মৎস্যঘাটে ফিরে এসে রাতের মধ্যেই মাছ ট্রাক বোঝাই করে খুলনা ও বরিশালের মোকামে চালান করছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করে চলেছেন। বিশেষ করে শরণখোলার মজিবর তালুকদার, বেলায়েত খান, ও আবুল হোসেনের ফিসিং বোট নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও চোরাইভাবে সাগরে মাছ ধরছে। নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে গত ৬ জুলাই রাঙ্গাবালীর কাছে সাগরে ৫/৬ টি ফিসিং বোট ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে গেছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যপারে শরণখোলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বলেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ ধরার খবর তার জানা নেই খোঁজ নিয়ে দেখবেন।