ফারহানা আক্তার রত্নাকে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় আটক স্বামী হাসিবুরের স্বীকারোক্তি,সাতক্ষীরায় পেনাল কোডের প্রেস ব্রিফিং

0
454

শেখ নাদীর শাহ্:::


তালা সদরের মোবারকপুরস্থ ভাড়া বাসায় অগ্নিদগ্ধ বিউটিশিয়ান ফাহানা আক্তার রত্না হত্যাকান্ডে তালা থানা পুলিশের হাতে আটক নিহতের স্বামী কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের খাস মথুরামপুরের আব্দুস সাত্তারের ছেলে হাসিবুর রহমান সবুজকে নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেছেন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার।

তালা থানার মামলা নং-১০, তারিখ-২৪/০২/২০২০খ্রিঃ, ধারা-৪৪৮/৩২৬/৩০৭/৪২৭/৩৪ পরবর্তীতে সংযোজিত ধারা-৩০২ পেনাল কোড সংক্রান্তে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মুস্তাফিজুর রহমান জানান,মামলায় সন্দিগ্ধ আসামী হিসেবে নিহতের স্বামী হাসিবুর রহমানকে গত ৭ মার্চ বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে তালা উপজেলার মোবারকপুর ভাড়া বাসার সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে হাসিবুর জানায়, সে মেরিকো বাংলাদেশ লিমিটেড এর একজন কর্মী। ২০১৯ সালের অক্টোবার মাসে পাইকগাছা মাহমুদকাটি মোড় সংলগ্ন ভাড়া বাসায় থাকা কালিন ভিকটিম ফারহানা আক্তার রত্নার সাথে তার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায় এবং ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে তারা বিয়ে করেন। ভিকটিম রত্নার এরআগে আরো দু’বার বিয়ে হয়েছিল। দ্বিতীয় স্বামী মোঃ মিজানুর রহমানের সাথে তার ১০/১২ বছরের দাম্পত্য জীবনে তাদের ৮ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।

উক্ত স্বামী মোঃ মিজানুর রহমানের সাথে রত্নার ৩/৪ টি মামলা চলমান আছে। রত্নার প্রায়ই বলত সে তার পিতার কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে তার পূর্বের স্বামী মিজানুর রহমানকে দিয়েছে, এখন সে ব্যবসা করিতেছে। ভিকটিম রত্না এর প্রতিশোধ নিবে। ভিকটিম প্রায়ই তার বর্তমান স্বামী মোঃ হাসিবুর রহমান সবুজকে পূর্বের স্বামী মোঃ মিজানুর রহমানের প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বলত। কখনো র‌্যাব দিয়ে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য আবার কখনো পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলিত। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় স্বামী/স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ, মনোমালিন্য সৃষ্টি হতো। ভিকটিম তার দ্বিতীয় স্বামী মোঃ মিজানুর রহমানের দোকান ঘর পুড়াইয়া দেওয়ার জন্য আসামী হাসিবুর রহমান সবুজকে বললে গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে হাসিবুর রহমান সবুজ জনৈক মোঃ কবির হোসেনের ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল যোগে তালা বাজার হতে ৩ লিটার পেট্রোল কিনে বাসায় নিয়ে আসে। তখন থেকেই ভিকটিম রত্না অস্থির হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে আসামী হাসিবুর রহমান সবুজ বাসার বাইরে চলে যায়। এরপর রাত ১ টার দিকে (২১/০২/২০২০) সবুজ বাসায় ফিরে আসে। এসময় রত্না অস্থির হয়ে সারা ঘর পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে দিতে চায়। এক পর্যায়ে ঘরে বোতল থেকে পেট্রোল নিয়ে ছিটাছিটি শুরু করে। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে বর্তমান স্বামী আসামী হাসিবুর রহমান সবুজ টেবিলের উপরে থাকা দিয়াশলাইয়ের কাটি দিয়া আগুন জ্বালিয়ে ছুড়ে মেরে ঘর থেকে বাইরে চলে যায়।

সঙ্গে সঙ্গে ফারহানা আক্তার রত্নার শরীরসহ ঘরের আসবাবপত্র আগুন ধরে গেলে সে টিউবওয়েলের নিকট ছুটে আসে। এসময় তার চিৎকারে লোকজন ছুটে এসে ভিকটিমকে উদ্ধার করে প্রথমে তালা সরকারী হাসপাতাল ও পরে পরিস্থিতি খারাপ হলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়। ঐ দিনই তাকে ঢাকা মেডিকেলে বার্ন ইউনিটে নিয়ে ভর্তি করে। ঢাকা মেডিকেল ১৩ তিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত ইং-৪ মার্চ ভিকটিম ফারহানা আক্তার রত্নার মৃত্যু হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামী হাসিবুর রহমান সবুজকে ৮ মার্চ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি গ্রহনের আবেদন জানাইয়া বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে আসামী হাসিবুর রহমান সবুজ নিজেকে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত কওে সাতক্ষীরা বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাকিবুল ইসলাম এর ৩য় আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।

এরআগে নিহত ফারহানা আক্তার রত্নার পিতা পাইকগাছা থানার কপিলমুনির মালত গ্রামের মৃত আব্বাস আলী সরদারের ছেলে মোঃ রোকন উদ্দীন সরদার (৫০) গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তালা থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করেন যে, তার মেয়ে ভিকটিম ফারহানা আক্তার রত্না (২৬), স্বামী মোঃ হাসিবুর রহমান সবুজসহ তালা থানার মোবারকপুর ব্রীজ মোড়ের বাবু সাধুর বাড়িতে নিচ তলায় ভাড়া থাকে। গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাত অনুমানিক দেড়টার দিকে বাদীর ফারহানা আক্তার রত্নার স্বামী হাসিবুর রহমান সবুজ ভাড়া বাসা হতে ব্রীজ মোড়ে দোকানে মশার কয়েল কিনতে যাওয়ার সুযোগে ওৎপেতে থাকা রত্নার পূর্বের স্বামী মোঃ মিজানুর রহমান শেখ (৩৫), পিতা-সোহরাব হোসেন শেখ, সাং-মালতিয়া (চারাবটতলা), থানা-ডুমুরিয়া, জেলা-খুলনা সহ ৪ জন শলা-পরামর্শ করে ফারহানা আক্তার রতœার বাসায় প্রবেশ করো হত্যার উদ্দেশ্যে তার গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে চলে যায়। এতে রত্নার সমস্ত শরীর পুড়ে মারাত্মক জখম ও আসবাবপত্র পুড়ে আনুমানিক ৮০হাজার টাকার ক্ষতি সাধন হয়। এঘটনায় তালা থানায় মামলা নং-১০। তারিখ-২৪/২/২০।