প্রার্থীদের হলফনামায় অসঙ্গতি গোঁজামিল

0
254

প্রার্থীদের দেওয়া হলফনামার তথ্য সঠিকভাবে যাচাই না হলে এগুলো সংগ্রহ করার মূল উদ্দেশ্য পূরণ হবে না। ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামায় নানা ধরনের অসঙ্গতি ও গোঁজামিল দেখা যাচ্ছে। অনেকেরই আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার তথ্য নেই। এসব কারণে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রচুর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যে দায়িত্ব পালন করার কথা তা করছেনা কেন? সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিধিমালার বিধি ১৩(৩) (ঙ) মোতাবেক হলফনামায় অসত্য তথ্য প্রদানের জন্য মনোনয়নপত্র বাতিল করা যায়। তা ছাড়া এ ধরনের অপরাধে দণ্ডবিধির ১৮১ ধারা অনুসারে অনূর্ধ্ব তিন বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হতে পারে। অস্পষ্ট বা অসম্পূর্ণ তথ্যের হলফনামা দিয়ে কিভাবে একজন প্রার্থী রিটার্নিং অফিসারের বাছাইয়ে বৈধ হতে পারে, তা আমাদের বোধগম্য নয়।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনেকের হলফনামায় নানা অসঙ্গতি রয়েছে বলে জানা যায়। কেউ কেউ সম্পূর্ণ তথ্য দেননি বা তথ্য গোপন করেছেন। আবার কারো তথ্য অসম্পূর্ণ। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে আয়কর রিটার্ন রসিদ জমা দেওয়া এবং তা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশের বিধান থাকলেও সেটা মানা হয়নি। এতে স্পষ্ট যে, নির্বাচন কমিশন দায়সারা গোছের দায়িত্ব পালন করেছে। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা অনুসারে এ নির্বাচনের প্রত্যেক প্রার্থীকে ব্যক্তিগত সাত ধরনের তথ্য নির্ধারিত ফরমে হলফনামার মাধ্যমে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হয়। আবার আপাতদৃষ্টিতে যেসব হলফনামায় পূর্ণ তথ্য রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেগুলো সঠিক কি না তা যাচাইয়েও নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগের কোনো দৃষ্টান্ত আমরা দেখিনা। ফলে যে উদ্দেশ্যে এই হলফনামা নেওয়ার বিধান তা পুরোপুরি সফল হতে পারছে না বলে সচেতন মহল মনে করছেন।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে দেখা যায়, কারো হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘরটি ফাঁকা। আবার কেউ হলফনামার বদলে দিয়েছেন আয়কর রিটার্ন। কারো হলফনামাটি এত অস্পষ্ট যে, তা থেকে সব তথ্য জানা সম্ভব নয়। কোনো কোনো প্রার্থী নির্ধারিত ফরমে হলফনামাই দেননি। হলফমানায় অতীতে মামলার তথ্য সম্পর্কে লিখেছেন ‘মনে নেই’। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও একাধিক প্রার্থী ব্যবসা বা পেশার বিবরণীর ঘর ফাঁকা রেখেছেন। আবার বেশ কয়েকজন প্রার্থীর হলফনামা যাচাই করে দেখা যায়, ওই সব প্রার্থীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কারণে একাধিক মামলা থাকলেও তা তারা গোপন করেছেন, ইত্যাদি।
আমরা জানি হলফনামায় কোনো প্রার্থী অস্পষ্ট বা অসম্পূর্ণ তথ্য দিলে রিটার্নিং অফিসারের বাছাইয়ে তার প্রার্থীতা বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। পরবর্তীতে বিষয়টি নজরে আসলে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। নিজেদের যথেষ্ট জনবল না থাকলেও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, যেমনÑ দুদক, এনবিআরের সহযোগিতা নিয়ে হলেও প্রার্থীরা সঠিক তথ্য দিচ্ছেন কি না, তা যাচাইয়ে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি।