প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা

0
403

করোনা মহামারীর ভয়ঙ্কর ছোবলও সম্ভবত কাবু করতে পারেনি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সারাদেশ একটানা ৬৬ দিন লকডাউনে থাকলেও সার্বিক জাতীয় অর্থনীতিতে তেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি বললেই চলে। এর কারণ অবশ্যই সরকারের সময়োচিত যথাযথ পদক্ষেপ, গরিব ও দরিদ্র মানুষের জন্য নগদ অর্থসহ ত্রাণ সহায়তা, সর্বোপরি এক লাখ কোটি টাকার বিবিধ প্রণোদনা প্যাকেজ। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে, দ্রব্যমূল্য রয়েছে নিয়ন্ত্রণে। এক্ষেত্রে বোরোর বাম্পার ফলনও যুক্ত করেছে বাড়তি মাত্রা। বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্বমন্দায় প্রেক্ষাপটে আগামীতেও ইতিবাচক অগ্রগতির পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি, আইএমএফ, ইকোনমিস্ট। দেশের সার্বিক উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি সম্পর্কে সরকার যে আত্মপ্রত্যয়ী ও দৃঢ়চিত্ত তারই প্রতিফলন ঘটতে যাচ্ছে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটেও। এতে জাতীয় প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ, যা এযাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। করোনা মহামারীর এই দুর্যোগেও টানা দশ বছর বাংলাদেশের এই প্রবৃদ্ধি বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবি রাখে অবশ্যই। এর জন্য প্রায় একক কৃতিত্বের দাবিদার নিঃসন্দেহে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বর্তমান সরকার দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা তথা স্বপ্ন নিয়ে অগ্রসর হতে আন্তরিক ও সদিচ্ছুক। বলা আবশ্যক যে, ইতোপূর্বের কোন সরকারের মধ্যেই উন্নয়নের এই স্বপ্ন তো দূরে থাক, এমনকি ধারাবাহিকতাও লক্ষ্য করা যায়নি। সরকারের সেই স্বপ্নের পর্যায়ক্রমিক ধাপগুলোর বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১-এর অনুমোদন দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের বৈঠকে। উল্লেখ্য, এর আগে সরকার রূপকল্প-২১ ঘোষণা করেছিল, যার সুফল দেশ ও জাতি পেতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে মানুষের মাথাপিছু আয় ও গড় আয়ু বেড়েছে। জাতীয় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ১৫-এর ওপরে। বিদ্যুত উৎপাদনে দেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। মুজিববর্ষে বাংলার ঘরে ঘরে আলো পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকার রয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, বঙ্গবন্ধু পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রসহ দশটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। সৌদি আরব, জাপানসহ বিদেশী বিনিয়োগ আসছে। দারিদ্র্য নেমে এসেছে বিশ শতাংশের নিচে। এরই ধারাবাহিকতায় নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির এই ধারাবাহিকতায় প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা- ২০২১-এর সাফল্যের পর সরকার এবার অগ্রসর হচ্ছে রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়ে।
গত অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৯০০ মার্কিন ডলার। হতদরিদ্র মানুষের হার কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৩ ভাগে। পরিকল্পনামন্ত্রীর মতে, যেভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তাতে ২০৩০ সালের আগেই দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোটায় নেমে আসতে পারে। এর মধ্যে বেড়েছে রফতানি আয় ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের অর্থ প্রেরণের পরিমাণ। কৃষি খাত তো বরাবরই সাবলীল ও ফলপ্রসূ ভূমিকা রেখে চলেছে। সর্বোপরি বেড়েছে বিনিয়োগ। করোনা সঙ্কটে শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আশাব্যঞ্জক গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি। গত কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রফতানি আয় ও রেমিটেন্স প্রবাহের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে জাতীয় প্রবৃদ্ধি আট দশমিক পাঁচ শতাংশ অতিক্রম করে ভাবল ডিজিট প্রবৃদ্ধি অর্জন করা অসম্ভব হবে না।