প্রথমে বন্ধুত্ব, বিয়ের প্রস্তাব, পরে সখ্যতা-সহবাস, অর্ধ কোটি লুট করে ছুঁড়ে ফেলা : চিত্র প্রতারকের

0
590

সুমন আশিক:
মোসা: সোনিয়া। প্রতারণার শিকার এক অসহায় নারীর নাম। ছলচাতুরী করে এক প্রতারক তার সর্বস্ব লুটে নিয়েছে। প্রায় অর্ধ কোটি টাকা, নিজের স্বভিমান, পরিবারের খ্যাতি সবই খুঁইয়েছেন সোনিয়া। আর দীর্ঘ সাত মাস ধরে নিজেকে বিলিয়েছেন ওই লম্পটের হাতে। সর্বপ্রথম বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়া, তারপর বিয়ের প্রস্তাবনা, তারপর ভূক্তভোগীর পরিবারের সাথে সখ্যতা, অত:পর সরলতার সুযোগ নিয়ে বারংবার সহবাস, অর্থ লুট করা এবং সর্বশেষ ছুঁড়ে ফেলা। এভাবেই খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা হাফিজনগরের বাসিন্দা রাজ্জাক হোসেনের কাছে সর্বস্ব হারিয়েছেন সোনিয়া।

সোনিয়ার ভাষ্যমতে, ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ সুন্দরবন ভ্রমণের মধ্য দিয়ে প্রথম সাক্ষাত হয় তার সাথে। তখন রাজ্জাক হোসেন নিজেকে বড় মায়াবী ও কেয়ারিং অনুভব করান। শুরু হয় বন্ধুত্ব। ১০ এপ্রিল আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় সে। পরিবারের কাছে প্রস্তাবটি দিতে বলি। ভেবেছিলাম পিছিয়ে যাবে, তবে তা হয়নি। ২৭ এপ্রিল আমার আব্বুর সামনে পুনরায় বিয়ের প্রস্তাব দেয় রাজ্জাক। তখন সে বলে, তার বর্তমান স্ত্রী মরণব্যধি ক্যান্সারে আক্রান্ত, খুব বেশি দিন হায়াত নেই। তার চারপাশের মানুষগুলোর মাধ্যমেও স্ত্রীর অসুস্থতার প্রমাণ দেন।

তিনি আরও জানান, এরপর থেকে শুরু হয় একসাথে পথচলা। উভয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যবসায়িক অনুষ্ঠানে আমরা একসাথে অংশ নেই। এসব মূহুর্তের স্মৃতিও ধারণ করি। বড়ই ভাল সময় কেটেছে তখন। এরপর থেকে আমরা একে অপরের সুখ-দুঃখের গল্প ভাগাভাগি করতাম। একে অপরের সমস্যা ও সফলতার সম্ভবনাও বাদ যায়নি তখনকার আলোচনা থেকে। তবে সে যে চালাকির সাথে সব লুটে নেবে তা কোনভাবেই বোঝা যায়নি।

সোনিয়া বলেন, একদা আমার সব ব্যয়ভার বহন শুরু করে রাজ্জাক। সেসময় তার বাড়ির কাজ নির্মাণাধীন। সে জানতো আমার আরসিসি বিল্ডার্সের কাছে ফ্লাট ক্রয় বাবদ ১০ লাখ টাকা চার বছর পূর্বে অগ্রিম প্রদান করা আছে। ফ্লাটের মূল্য’র বাকি অর্থ সঞ্চয় আছে তাও সে জানতো। একদিন সে আমাকে জানায়, তোমার সঞ্চিত অর্থ দিলে আমার বাড়ির কাজ সম্পন্ন হবে। অক্টোবরে হোম লোন পাওয়ার সাথে সাথে তোমার টাকা পরিশোধ করা হবে। ডিসেম্বরে তুমি তোমার ফ্লাট ক্রয়ের সমুদয় অর্থ পরিশোধ করে দিও।

প্রতারণার শিকার এই নারী আরও বলেন, যেহেতু সে আমার ও তার দুই পরিবারের ব্যয়ভার বহন করতো, তাই একটুও সন্দেহ করার সুযোগ ছিলো না তাকে। সেই সরলতার জায়গা থেকে আমি তার হাতে ৩২ লাখ টাকা খন্ড খন্ড করে তুলে দেই। এরপর থেকেই তার চালচলন বদলাতে থাকে। বিগত দিনের ন্যয় কেয়ারিং মনোভাব থাকে না, কেমন জানি তাচ্ছিল্য করতে থাকে সে আমাকে। বাড়ির দ্বিতীয় তলার নির্মাণ কাজ শেষে সেখানে রাজ্জাক তার পরিবারকে নিয়ে উঠেও পড়ে।

সর্বশেষ গত অক্টোবর মাসে আমি রাজ্জাকের মুঠোফোন দিয়ে তার স্ত্রীকে কল করি এবং প্রশ্ন রাখি- ভাবি আপনার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে কি-না। সে জানায় সপ্তাহখানেক আগে সামান্য ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হই, এখন সুস্থ। এরপর পুনরায় প্রশ্ন রাখি, আপনার না-কি ক্যান্সার হয়েছে। এমন প্রশ্নে রাজ্জাকের স্ত্রী হতভম্ব হয়ে বলে, আল্লাহ মহান, এমন অসুখ কখনোই হয়নি আমার। এরপর রাগে-ক্ষোভে আমি রাজ্জাকের স্ত্রীকে আমাদের সম্পর্কের খুটিনাটি সব তথ্য জানাই। একই সাথে জানায় রাখি, কিভাবে সে আমার সাথে প্রতারণা করেছে।

সেই থেকে ক্ষুব্দ হয় রাজ্জাক। নানাভাবে আমাকে হয়রানি ও নাজেহাল করার কমতি রাখেনি। তার অফিসে হাজির হয়ে আমার টাকা ফেরত চাইলে মারধর করে। অবশ্য একদা সে জানায়, আমার স্ত্রীকে ঘটনাটি নাটক ছিল বোঝাতে পারলে, সমুদয় অর্থ ফেরত দিবে। তার কথানুযায়ী আমি তাই করি। তবুও সে টাকা ফেরত দেয়নি। উপরুন্তু বিভিন্ন বিচার-আচারের মাধ্যমে টাকা ফেরত না দেয়ার তালবাহানা করছে। আবার প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম ভাঙিয়ে প্রাণনাশের হুমকিও প্রদান করছে। এঅবস্থায় অসহায় সোনিয়া দ্বারে দ্বারে ঘুরে ফিরছেন, চাইছেন তার অর্থ ফেরত। তবে কেউই তাকে সহযোগিতা করছেন না বলে তিনি খুলনাটাইমস’র কাছে হতাশা ব্যক্ত করেন। এসময় তিনি বেশকিছু তথ্যপ্রমাণ তুলে দেন এই প্রতিবেদকের কাছে।

এবিষয়ে রাজ্জাকের হোসেনের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে, তিনি খুলনাটাইমস’র কাছে দাবি করেন গোটা ঘটনাটি মিথ্যা ও বানোয়াট।