পেঁয়াজসঙ্কট কারসাজির নেতৃত্বে খাতুনগঞ্জ অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি

0
361

দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। এ তথ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আইআইটি এবং দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল সূত্রের। ঘাটতি যেমন নেই, বিপরীতে দামেরও মাত্রা নেই! অথচ দ্রব্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রণালয়সহ নানা পর্যায়ের মাথাভারি বোঝা রয়েছে দেশের। জনগণের কষ্টার্জিত অর্থে যাদের বেতন-ভাতা দেয়া হয়। যাদের যে কাজ! তাহলে সংশ্লিষ্টজনরা কে কতটুকু দায়িত্ব পালন করছেন?
জানা যায়, আগের মজুদের পাশাপাশি নতুন এলসির পেঁয়াজও প্রতিদিন দেশে ঢুকছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সরবরাহে কৃত্রিম সঙ্কটের সাথে বাজার অস্থির রয়েছে। এতে স্পষ্ট যে, ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণেই দাম বাড়ছে। গত তিন মাস আগে যে পেঁয়াজ বিক্রি হত ৩০ টাকা ৩৫ টাকা। এখন তা ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা ছুঁয়েছে। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার অজুহাতে মাত্র এক দিনের ব্যবধানে প্রতিকেজি পেঁয়াজের মূল্য বাড়ানো হয় ৫০ টাকা। এরপর এই ঊর্ধ্বগতির রথ আর টেনে নামানো যায়নি।
ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে বরারবই কলকাঠি নেড়ে থাকে দেশের বিভিন্ন স্থানের বড় আমদানিকারক, উৎপাদক, আড়তদার ও পাইকারি বিক্রেতারা। সুযোগ পেলেই নানা ইস্যু খোঁজে এরা পেঁয়াজ, রসুন, আদা, চিনি, ভোজ্যতেল, ডাল, ছোলা ও খেঁজুরসহ অত্যাবশ্যকীয় কিছু পণ্যের দাম সম্পূর্ণ অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে থাকেন। সম্প্রতি পেঁয়াজ ইস্যুতেও তারা একই কা- ঘটিয়েছেন। এ অপতৎপরতার দৌঁড়ে বৃহৎ বাণিজ্যকেন্দ্র চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা বরাবরই থাকছেন শীর্ষে। আমাদের জানা মতে, এ বাজারে ব্যবসায়ীদের পণ্যের মজুদ, দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান গতিবিধির উপরই সারা দেশে পণ্যের স্বাভাবিক সরবরাহ এবং দামের উঠানামা অনেকাংশে নির্ভর করে থাকে। ফলে বিভিন্ন অজুহাতে বারবার এ সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে কারসাজি চক্রের হোতারা। এর বাইরে প্রতি বছর রমজানে উৎপাদক-আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী হিসাবে দেশে কয়েকটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের অপতৎপরতা তো আছেই। তবে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক পরিধি বড় এবং সুনির্দিষ্ট হওয়ার কারণে বাজারের অস্থির পরিস্থিতিতে এদের চিহ্নিত করা এবং অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়াও কঠিন কিছু নয় বলে আমরা মনে করি। কিন্তু বড় ধরনের হই-চই পরিস্থিতি তৈরি না হলে ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা প্রায় লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে যায়।
অত্যাবশ্যকীয় সব পণ্যের ব্যবসার সঙ্গে খাতুনগঞ্জকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের সংশ্লিষ্টতা ব্যাপক বলে জানা যায়। সম্প্রতি পেঁয়াজ নিয়ে যে সংকট চলছে, এর মূলেও তেল ঢেলেছে খাতুনগঞ্জের হোতারা। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানকে হাতেনাতে ধরেছে। তারা কারসাজির সঙ্গে জড়িত বিভন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও কারসাজি চক্রের হোতাদের চিহ্নিত করা হয়েছে।
আমরা আশা করি, পণ্যের দামে কারসাজির সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে আইনের মুখোমুখি করা হবে। কারসাজির সিন্ডিকেটধারীদের দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান সব ধরনের কর্মকা- সরকারের নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। এরপরও এ ধরনের অভিযোগের পুর্ণরাবৃত্তি ঘটলে রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।