পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকা গ্রহণযোগ্য নয়

0
277

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়া এবং ছবি তুলে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে এক নারী মামলা করার পর গ্রেফতার করা হয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) কর্মচারী আবু বক্কর সিদ্দিককে। গ্রেফতারের কয়েক ঘন্টা পর রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় তার মৃত্যু হয়। পুলিশ দাবি করছে তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। পুলিশের ভাষ্যমতে, এক নারী বাদী হয়ে আবু বক্করের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় তাকে গ্রেফতার করে হাজতে আনলে তিনি আত্মহত্যা করেন। তবে নিহতের পরিবারের দাবি, আবু বক্করকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু হওয়া আবু বক্কর সিদ্দিকীর মরদেহের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, ময়নাতদন্ত করে মরদেহের গলায় কালো দাগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তার মাথায় ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, আত্মহত্যা করে থাকলে শরীরে আঘাতের চিহ্ন আসে কিভাবে? এছাড়া সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতার করতে হলে অনুমতি লাগে। পুলিশ কি তা নিয়েছিল? আর থানা হাজতে ফাঁসি দেয়ার মতো কোনো অবস্থা থাকে না। এ ছাড়া সেখানে সিসিটিভি থাকার কথা। তাহলে তারপরও কিভাবে তিনি গলায় ফাঁস দিলেন?
বরাররের মতই থানা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় পুলিশ হেফাজতে থাকা আসামির মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই মৃত্যু আত্মহত্যা বলে জানা গেছে। গ্রেফতার আসামি থানা হেফাজতে আত্মহত্যা করলে পুলিশ এর দায় এড়াতে পারে না। এ ঘটনায় তিন সদস্যরে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং পুলিশের অপরাধ প্রমাণিত হলে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা চাই। পুলিশের হেফাজতে মৃত্যু নানা কারণে হতে পারে। অসুস্থতাজনিত কারণে মৃত্যুর উদাহরণও রয়েছে। হেফাজতে আত্মহত্যাজনিত মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে কখনও কখনও। তবে বেশিরভাগক্ষেত্রেই পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগটিই বেশি উঠে আসে। যদিও আবু বক্কর সিদ্দিকের মৃত্যুর বিষয়ে জরুরি বিবৃতি দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। এই মৃত্যুতে কোনো পুলিশ সদস্যের গাফিলতি থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে। থানা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা এর আগে আরও ঘটেছে। কিন্তু বারেবারে এরকম বিচারবহির্ভূত হত্যা গ্রহণযোগ্য নয়। পুলিশি হেফাজতে যে কারণেই মৃত্যু ঘটুক না কেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা পুলিশ সদস্যদের কোনো গাফিলতি, বিচ্যুতি বা অপরাধ প্রমাণিত হলে তার বা তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই উপযুক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি পুলিশকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে এবং এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।