পাটকল শ্রমিকদের ধর্মঘটে শিল্পাঞ্চলে অচলাবস্থা

0
529

নিজস্ব প্রতিবেদক : খুলনাসহ সারাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের টানা ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। গত মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া ৭২ ঘন্টার শ্রমিকদের ধর্মঘটে খুলনার শিল্পাঞ্চলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে ঘুরছে না পাটকলের মেশিন। শ্রমিকদের ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব বিরাজ করছে। এদিকে বুধবার দ্বিতীয় দিনেও পাটকল শ্রমিকরা সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত খুলনা-যশোর মহাসড়ক এবং রেলপথ অবরোধ করে। এছাড়া তারা বিক্ষোভ মিছিল, টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও সমাবেশ করে। শ্রমিকদের বিক্ষোভে দিনভর উত্তাল ছিল নগরীর খালিশপুর ও আটরা শিল্পাঞ্চল। খুলনার সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল ৬ ঘণ্টা।
বকেয়া মজুরি পরিশোধ এবং মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ৯ দফা দাবিতে বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগ এই ধর্মঘট ও অবরোধ কর্মসূচি ডাকে। ভোর সাড়ে ৬টায় নগরীর খালিশপুরে প্লাটিনাম, ক্রিসেন্ট, খালিশপুর ও দৌলতপুর জুট মিলের শ্রমিকরা নিজ নিজ মিল গেটে জড়ো হয়। দিঘলিয়ার স্টার জুট মিলের শ্রমিকরা জড়ো হন প্লাটিনাম জুট মিলের সামনে। এরপর এই ৫টি জুট মিলের শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে লাঠি হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
শ্রমিকরা মিছিল সহকারে সকাল ৮টায় নগরীর নতুন রাস্তা মোড়ে পৌঁছে খুলনা-যশোর মহাসড়ক, বিআইডিসি সড়ক ও নতুন রাস্তা থেকে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সড়ক অবরোধ করে। দৌলতপুরের কাছে সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে শ্রমিকরা। অনেক শ্রমিক রাস্তার ওপর শুয়ে থেকে বিক্ষোভ করেন। সকাল সোয়া ৮টার দিকে পুলিশের একটি গাড়ি ওই সড়ক দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে শ্রমিকরা ধাওয়া দেয়। অবরোধ চলাকালে নতুন রাস্তা মোড়ে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া শ্রমিকদের একটি অংশ রেললাইনের ওপর আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। অবরোধ কর্মসূচির কারণে ভোর ৬টা থেকেই খুলনার সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
খুলনা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার জানান, খুলনা থেকে ঢাকা রুটের চিত্রা এক্সপ্রেসসহ ৬টি ট্রেন সময়মতো গন্তব্যে ছেড়ে যেতে পারেনি। অবরোধ কর্মসূচি শেষ হলে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
একই সময় নগরীর আটরা শিল্প এলাকায় মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে আলিম ও ইস্টার্ন জুট মিলের শ্রমিকরা। জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিলের শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে রাজঘাট এলাকায়। সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করায় যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
শ্রমিক সমাবেশে প্লাটিনাম জুট মিল সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন বলেন, আমাদের এই আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলন নয়। সরকার ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াচ্ছে। আর আমরা শ্রমিকরা কাজ করেও মজুরি পাচ্ছি না। তাই না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। পেটের ক্ষুধার যন্ত্রণায় আমরা শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে রাজপথে আন্দোলনে নেমেছি।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ ঐক্য পরিষদের আহবায়ক মোঃ সোহরাব হোসেন বলেন, আজ বৃহস্পতিবারও ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজও সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করা হবে। তিনি বলেন, আগামী ৭ এপ্রিল ঢাকায় বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সবগুলো পাটকলের শ্রমিক নেতারা বৈঠক করবেন। সেই বৈঠক থেকে লাগাতার এবং আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।