পাটকলগুলোর আধুনিকায়নে উৎপাদন বন্ধ করে শ্রমিকদের এককালীন পাওনা পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার

0
336

খুলনাটাইমস ডেস্ক:
সরকার বিজেএমসি পরিচালিত রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একে আরো সক্ষম করে গড়ে তুলতে উৎপাদন বন্ধ করে শ্রমিকদের এককালীন পাওনা পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এজন্য বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন’র (বিজেএমসি) ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে শ্রমিকদের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার পাওনা পরিশোধ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ সকালে গণভবনে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলসমূহ নিয়ে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

তিনি বলেন, ‘সরকারি খাতের পাটকলগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে শ্রমিকদের সমুদয় পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
মুখ্য সচিব বলেন, ‘বর্তমানে দেশে যে পাট ও পাট জাত পণ্য উৎপাদিত হয় তার শতকরা ৯৫ শতাংশই বেসরকারী পাটকলে উৎপাদিত হয়। সরকারী খাতটি অত্যন্ত স্কুইজড (সংকুচিত) হয়ে গেছে। যা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছিল না।’
‘এগুলোকে আবার প্রতিযোগিতায় কিভাবে আনা যায় এবং কিভাবে শক্তিশালী করা যায় সে বিবেচনায় এখন পাটকলগুলো বন্ধ করার ঘোষণা করা হয়েছে,’ বলেন তিনি।

একইসঙ্গে ‘এসব পাটকল বন্ধ থাকলে যে পরিমাণ ক্ষতি হয় চালু থাকলে তার চেয়ে বেশি পরিমাণ ক্ষতি হয়,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কাজেই এসব পাটকলের সঙ্গে জড়িত শ্রমিক ভাইদের জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তার জন্য সরকার তাঁদেরকে ২০১৫ সালের জাতীয় মজুরি কাঠামো অনুযায়ী সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

ড.কায়কাউস বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনাও দিয়েছেন যে-পাটকলগুলো বন্ধ আছে সেগুলো কিভাবে চালু করা যায়, যাতে সেগুলো বর্তমান এবং আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে।’
এ সংক্রান্ত একটি কর্মপন্থতা প্রস্তুত করে অতি দ্রুত তাঁর নিকট নিয়ে আসার জন্যও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, বলেন তিনি।

মুখ্য সচিব ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো গত ৪৮ বছরের মধ্যে শুধু চার বছর লাভের মুখ দেখেছে এবং ৪৪ বছর ধরে অব্যাহতভাবে মোট ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে।
তিনি বলেন, লোকসান হলে কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য সরকারের অর্থের উপর নির্ভর করতে হতো বলে প্রতি মাসেই শ্রমিক কর্মচারীদের এ সংক্রান্ত সমস্যা চলছিল।

মুখ্য সচিব বলেন, পাটকল শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের লক্ষ্যে আগামী তিন দিনের মধ্যে তাঁদের তালিকা প্রস্তুত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

ড. কায়কাউস বলেন, ‘২০১৫ সালের সর্বশেষ মজুরি কাঠামো অনুযায়ী পাটকল সমূহের ২৫ হাজার শ্রমিককে তাদের অবসরকালীন সুবিধাসহ পাওনা পরিশোধ বাবদ সরকারের ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে।’

মুখ্য সচিব বলেন, ‘পাটখাতের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নজর রয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রীর দর্শন হচ্ছে পাটকল শ্রমিকদের বাঁচানো।’

এরই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী ইতোপূর্বে পাটের জন্মরহস্য উন্মোচনের জন্য গবেষণা খাতে অর্থায়ন করেছিলেন এবং পাটের বহুমুখী ব্যবহারের উপর বিশেষ নজর দেন বলেও উল্লেখ করেন ড. কায়কাউস।

শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের ধরন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে যেসব শ্রমিক অনধিক দুই লক্ষ টাকা প্রাপ্য তাদেরকে পুরো টাকা এককালীন নগদ পরিশোধ করা হবে।

মুখ্য সচিব বলেন, পাওনা টাকার মধ্যে ৫০ শতাংশ এককালীন নগদ এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ শ্রমিকদের ভবিষ্যত জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয় পত্র আকারে পরিশোধ করা হবে।
সঞ্চয় পত্রের মাধ্যমে প্রাপ্ত আর্থিক সুবিধার বর্ণনা দিয়ে ড. কায়কাউস বলেন, ১১ শতাংশ সুদে প্রত্যেক শ্রমিক প্রতি তিন মাসে সর্বনি¤œ ১৯ হাজার ৩২০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৭৪ হাজার ৫২০ টাকা পর্যন্ত পাবেন।

এছাড়া এ পর্যন্ত অবসরে যাওয়া ৮ হাজার ৯৫৬ জন পাটকল শ্রমিকের অবসর ভাতা পরিশোধ করতে সরকারের ১ হাজার ২০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে ও জানান তিনি।

মুখ্য সচিব বলেন,‘পাটকল শ্রমিকদের পাওনা টাকা সরাসরি তাঁদের ব্যাংক হিসাবে’ পাঠানো হবে এবং কোন পাটকল অথবা অন্য কোন মধ্যস্বত্বভোগীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকবে না।’

ব্রিফিংয়ে উপস্থিত বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া জানান, অবসর ভোগীদের টাকা আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই নিজ নিজ ব্যাংক একাউন্টে চলে যাবে ।

সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে মুখ্য সচিব বলেন,‘এখানে কাউকে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে না এবং পরবর্তীতে এ কারখানাগুলো পুনরায় চালু হলে নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমান শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং বিজেএমসি’র চেয়ারম্যানও ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।