পাইকগাছায় লোনা পানির জনপদে তরমুজের আবাদ বেড়েছে

0
437

শেখ নাদীর শাহ্: আবহাওয়ার অনুকুল পরিবেশে উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে চাহিদা ও দাম ভাল পাওয়ায় পাইকগাছায় তরমুজ চাষ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আবহাওয়ার প্রতিকূল পরিবেশে গতবার আবাদ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত নাহলেও উৎপাদন ও দাম ভাল পাওয়ায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় দেড় শ’ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ হচ্ছে তরমুজের। উন্নত জাতের বীজ সংকট থেকে শুরু করে অসময়ে অতিবৃষ্টির কবলে গতবার ৬০/৭০ হেক্টর জমিতে চারা গজায়নি। এছাড়া অঙ্কুরোদ্গমের পর ৩০/৪০ হেক্টর জমির চারা পানি চাপায় মরে যায়। তবে এবার আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশে ৪ শ’হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় দেড় শ’হেক্টর বেশি সাড়ে ৫শ’ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে তরমুজের। স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তর বলছে, ইতোমধ্যে প্রতিটি চারা বেড়ে ৫/৬ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, বৈশাখের প্রথম সপ্তাহেই পাইকগাছায় উৎপাদিত তরমুজ বাজারে আসতে শুরু করবে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, সুন্দরবন উপকূলীয় খুলনার লোনা পানি অধ্যুষিত পাইকগাছা উপজেলায় তরমুজ চাষের উপযোগী মাটি ও পরিবেশে গত কয়েক বছরে তরমুজ চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। লোকসান কম ও দাম ভাল পাওয়ায় প্রতি বছর লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশী জমিতে আবাদ হয় তরমুজের। এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছর কৃষি অধিদপ্তরের ৪০০ হেক্টর লক্ষমাত্রা থাকলেও আবাদ হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৫শ’ হেক্টর জমিতে।
কৃষি বিভাগ ও এলাকাবাসীর দেয়া তথ্যমতে, উৎপাদন ও মান ভাল হওয়ায় পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়নের ২২ নং পোল্ডার ও গড়ুইখালী ইউনিয়নের বাইনবাড়িয়া ও কুমখালীতে দীর্ঘদিন যাবৎ তরমুজ চাষ করছেন সেখানকার কৃষকরা।
স্থানীয়রা জানান, এখানকার তরমুজের ব্যতিক্রমী স্বাদের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এর চাহিদা ও দাম অপেক্ষাকৃত বেশী। সুন্দরবন উপকূলীয় চিংড়ি চাষ অধ্যুষিত লোনা পানির জনপদে যখন পরিবেশ বিধ্বংসি চিংড়ি চাষ দিন দিন প্রসারতা পাচ্ছে, ঠিক তখনই সেখানে তরমুজের আশা জাগানিয়া সম্ভাবনা স্থানীয় কৃষকদের পথ দেখাচ্ছে নতুন আলোর। তরমুজ চাষে শুধু চাষীরাই নয়, উৎপাদন মৌসুমে সেচ, ক্ষেত পরিচর্যা থেকে শুরু করে উত্তোলন ও উৎপাদিত পণ্য পরিবহনে কর্মসংস্থান হয় এলাকার শ্রমজীবিদের।
কৃষি অফিস জানায়, উপজেলায় মূলত হাইব্রিড পাকিজা, ড্রাগন, সুইট ড্রাগন ও ব্লাক মাস্টার জাতের তরমুজের আবাদ হয়। সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের ২২ নং পোল্ডারে সর্বো”চ ৩৮০ হেক্টর ও গড়ুইখালী ইউনিয়নের বাইনবাড়িয়া কুমখালী এলাকায় ৩০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হলেও গত বছর ২০১৯-এ গড়ুইখালীতে নানা প্রতিকূলতায় আবাদ হয়নি তরমুজের। তবে ২২ নং পোল্ডারে আবাদ মৌসুমের নানা প্রতিকূলতায় প্রায় ৮০ হেক্টর জমির ক্ষেত নষ্ট হওয়ার পরও শেষ পর্যন্ত টিকে ছিল প্রায় ৩ শ’হেক্টর জমির আবাদ। সর্বশেষ সেখানে উৎপাদন ভাল হওয়ায় লোকসান কাটিয়ে লাভের মুখে ছিলেন কৃষকরা। তবে সব বাঁধা কাটিয়ে সেখানকার চাষীরা তরমুজ চাষে এবার কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন।
এব্যাপারে দেলুটি ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষিকর্মকর্তা উত্তম কুমার কুন্ডু জানান, এবার তার দেলুটির ২২ নং পোল্ডার জুড়ে প্রায় ৫শ’ ১০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। গাছের চারা ইতোমধ্যে ৫/৬ ইঞ্চি থেকে শুরু করে কোন কোন এলাকায় ১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত বড় হয়েছে। তিনি বলছিলেন,তরমুজের চারা গজানোর ৪৫ দিনের মধ্যে গাছে ফুল ও ফল আসে। আর ফল আসার ১৫ দিনের মধ্যে তা আহরণ করা যায়। সে হিসেবে বৈশাখের প্রথম সপ্তাহের দিকে সেখানকার তরমুজ বাজারে আসবে বলে মনে করেন তিনি। এসময় তিনি আরো বলেন,তার এলাকায় মূলত পাকিজা ও ড্রাগন জাতের তরমুজের আবাদ হয়। গতবার ড্রাগন জাতের তরমুজের বেশি আবাদ হলেও এবার কৃষকরা পাকিজা জাতের তরমুজের আবাদ করেছেন বেশি।
এব্যাপারে দেলুটির তরমুজ চাষী ফরহাদ হোসেন, তিনি ১৩ বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন, লোটন সরকার ৮ বিঘা, শেখ মোহাম্মদ আলী যিনি ১০ বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। তারা বলছিলেন, আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশে এবার তরমুজের আবাদ ভাল হয়েছে। ভাল জাতের বিজ পাওয়ায় প্রায় সব বিজেই চারা গজিয়েছে। কৃষিকর্মকর্তারাও নিয়মিত মনিটরিং করছেন। পরামর্শ দিচ্ছেন নিয়মিত। আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান থাকলে ভাল ফলনের আশা করছেন তারা।
এব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এএইচএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এবছর ৪ শ’ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও প্রায় সাড়ে ৫শ’ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। প্রতি বিঘা জমি থেকে কৃষক ৫০/৬০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করবেন।
আবাদ উপযোগী পরিবেশ ও দাম ভাল পাওয়ায় সুন্দরবন উপকূলীয় লবণ পানির জনপদে চিংড়ির পরিবর্তে সেখানকার কৃষকরা আশা জাগানিয়া তরমুজ চাষে ভর করে ঘটাতে পারেন এক নতুন বিপ্লব। এমনটাই প্রত্যাশ্যা কৃষি অধিদপ্তরের পাশাপাশি সেখানকার সাধারণ কৃষকের।