পাইকগাছায় নিয়ন্ত্রণহীন করোনা:সংগৃহীত ২৪৩ নমুনার বিপরীতে আক্রান্ত-৪৭ জন

0
467

অসচেতনতায় ধুঁকছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

শেখ নাদীর শাহ্ :

পাইকগাছায় করোনার সংক্রমণ বেড়েইে চলেছে। শনিবার একদিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান হিসাব রক্ষক, পরিসংখ্যানবিদসহ নতুন করে ৭ জনের নমুনায় কোভিট-১৯ শনাক্ত হয়েছে। এনিয়ে গত ১ জুন প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর মাত্র ৩৪ দিনে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৪৭ জন। একই সময়ে ২৩ এপ্রিল থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মোট ২৪৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এরমধ্যে হাসপাতালের ডাক্তার-কর্মচারী, পুলিশ কর্মকর্তা, সাংবাদিক, ইউপি চেয়ারম্যানসহ দোকানের বিক্রয় প্রতিনিধিরাও রয়েছেন।

এদিকে উপজেলায় সার্বিক করোনা পরিস্থিতি অবনতির দিকে এগিয়ে গেলেও জনসচেতনতা মারাতœকভাবে হ্রাস পেয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেননা সিংহভাগ মানুষ। হাট-বাজার, দোকান-পাটসহ সর্বত্র আগেরমত খোলামেলা স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। প্রশাসনও হাল ছেড়ে দিয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে উপজেলার লাখ লাখ সাধারণ মানুষ।

একমাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত থাকলেও প্রশাসনিক তৎপরতা একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে। এমনকি করোনা প্রতিরোধে সরকারের স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নে কোভিট প্রশাসন থেকে শুরু করে উপজেলা প্রশাসনের কাউকে মাঠে দেখা যাচ্ছেনা। সপ্তাহ দু’য়েক আগে স্থানীয় পুলিশকে স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়ন ও নির্দিষ্ট সময়ে দোকান-পাঠ বন্ধে সক্রিয় থাকতে দেখা গেলেও সম্প্রতি তাদের বিচরনও মারাতœকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

সর্বশেষ ৪ জুলাই পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান হিসাব রক্ষক আক্তারুজ্জামান, পরিসংখ্যানবিদ মাসুরুজ্জামান, হাড়িখালীর পলাশ রায়, সরলের পলাশ, মো: আব্দুল জব্বার, কপিলমুনির রবিন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও পাইকগাছার মো: নূরইসলাম, ২ জুলাই ১জন, ১ জুলাই ৪ জন, ৩০ জুন ২জন, ২৯ জুন একদিনে ১০ জন, ২৮ জুন ১জন, ২৫ জুন ১জন, ২৪ জুন ১জন ও একই দিন কাশিমনগর গ্রামের রামপ্রসাদ শীল ও পরে পৌরসভার মারজাল ঢালীর ফলোআপ নমুনাতেও পজেটিভ শনাক্ত হয়। ২৩ জুন কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সঞ্জয় কুমার দাশসহ ৩জন, ২১ জুন আগড়ঘাটা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা: অরুপ রতন অধিকারীসহ ৪ জন। এরআগে পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের মারজাল ঢালী, ১৭ জুন খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাধারণ সম্পাদক কপিলমুনির কাশিমনগর গ্রামের এম মাহমুদ আসলামসহ ২জন, ১৫ জুন বেতবুনিয়ার স্বাস্থ্য কর্মী আঞ্জুয়ারা বেগমসহ ২ জন, ১৪ জুন পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কামাল আহমেদ সেলিম নেওয়াজসহ ২জন, ১৩ জুন ১জন, ১২ জুন কপিলমুনির প্রতাপকাটীর অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল মান্নান সরদার, ১০ জুন সাংবাদিক তপনের স্ত্রী তৃপ্তি পালসহ ২জন, এরপর শাহাপাড়া গ্রামের পুলিশে কর্মরত রমজান আলী। এর আগে ১ জুন স্থানীয় কপিলমুনির সাংবাদিক তপন পালের নমুনায় প্রথম করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়।

এপ্রসঙ্গে উপজেলা সেনেটারী ও নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা উদয় মন্ডল জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: নীতিশ চন্দ্র গোলদারের নির্দেশে তিনি উপজেলা সদর থেকে শুরু করে কমিউনিটি পর্যায়ে দিন-রাত অত্যন্ত পরিশ্রম করে জনসাধারণের মাঝে স্বাস্থ্য বার্তা পৌছে দিচ্ছেন। তবে স্বাস্থ্য বিধি পালনে নড়বড়ে অবস্থা ভয়াবহ পরিনতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলেও জানান উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগের এ ফেরিওয়ালা।

এসময় তিনি সর্বসাধারণের জ্ঞাতার্থে আদা, তেজপাতা, লবঙ্গ,দারুচিনি ও রসুন মিশ্রিত গরম পানির ভাপ নাক দিয়ে গ্রহন ও তা মুখ দিয়ে বর্জনের পরামর্শসহ রাতে উক্ত মিশ্রনে লবণ মিশিয়ে গড়াপড়ার পরামর্শ দেন। (তার আগে অবশ্যই ভালভাবে দাঁত ব্রাশ করতে হবে) এয়াড়া নিয়মিত সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোঁয়া ও সাবান,ডেটল বা স্যাভলন দিয়ে গোসল, দিনে অন্তত ১ বার সরিষা তেল দিয়ে ভর্তা খাওয়া ও নাকে খাঁটি সরিষার তেল ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

সর্বশেষ লক ডাউন প্রত্যাহারের পর ফের এলাকাভিত্তিক লকডাউনে জনসাধারণের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙ্গে বাইরে বেরিয়ে আসায় এবং লোকাল প্রশাসনের নিষ্ক্রীয়তা মূলত করোনা সংক্রমণ প্রসারতার জন্য দায়ী বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। সর্বশেষ পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাস তৃণমূলে ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন পাইকগাছার লাখ লাখ সাধারণ মানুষ।