পরিচ্ছন্ন ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব গঠন ক্ষমতাসীনদের চ্যালেঞ্জ

0
452

বিশেষ প্রতিবেদক: প্রায় পাঁচ বছর পর আজ মঙ্গলবার খুলনায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জেলা ও নগর কমিটির যৌথ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ লক্ষে বর্ণিল সাজে সেজেছে খুলনা মহানগরী। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে এক ঝাঁক নবীণ-প্রবীন প্রার্থীর তৎপরতায় উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে দলীয় শিবিরে। প্রার্থীদের ছবিসহ তোরণ, ফেষ্টুন বিলবোডে ছেঁয়ে গেছে গোটা মহানগরী। এসব প্রচারণায় শীর্ষ নেতৃত্বের দৃষ্ঠি আকর্ষনই মূল উদ্দেশ্য। প্রার্থীদের লবিং-গুরুপিং এবং কর্মী-সমর্থকদের বিরামহীন শোডাউনে মুখরিত রাজনৈতিক অঙ্গণ। গত দু’দিন খুলনার জনপদে গুঞ্জন আর জল্পনা-কল্পনার ঝড় ওঠে। ‘কে হচ্ছেন সভাপতি বা কে হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক। ’ পরিবর্তন না পূর্নবহাল না চমক এমন সব জল্পনা-কল্পনায় চলে দিন ভর।’ সব মিলে উৎসবের পাশাপাশি উদ্বেগ-উৎকন্ঠা দেখা গেছে শীর্ষ পদ প্রত্যাশিদের মধ্যে। নিজ দলে দূর্নীতি বিরোধী শুদ্ধি অভিযানের মধ্যে খুলনায় সম্মেলনে মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব গড়ে তোলা অনেকটাই চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
একাধিক সূত্র জানায়, জেলা বা নগর কমিটিতে সভাপতি পদে পরিবর্তনের সম্ভবনা খুব কম। তবে উভয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তনের আভাস মিলছে। দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান মাথায় রেখে ত্যাগী-পরিক্ষিত ও ক্লিন ইমেজের তারুণ্য নির্ভর কর্মীবান্ধব নেতা নির্বাচন করতে চাইছে নীতি-নির্ধারনী মহল। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের আমলনামা সংগ্রহ করা হয়েছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে। যদিও চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।
সূত্র জানায়, মহানগর আওয়ামী লীগে সভাপতি পদে সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এবং জেলা সভাপতি পদে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ পূর্ণবহাল থাকছেন। তবে চমক আসতে পারে এই পদে। নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য লড়াই করছেন ৫ নেতা। তারা হলেন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি মিজানুর রহমান মিজান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা এমডিএ বাবুল রানা,সদর থানা সভাপতি ও জেলাপ আইনজীবী সমিতির নব নির্বাচিত সভাপতি এ্যাড.সাইফুল ইসলাম, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম ও শেখ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। জেলা সাধারণ সম্পাদক পদে প্রর্থী রয়েছেন জেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এ্যাড.সুজিত অধিকারী, যুগ্ম সম্পাদক সরফুদ্দিন বিশ^াস বাচ্চু, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল, আকতারুজ্জামান বাবু এমপি, সংগঠনের বটিয়াঘাটা উপজেলা সভাপতি আশরাফুল আলম খান, সাবেক ছাত্রনেতা এস.এম মোর্ত্তোজা রশিদী দারা ও অসিত বরণ বিশ^াস।
এদিকে সাধারণ সম্পাদকের শীর্ষ পদটি দখলে নিতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন। প্রার্থীরা শেখ পরিবারের আর্শীরবাদ পেতে মরণপন চেষ্ঠা অব্যাহত রেখেছেন। চলছে নানা মেরুকরণ। এমনকি সংখ্যালঘু ইজমকে ব্যবহার করছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা। যদিও হাইকমান্ড থেকে না সংকেত পেয়েছেন কেউ কেউ। তথাপি হাল চাড়ছেন তারাও।
সুত্র জানায়, এবার নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন হাইকমান্ড প্রার্থীদের আমলনামা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। খোদ দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রার্থীদের সম্পার্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে প্রার্থীর পারিবারিক,সামাজিক ও সাংগঠনিক অবস্থান,তাদের আয়ের উৎস,তৃণমুল কর্মীদের সঙ্গে কতোটুকু সম্পর্ক এবং দলের র্দুদিনে প্রার্থীর ভুমিকা সম্পর্কে তথ্য নেওয়া হয়েছে।
এদিকে,প্রার্থীদের আমলনামা সম্পর্কে খোদ দলীয় প্রধানের তথ্য সংগ্রহের সংবাদে খুশি মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদারি ঐতিহ্যবাহি সংগঠন আওয়ামী লীগের তৃণমুল নেতা-কর্মীরা। তৃণমুলের একাধিক কর্মীর সঙ্গে কথা হলে এ তথ্য বেড়িয়ে আসে। সংগঠনটির তৃণমুলের মতে নিজ দলের মধ্যে চলমান শুদ্ধি অভিযান দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। নেতৃত্ব গঠনের ক্ষেত্রে বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।
অপরদিকে প্রার্থীদের আমলনা সম্পর্কে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার তথ্য সংগ্রহের সংবাদ টেনশন বেড়েছে জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর। বিশেষ করে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর কলার কাটা হয়ে দাড়িয়ে বিগত দিনের আমলনামা। সংগঠনের জেলা শাখার একজন সাবেক ও একজন বর্তমান জনপ্রতিনিধি ক্ষমতার অপব্যবহার ও সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে অসৎ আচারণ এবং একজন চিহ্নিত মাদক সম্্রাট নিজের ভাই হওয়ার সুবাদে শেল্টার দেওয়া এবং হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে দাঙ্গা সৃষ্টির মতো গুরুত্বর অভিযোগ রয়েছে। যা আওয়ামী শিবিরে ব্যাপক ঝড় তুলেছে। অপরদিকে নগর আওয়ামী লীগের একজন সাবেক জনপ্রতিনিধির ক্ষমতার অপব্যবহার মাদক গডফাদারদের শেল্টার দেয়ায় ইতোমধ্যে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাকে। অপর এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ গনমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বেশ কয়েকজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে।
আজ মঙ্গলবার খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে একই মঞ্চে যৌথ্যভাবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে খুলনা জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বাষিকী সম্মেলন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক শীর্ষ নেতা উপস্থিত থাকবেন। প্রথম অধিবেশন একই মঞ্চে হলেও দ্বিতীয় অধিবেশন হবে পৃথক স্থানে। নগর কমিটির দ্বিতীয় অধিবেশন হবে ইউনাইটেট ক্লাবে এবং জেলার অফিসাস্ ক্লাবে। দ্বিতীয় অধিবেশনে শুধুমাত্র কাউন্সিলর উপস্থিত থাকবেন।
২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়। সম্মেলনে বর্তমান সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক সভাপতি এবং সাবেক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। প্রায় দুই বছর পর ২০১৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর নগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। অপরদিকে ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুরুয়ারি খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হয়েছিল। সম্মেলনে জেলা পরিষদেও চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ সভাপতি এবং সাবেক সংসদ সদস্য এসএম মোস্তফা রশিদী সুজা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। একই বছরের ২৭ নভেম্বর ৭১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় কমিটি। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা রশিদী সুজা কিডনিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই মারা যান। এর পরপর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গাজী আব্দুল হাদিও মারা যান। তারপর থেকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন অ্যাডভোকেট সুজিত কুমার অধিকারী।