দৌলতপুরে রেলওয়ে স্টেশন অরক্ষিত : সকালে উচ্ছেদ বিকেলে দখল

0
759

আহাদ আলী:
মহানগরীর ঐতিহ্যবাহী দৌলতপুরে  রেল স্টেশন পর্যাপ্ত তদারকির অভাবে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। এ কারণে যাত্রীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে ছোট-বড় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। সর্বশেষ ২০ জুলাই দৌলতপুরে ট্রেনের ধাক্কায় অঞ্জনা রায় (৭৫) নামের এক মহিলা মারা গেছে। গতশুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে দৌলতপুর বাজার রেললাইনে এ ঘটনা ঘটে। রেলওয়ে থানার এসআই গৌতম কুমার পাল জানান, পথচারি অঞ্জনা রায় রেললাইন পার হওয়ার সময় খুলনা থেকে ছেড়ে আসা রকেট ট্রেনের ধাক্কায় তিনি পাশে ছিটকে পড়েন। সজোরে মাথায় ধাক্কা লাগায় তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান। তিনি আড়ংঘাটা থানাধীন লতা গ্রামের বাসিন্দা সরেন রায়ের স্ত্রী।
অাপরদিকে ১৯ জুলাই বৃহস্পতিবার অল্পের জন্য রক্ষা পেল কপোতাক্ষ ট্রেনের ৩ শতাধিক যাত্রী ও আশপাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা কপোতক্ষ ডাউন ট্রেনটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দৌলতপুর বি.এল কলেজ রেল স্টেশনের সামনে এলে হঠাৎ দ্রুতগতির ট্রেনটি কোচ (বগি)গুলো হতে শুধু ইঞ্জিন খুলে প্রায় এক কিলোমিটার চলে যাওয়ার পর ট্রেনের চালক বিষয়টি বুঝতে পারে। ফলে ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্কে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও যাত্রী সূত্রে জানাযাই , ট্রেনের ইঞ্জিন বগি থেকে ছুটে গিয়ে উল্টে যাচ্ছিলো। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যাই যাত্রীরা। এই বিষয়ে স্টেশন মাস্টারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সামান্য মেকানিক্যাল সমস্যা হয়ে ছিল, পরেঠিক হয়ে যায়। ট্রেনটি ৩০ মিনিট পরে বগি সংযুক্ত করে চলে যায়।
তদারকির অভাবে বর্তমানে দৌলতপুর রেলওয়ে স্ট্রেশনে গড়ে উঠেছে ব্যবসায়া প্রতিষ্ঠান। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় স্থানীয়রা এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠা চালিয়ে আসলেও রেলওয়ে প্রশাসন এব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণ এবং তদারকি বাড়াতে রেলওয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সমাজের সচেতন মহল। গত কয়েকমাস আগে জেলা প্রশাসকের নিবাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও রেলওয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করলেও পরবর্তীতে পুনরায় দখল করেছে স্থানীয় ও বহিরাগত অসাধু ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় লোকজন জানান, সকালে উচ্ছেদ বিকেলে দখল।
তথ্য অসুন্ধানে জানা যায়, ঢাকা থেকে খুলনা, খুলনা থেকে বেনাপোল আসা যাওয়ার সুবিধার্থে  দৌলতপুরে রেলপথ নিমির্ত হয়। ১৯৯৫ সালে একই সাথে প্রতিষ্ঠিত হয় দৌলতপুরে রেলওয়ে স্টেশন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দৌলতপুরে রেলওয়ে স্টেশনের স্থায়ী কোনো ভবন না থাকলেও পরোবতিতে রেলওয়ের জায়গার উপর নির্মিত হয়েছে রেলওয়ে অফিস। এতে ১০টি রুম থাকলেও ১টি ওয়েটিং রুম। ১টিতে স্টেশন মাস্টার অফিস করেন। ২ দুজন মাস্টার, জিআরপি সদ্যরা ও কর্মচারী কাজ করেন দৌলতপুর রেলওয়ে স্টেশনে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রেলওয়ে স্টেশনের জায়গা দখল করে আশপাশে ৫-২০ ফুটের মধ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে অনেকে। কয়েকটি ফলের দোকান, কাপড়ের দোকান, কাচা মালের দোকানসহ আরো কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়ে ব্যবসা চালিয়ে আসছে স্থানীয়রা। রেলপথ দিয়ে হেঁটে পারাপার হচ্ছে জনসাধারণ। আর রেলপথে উপরেই বসানো হয়েছে ছোট ছোট ভ্রাম্যমাণ দোকান। আর স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় এসব ব্যবসা চালিয়ে আসলেও রেলওয়ে প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী জানান, স্থানীয় প্রভাবশালীরা মাসোহারা নিয়ে রেলওয়ের জায়গায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। যার কারণে রেলওয়ে প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। বর্তমানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় রেল লাইন অরক্ষিত হয়ে পড়েছে বলে একাধিক ব্যবসায়ি জানিয়েছে। লিমন সরদার জানায়, সন্ধ্যার পরে রেললাইনের বসে মাদকসেবীদের আড্ডা। দুর্গন্ধের কারণে ৫ মিনিট দাঁড়াতেও পারে না যাত্রীরা। তিনি আরো অভিযোগ করেন, রেলওয়ে স্টেশনে ভবন করা হলেও যাত্রীরা সেবা পায় না। ওয়েটিং রুমগুলো সব সময় বন্ধো বা পরিষ্কার করা হয় না। যাত্রীরা উঠানামা করার সময় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো তদারকি করে না। এর আগেও কয়েকবার ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। রেলওয়ের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তা বন্ধো করা না গেলে রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষের আওতার ভেতরে রাখা সম্ভব হবে না।
দৌলতপুর রেলওয়ে স্টেশন অরক্ষিত এবং রেলওয়ের জায়গা দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার বিষয়টি স্বীকার করে দৌলতপুরে রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার বুলবুল আহমেদ বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাছাড়া রেলওয়ে স্টেশনে নেই কোনো পুলিশের নিরাপত্তার ব্যবস্তা। কিন্তু কাগজ- কলমে আছে। অনিরাপত্তার মধ্য দিয়ে অফিস করতে হয়। সবকিছু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হলেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি এখনো। ট্রেন থেকে যাত্রী ওঠানামা করার সময় তাদের কোনো দায়িত্ব নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ট্রেনের যারা গার্ড ম্যান রয়েছে তারও জিনিসটা ভালো করে দেখে না। সেটি তাদের দায়িত্ব। ট্রেনের গার্ডম্যানরা সচেতন হলে ট্রেনে কাটা পড়ে যে দুর্ঘটনা ঘটছে তা কমানো সম্ভব।