দেবহাটায় করোনা ঝুকিতে উপজেলার প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ

0
561

দেবহাটা প্রতিনিধি: দেবহাটায় করোনা ঝুকিতে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ। রিপোর্ট পাওয়ার আগেই আক্রান্ত ২৩ ব্যক্তির বে-সামাল ঘোরাঘুরি,এ দায় আসলে কার? কাদের ভুলের মাশুল গুনতে যাচ্ছে সমগ্র উপজেলার মানুষ। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকা একজনের থেকে আরো ২৩জন করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় আলোচনার ঝড় উঠেছে। আর এতে প্রশাসনের ব্যর্থতা দাবি করে উপজেলার সর্বত্র চলছে সমালোচনা । এর সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্বাস্থ্য বিভাগকে দায়ী করছেন সাধারণ মানুষ। তবে সাধারণ মানুষের এসব অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল লতিফ। অপর দিকে সরকারি সেল নম্বারটি বন্ধ রেখে নিজের দায় এড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরিন। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত ১ মে নারায়ণগঞ্জ থেকে ২৪ জন ইটভাটা শ্রমিক এলাকায় আসলে তাদেরকে বাড়িতে না নিয়ে কেবিএ কলেজে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। গত ৩ মে ১০ জনের নমুনা টেস্টে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ৮ জনের নমুনা পাঠানো হয় খুলনার ল্যাবে। কিন্তু ৫ মে তাদের একজনের পজেটিভ বাকি সবাই নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। এরপর ১৪ মে তাদের কোয়ারেন্টাইন শেষ হলে ২য় বার নমুনা সংগ্রহ করে তাদের বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি দেয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু তখনও আক্রান্ত ব্যক্তিসহ বাকিদের ২য় দফার রিপোর্ট আসেনি। এসময় তাদেরকে বাড়িতে আরো ৪দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা বলা হয়েছিল বলে দাবী স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল লতিফের । কিন্তু কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিরা মুক্ত হয়ে রীতিমত বাড়িতে ফিরে বাজারে, দোকানপাটে, আতœীয়তা শুরু করে দেয় বে-সামাল ভাবে। কিন্তু প্রশাসনের কোন তদারকি না থাকায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন শেষ হওয়ার পর খেয়াল খুশি মত বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়িয়েছে ঐ ২৩ জন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি। এর মধ্যে গত ১৭ মে বিকালে ২৩ জনের পজেটিভ রিপোর্ট আসে। আর এতে ভয় আর আতঙ্কে চাপা ক্ষোভে ভেঙে পড়ে উপজেলাবাসী । তড়িঘড়ি করে রাত থেকে পরিবারগুলোকে লকডাউনে রাখা হয়। তবে তার আগে ঐসব আক্রান্ত ব্যক্তিরা কতজন সুস্থ মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন তার হিসাব নেই কর্তৃপক্ষের কাছে। তাছাড়া রিপোর্ট আসার আগে বাড়িতে পাঠানোর মত বুদ্ধিহীনতায় হতভম্ব সারা উপজেলার মানুষ। তবে সচেতন মহল বলছেন নির্বাহী অফিসারের এমন ধরনের সিদ্ধান্তে উপজেলার অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি তাদের জীবন মরনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এমনকি কুলিয়া, পারুলিয়া এলাকায় শাড়ি কাপড়ের দোকান গুলোতে যে পরিমান ভীড় জমছে তাতে ঈদের পরে দেবহাটায় মহামারি আকার ধারন করতে পারে বলে আশঙ্খা করছেন সচেতন মহল। একই সাথে উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ বাজার চালু থাকলেও সবগুলো হাট উন্মুক্ত করা হয়েছে। এতে জনসমাগম বেড়ে চলেছে। এছাড়া উপজেলা পরিষদের পাশেই চায়ের দোকান ও ইফতার সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনের নেই কোন নজরদারী। রাস্তা গুলোতে বড় যানবাহন না থাকলেও ব্যক্তিগত ও ছোট যানবহনের চাপ রয়েছে চোখে পড়ার মত। তাই সমগ্র উপজেলাটি লকডাউন করা না গেলে এর প্রভাব ভয়ানকভাবে বিস্তার করবে বলে মনে করেন সচেতন মহল। এসব বিষয় নিয়ে সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর গাজী বলেন, ঐ ব্যক্তিদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখার পর থেকে তাদের সার্বিক খোঁজ খবর নিতে থাকি। ১৪দিন পার হওয়ায় তাদের বাড়িতে পাঠানো হয়। তাদের রিপোর্ট আসা পর্যন্ত অপেক্ষা না করায় এটি চিন্তার কারন হয়েছে। তবে আমরা প্রশাসনের নির্দেশ মোতাবেক সব রকম কাজ করে যাচ্ছি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ আব্দুল লতিফ জানান, এ পর্যন্ত ৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন শেষ হলে আইইডিসিআর ও সিভিল সার্জনের পরামর্শে তাদের বাড়িতে পাঠানো হয়। কিন্তু তাদের কারো শরীরে কোন উপসর্গ না থাকায় আমরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। দেবহাটা থানার ওসি বিপ্লব কুমার সাহা জানান, করোনা প্রতিরোধে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। মানুষকে ঘরে রাখতে এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যরা রাত দিন কাজ করছে। কিন্তু এক সাথে এত জন ব্যক্তি আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি খুবই চিন্তার । আমরা আক্রান্তদের বাড়িতে যেয়ে লকডাউন করেছি। তারা যাতে বাড়িতে অবস্থান করে সে বিষয়েও নজর রাখা হচ্ছে। এই মুহুর্তে সকলের সচেতনতার বিকল্প নেই। তাই সবাই বাড়িতে থাকুন, পরিবারকে নিরাপদ রাখুন বলে জানান ওসি। এদিকে, এ রিপোর্ট লেখার সময় বিকাল ৪ টা ৩০ মিনিটে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরিনের সরকারি সেল (০১৭৭১১১২২৪৫) নম্বরটি বন্ধ রাখায় তার মতামত নেওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া উপজেলা পরিষদ চত্বর ও ইউএনও’র বাসা সংলগ্ন ৫০ গজের ভিতরে চায়ের দোকান, বিভিন্ন দোকান খোলা থাকায় জনমনে আতঙ্ক কাটছে না। তাই উপজেলাব্যাপী লকডাউন করে সংক্রামন রোধ করতে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল। এ ঘটনার পর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তি উদ্যোগে খন্ড আকারে এলাকা ভিত্তিক লকডাউন করে দিতে থাকে এলাকাবাসী। এছাড়া নলতা, তারালি, ভাড়াশিমলা, করোনা এক্সপার্ট টিমের ৬০জন বিভিন্ন চেকপোষ্টে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানাযায়। তা ছাড়া কালিগঞ্জের নলতা ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক একযোগে দেবহাটা ও কালিগঞ্জ উপজেলার সীমান্তে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।