দেবহাটায় ইজিবাইক চালক মনিরুল হত্যায় চাঞ্চল্যকর রহস্য উদঘাটন

0
834

আব্দুর রব লিটু,দেবহাটা : দেবহাটায় ইজিবাইক চালক মনিরুল হত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর রহস্য উদঘাটন। আদালতে স্ত্রী ও তার প্রেমিকের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান। পরকিয়ার সুত্র ধরেই মনিরুল হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানাযায়। সাতক্ষীরার দেবহাটায় গত ২৫ জুন ২০২০ ইং তারিখে এক ইজিবাইক চালককে নির্যাতনের পর শ^াসরোধ করে হত্যা করার ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই বাদী হয়ে দেবহাটা থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলার বাদী নিহত মনিরুলের ভাই উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের মৃত ইসমাঈল গাজীর পুত্র আমিনুর রহমান (২২‘র মামলার বিবরণ সূত্রে জানাযায়, নিহত মনিরুল গত ২৫ জুন বিকাল ৩ টার দিকে তার ভাড়া চালিত ইজিবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। ঐদিন রাত ১০ টা ২৬ মিনিটে মনিরুলের সাথে তার স্ত্রীর ফোনে কথা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে মনিরুলের ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেলে তারাসহ আত্মীয়স্বজনরা মনিরুলকে খোজাখুজি করতে থাকে। পরে সকাল সাড়ে ৫ টার দিকে তারা সংবাদ পায় তার ভাই মনিরুলের মৃত দেহ সখিপুরস্থ জনৈক আশিষ মন্ডলের বেগুন ক্ষেতে পড়ে আছে। মামলা নং ০৯, পেনাল কোড ১৮৬০ ধারা ৩০২/৩৯৪/৩৪. তাং ২৬-০৬-২০২০ ইং। এর পর থেকে মনিরুল হত্যা কান্ডের ঘটনা উদঘাটনে তৎপর হয়ে কাজ করতে খাকে পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা। অবশেষে বৃহষ্পতিবার সাতক্ষীরার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বিলাস মন্ডলের কাছে নিহত ইজিবাইক চালক মনিরুলের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন ও রাবেয়ার প্রেমিক উপজেলার কামটা গ্রামের ওহাব সরদারের পুত্র সাইদুর রহমান ওরফে রাজু পৃথক পৃথকভাবে ১৬৪ ধারা মতে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন। জবানবন্দীতে কেন, কি কারনে, কোথায় আর কিভাবে মনিরুলকে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে তার প্রকাশ পেয়েছে। মনিরুলের স্ত্রী রাবেয়ার সাথে রাজুর অবৈধ সম্পর্কের কারনে তারা উভয়ে কৌশল করে মনিরুলকে হত্যা করেছে বলে আদালতকে জানিয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দেবহাটা থানার ওসি (তদন্ত) উজ্জ্বল কুমার মৈত্র জানান, মনিরুলের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন ১৬৪ ধারার জবানবন্দীতে জানিয়েছে, মনিরুলের বন্ধু রাজু তাদের বাড়িতে আসা যাওয়ার সূত্র ধরে তার সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গভীর হলে রাজু রাবেয়াকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু রাবেয়া তার স্বামী থাকতে তার সাথে বিয়ে করা সম্ভব নয় বলে জানায়। গত ২৫ জুন ২০২০ ইং তারিখে ভোরে সাংসারিক বিরোধে মনিরুল রাবেয়াকে মারপিট করলে সকাল ১০ টার দিকে রাবেয়া রাজুর গাজীরহাট বাজরে যেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মনিরুল কর্তৃক তাকে মারপিটের কথা জানায়। এতে রাজু প্রচন্ড রেগে গিয়ে ঐদিনই মনিরুলকে হত্যা করার কথা জানায়। পরে তাদের প্লানিং মতো রাজু সন্ধ্যার সময় রাবেয়ার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে মনিরুলের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে দেবহাটায় যেয়ে মনিরুলকে হত্যা করে। ওসি (তদন্ত) উজ্জ্বল কুমার মৈত্র আরো জানান, এছাড়া সাইদুর রহমান রাজু তার ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দীতে বলেছে, রমজান নামে একজনকে সাথে নিয়ে সে দেবহাটাতে আসে। রমজান মনিরুলের ইজিবাইকে যায় আর রাজু মোটর সাইকেলে করে দেবহাটায় যেয়ে বৌদি ষ্টোরের সামনের রাস্তায় দাড়িয়ে থাকে। আগে থেকে রাজু দড়ি কিনে কাছে রেখে দেয়। পরে তারা এক হয়ে মনিরুলের ইজিবাইকে সখিপুরের দিকে আসার সময় সখিপুরের চাতালের কাছে এসে পিছন দিক থেকে দড়ির ফাস দিয়ে ২ জনে মিলে জোরে টান দেয়। এতে মনিরুলের হাত পা লাফা লাফি করতে থাকে। এসময় হাত পা নিথর হয়ে পড়লে রাজু ইজিবাইক থেকে দ্রæত নেমে সখিপুরের দিকে পায়ে হেটে যাওয়ার সময় একটি ব্যাটারি ভ্যানে করে সখিপুরে চলে যায়। সখিপুর মোড় থেকে সে মোটর সাইকেলে গাজীরহাট চলে যায়। যাওয়ার সময় রাজু রমজানকে বলে যায়, যেহেতু এলাকাটা তার তাই লোকজন তাকে চিনে ফেলতে পারে। রমজানকে যা পারে তাই করে দ্রæত এলাকা ত্যাগ করার কথা বলে। পরে রমজান মনিরুলের লাশটা রাস্তার পাশে ফেলে চলে যায়। ওসি (তদন্ত) উজ্জ্বল কুমার মৈত্র আরো জানান, মামলার তদন্ত এখনো চলমান। যতটুকু ক্লু উদঘাটন করা হয়েছে তার থেকে প্রতিয়মান হত্যাটি প্রেমঘটিত কারনে পূর্ব পরিকল্পিত। তবে তদন্ত এখনো অব্যাহত আছে। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ২৬ জুন ২০২০ ইং তারিখ ভোরে দেবহাটা উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের মৃত ইসমাঈল গাজীর ছেলে ইজিবাইক চালক মনিরুল ইসলাম (৩৩) এর লাশ উদ্ধার করে দেবহাটা থানা পুলিশ।