দূষণ আর দখলদারদের দখলে ‘চালনা খাল’

0
950

আজিজুর রহমান, দাকোপ থেকে ফিরে :
অবৈধ দখল, দূষণ ও ভরাটের কারণে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে খুলনার চালনা পৌর শহরের চালনা খালটি। শহরের পানিনিষ্কাশনের একমাত্র পথ এই খাল। কিন্তু খালটি রক্ষায় প্রশাসনের তেমন কোনো উদ্যোগ না থাকায় সেই পানিনিষ্কাশনব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
চালনা পৌর শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটি দখলদাররা দখলে নিয়েছে। খালের বিভিন্ন স্থানে দখল করে বিপণীবিতান, কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। খাল ভরাট করার কারণে শহরে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এমনকি চালনা পৌরসভার মেয়র নিজেও দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাজে ব্যবহার করছেন।

উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় সুত্রমতে, চালনা খালটির আয়তন ২৫ একর পাঁচশত। এরমধ্যে ওয়াপদার বাহিরের উত্তরপাড়ে ৫০ ফুট, দক্ষিণপাড়ে ৩০ ফুট ও লম্বা এক হাজার ফুট দখলদারেরা দখল করেছে। এছাড়া ওয়াপদার ভিতরে অবৈধভাবে ২০ ফুট দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, পশুর নদীর পূর্ব তীরে চালনা পৌরসভা শহরটি অবস্থিত। খালটি পশুর নদী থেকে পৌর শহর হয়ে আনন্দনগর গ্রামের দিকে প্রবাহিত হয়েছে। খালটি দখলদারদের দখলে থাকায় দূষিত পানির দুর্গন্ধে অতিষ্ট পথচারিরা। পশুর নদের শুরু হতে খাল ভরাট করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে। খালের ভিতরে ভরাট করে ধানের মাঠ ও স’মিল রয়েছে। ওয়াপদার বাহিরে খাল ভরাট করে আধাঁপাকা ও পাকা ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে এসব স্থানে খাল সরু হয়ে গেছে।


স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, পশুর নদী থেকে চালনা বাজার হয়ে আনন্দনগর গ্রাম পর্যন্ত খালটি প্রবাহিত। আট থেকে নয় বছর আগেও খালটিতে ধরা পড়ত ছোট বড় অনেক মাছ। কিন্তু দখল আর দূষণের কারণে মাছ তো দূরের কথা, ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে খালটি। খালের দুই পারের মানুষ খালের পানি দৈনন্দিন কাজেও ব্যবহার করতে পারত। এখন দূষণের কারণে সেভাবে পানিও ব্যবহার করতে পারছে না। তাঁরা আরও জানান, খাল দখল করার কারণে গ্রামের বিলের পানি নামতে পারছে না। এতে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
পৌরসভার কাজীপাড়ার ভিতরে বাড়ি ৫৮ বছর বয়সী আজম গাজীর। তিনি বলেন, ‘আমার জন্মই এ এলাকায়। এই খালে সারা বছর পানি থাকত। অনেকেই মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু গত ১০ থেকে ১২ বছর ধরে এই খাল হারিয়ে যাচ্ছে। খরস্রােতের বহমানে খালটি ছিল অনেক বড়। খালের একপার থেকে অন্যপারে ডিঙি নৌকায় পাড়ি দিয়ে যেতো মানুষ। এখন ক্রমেই খালটি বিভিন্ন জায়গায় সরু হয়ে যাচ্ছে। যার যখন প্রয়োজন, তখন তিনি খালটিকে অবৈধভাবে ব্যবহার করছেন।’ আজম বলেন, ‘আমরা সারা জীবন দেখলাম, সেটি একটা খাল। হঠাৎ করে নিজের জমি দাবি করে সেখানে দালান নির্মাণ করা হচ্ছে। কেউ প্রতিবাদও করেন না। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে তার বিপদ চলে আসবে।’

০৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আইয়ুব কাজী বলেন, পুরো খালটি চার ও পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যেই পড়েছে। তবে অন্য লোকজন খালটি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। খালের আশপাশের বসবাসকারীরাই খালটিকে ক্রমেই ভরাট করে দখল করেছেন। তিনি আরও বলেন, শহরের মানুষকে জলাবদ্ধতা হতে রক্ষার্থে পুরো খালটি খনন ও দখলমুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

চালনা পৌরসভার মেয়র সনত কুমার বিশ্বাস মুঠোফোনে খুলনাটাইমসকে বলেন, দীর্ঘ কয়েক বছর আগেই অবৈধভাবে দখল করে খালটির মধ্যে স্থাপনা নির্মাণ করায় তা আর দখলমুক্ত করা সম্ভাব হয়নি। সবচেয়ে বেশি দখলে বাজারের পাশটি। তিনি আরও বলেন, খালটির অবৈধ দখল থেকে মুক্ত করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিজের দখলের বিষয়ে বলেন, সরকারের জায়গা তাই স্থাপনা নির্মাণ না করে মিলের সামনে খালের সমান্য জায়গা ভরাট করা হয়েছে।

দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল ওয়াদুদ খুলনাটাইমসকে বলেন, অবৈধ দখলদার থাকলে তালিকা করে দখলমুক্ত করা হবে। পূর্বের মতো যাতে ওই খাল দিয়ে পানিনিষ্কাশন হতে পারে তার জন্য ব্যবস্থা নেবেন কর্তৃকপক্ষ।