দুঃস্থদের খাদ্য সহায়তার উদ্যোগ সোনাডাঙ্গা মডেল থানা ওসি’র

0
682

ফারহা শেখ :
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সারা দেশের ন্যায় খুলনায়ও চলছে অঘোষিত লকডাউন। এলক্ষ্যে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে দিনরাত কাজ করছে পুলিশও। অলি-গলিতে টহল দেয়া ছাড়াও সচেতনতামূলক মাইকিং করে জনগণকে সতর্ক করছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
কেএমপি’র সোনাডাঙ্গা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক, নিজে মাইকিং করে নগরবাসীর উদ্দেশে বলছেন, ‘আপনারা ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন। কোনো প্রয়োজনে থানায় ফোন করে সহায়তা নিন। আমরা আপনার প্রয়োজনে চলে আসব। আপনি প্রয়োজন পূরণ করব।’
হতদরিদ্র পরিবারের সংখ্যা নগরীতে নেহাতই কম নয়। পুলিশের এমন আহ্বান শুনে ওসির কাছে সরাসরি সহায়তার আহবান জানান নগরীর ১৭নং ওয়ার্ডের সোনাডাঙ্গা মেইন রোডস্থ হাউজবিল্ডিং লেনের কতিপয় বাসিন্দা। এরমধ্যে অন্তত: ২০টি পরিবার প্রায় অস্বচ্ছল। কারো কারো পরিবারে প্রধান কর্তা মহিলা। কেই স্বামী পরিত্যক্তা, কেউবা বিধবা। ওরা সংগ্রাম করে হরহামেশা জীবনের সাথে। অন্যের ঘরে কাজ করে সন্তানের ভরণপোষণ করেন। দৈনিক মজুরিতে কাজ করা, কাঁচামাল বিক্রি, সাথে বাজার-সদাই করা খুব প্রয়োজন তাদের। কিন্তু লকডাউনের কারণে বাসা থেকে বের হতে পারছেন না। এ অবস্থায় না খেয়ে মরা ছাড়া তাদের উপায় নেই।
সমস্যা শুনে এই কর্মকর্তা এসব পরিবার প্রধান নারীসহ কিছু পরিবারকে সীমিত পরিসরে চাল-ডাল,-তেল ও অন্যান্য সামগ্রি বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পুলিশের এমন মানবিক আচরণ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ওই এলাকার হতদরিদ্র ৪ সদস্যের পরিবার প্রধান মালেকা, ময়না, রিমা, মরিয়ম, হাসিনা, ফিরোজা, লাভলী, মরিয়ম, হাওয়া বেগম, মোশাররফ, ত্রিনাথ ও মৌসুমীসহ অন্যরা। তারা উচ্ছ¡াছিত কন্ঠে বলেন, আমরা বিশ্বাস করতে পারিনি পুলিশের উদ্যোগে এমন সহায়তা পাওয়া যাবে। তবে এটা হচ্ছে। আমরা ওসি মমতাজুল ও তার সহধর্মীনির কাছে চির কৃতজ্ঞ। এই দম্পতির দীর্ঘায়ু কামনা করেন তারা। ইতোমধ্যে আমাদের কতিপয় পরিবারের বিস্তারিত তিনি সংগ্রহ করেছেন। আজ-কালের মধ্যে তারা এসব সহায়তা পাবেন এমনটা আশাবাদি। সেইসাথে তারা আরও বলছে, প্রত্যেক থানার ওসি যেন এমন উদ্যোগ নেন।
শনিবার (২৮মার্চ) খুলনা নগরের সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় এসব খাদ্য সহায়তা বিতরণ করবেন ওসি মমতাজুল হক ও তার সহধর্মীনি। ওসি খুলনাটাইমসকে বলেন, ‘বিশ^স্ত সূত্রে খবর পেয়েছি, এই লকডাউনে পরিবার-পরিজন নিয়ে তার থানা এলাকায় বেশকিছু পরিবাৱ দুঃসহ জীবনযাপন করছে। আয় নেই, বাজারে যেতে পারছেন না।’ এমন মানুষের জন্য ভাবনা মূলত: ওসি পত্নীর বলে জানা যায়। জাতির এই ক্লান্তিলগ্নে কিছু অসহায় পরিবারকে সাধ্যনুযায়ী সহায়তার উদ্যোগ নেন তিনি।
ওসি মমতাজ খুলনাটাইমসকে আরও বলেন, ‘আজ সারাদিন থানা এলাকায় টহলের পাশাপাশি সচেতনতামূলক মাইকিং করে জনগণকে সতর্ক করেছে। বেশির ভাগ মানুষই লকডাউন মেনে চলছে। তবে অনেকেই জরুরি প্রয়োজনে বেরিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আমরা তাদের বল প্রয়োগ না করে ভিন্ন উপায়ে ঘরে ফিরিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘রাস্তায় আড্ডা দিতে দেখলেই দাঁড় করিয়েছি। জিজ্ঞেস করেছি, রাস্তায় কেন? কাজে বের হলে কিছু বলিনি। কিন্তু যারা আড্ডা দিতে বের হয়েছে তাদের বাবা-মা কে ফোন করেছি তাদের সামনেই। সন্তান কেন করোনা ঝুঁকিতে বাইরে ঘোরাফেরা করছে তা জানতে চেয়েছি। তারা এ ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং ভবিষ্যতে আর হবে না বলেছে। আমার কাছে এটি কার্যকর মনে হয়েছে।’