দীর্ঘ দিনেও সীমাণা নির্ধারণ কিংবা উদ্ধার হয়নি কপিলমূনির চরভরাটি কোটির্দ্ধ সরকারি সম্পত্তির

0
328

শেখ নাদীর শাহ্: দীর্ঘ দিনেও কপোতাক্ষের কপিলমূনি সদরের কোটি কোটি টাকা মূল্যের সরকারি চরভরাটি সম্পত্তির দখল উচ্ছেদে কার্যত কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি সরকার। ইতোপূর্বে স্থানীয় জনৈকা ভূমিহীন মহিলাকে সেখানকার প্রায় ১০ শতাংশ সম্পত্তির বন্দোবস্ত দিলেও দখল বুঝে দিতে পারেনি সরকারের সংশ্লিষ্ঠ কতৃপক্ষ। এনিয়ে দখল-পাল্টা দখল ও মামলা পাল্টা মামলার ঘটনায় মানবিক দিক বিবেচনায় বন্দোবস্ত গ্রহীতা বাস্তুহারাকে সরকারের অন্যত্র সম্পত্তি থেকে সামান্য পরিমাণ জমির দখল দিলেও চিহ্নিত ৫৯৫ দাগের বিস্তীর্ণ সরকারি সম্পত্তি রয়ে গেছে দখলদারদেরই অনুকূলে। ইতোমধ্যে সেখানে দখলদাররা কাটা তারের ঘেরা-বেড়া দিয়ে দখল পাকাপোক্ত ও স্থায়ী পাকা ইমারত নির্মাণে ইট এনে রেখেছেন। দখলদারদের দাবি,বিবাদমান সম্পত্তি তাদের মালিকানাধীন। অন্যদিকে সরকার বলছে,ঐ সম্পত্তি সরকারের খাস খতিয়ানভূক্ত। এমন পরিস্থিতিতে সরকারীভাবে ফের জরিপপূর্বক সীমাণা চিহ্নিত কিংবা দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে,স্থানীয় প্রশাসনের দূর্বলতার সুযোগে যেকোন সময় স্থায়ী দখল হয়ে যেতে পারে সরকারের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি।
তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, ৮০’র দশক থেকে প্রথমে কপোতাক্ষের ব্যাপক ভাঙ্গন ও পরবর্তী পর্যায়ে নাব্যতা হ্রাসে কপিলমূনি সদরের কপোতাক্ষের তীর জুড়ে গড়ে ওঠে বিস্তীর্ণ চরভরাটি খাসজমি যা সরকারের সর্বশেষ মানচিত্রে ১ নং খাস খতিয়ানের ৫৯৫ দাগে চিহ্নিত হয়।
তবে কপোতাক্ষের নব্যতা হ্রাসে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ হয়ে বর্ষা মৌসুমে স্থায়ী জলাবদ্ধতা ও জীবন-জীবিকার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় আন্দোলনের মূখে সরকার কপোতাক্ষ খননের কাজ শুরু করে। ঐ সময় খননের উচ্ছিষ্ট মাটি দু’পারে ফেলায় কপিলমূনি অংশে দৃশ্যমান হয় বিস্তীর্ণ খাস জমির। আর সেই সুযোগে শুরু হয় এর দখল প্রক্রিয়াও। ক্রমাগত চরভরাটি জমির সীমাণা লাগোয়ারা দখল নিতে থাকেন জেগে ওঠা জমির।
সূত্র জানায়,আধুনিক কপিলমূনির প্রতিষ্ঠাতা রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুর ভাই কুঞ্জ বিহারী সাধুর বংশধররাও ঐ সম্পত্তির একটি অংশ দখল নেয়। এর আগে ২০১৩ সালে স্থানীয় জনৈকা মালঞ্চ নামের এক গৃহহীন ভূমিহীন খাসখতিয়ানের ৫৯৫ দাগের মধ্য থেকে ১০ শতাংশ সম্পত্তির বন্দোবস্ত নেন। এরপর সেখানকার দখল নিতে গেলেই বাধে বিপত্তি। এরপর ফের বিষয়টি অবহিত করে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদনের প্রেক্ষিতে তার নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে মালঞ্চ বন্দোবস্তকৃত সম্পত্তির দখল নিতে গেলেও বাঁধার মূখে পিছুহটে মালঞ্চ। ঘটনায় উভয়পক্ষের একাধিক মামলাও চলমান রয়েছে।
প্রসঙ্গত,পাইকগাছা উপজেলার কপিলমূনির এনায়েত সরদারের স্ত্রী মালঞ্চ বিবি পাইকগাছা উপজেলা ভূমি অফিসে মিস কেস যার চেক রসিদ নং-৯২/১২-১৩,মিস কেস ১৪৯৮/১২-১৩,তারিখ ১৮/৪/১৩ ও চেক রসিদ নং-৫৪/১২-১৩,মিস কেস নং-৮৭৬/১২-১৩,তারিখ-১৬/১/১৩ এর বিপরীতে নাছিরপুর,রেজাকপুর ও কাশিমনগর মৌজার ৫৯৫,১২৬৭ ও ৩৩ নং দাগের ১ একর সম্পত্তির ১ সনা বন্দোবস্ত গ্রহন করেন।
এরপর তিনি বন্দোবস্তকৃত জমির দখল বুঝে পেতে খুলনা জেলা প্রশাসকের নিকট একটি আবেদন করলে গত ৩০ জানুয়ারী ১৮’ ০৫.৪৪.৪৭০০.০৩১.৩৩.০০১.১৮-১৪৫৫ নং স্মারকে দখল ও সীমানা বুঝে দিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাইকগাছাকে নির্দেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার সাকিরুল ইসলাম,ইউএলও স্থানীয় ফাঁড়ি পুলিশকে সাথে নিয়ে ঐএলাকার খাস জমি জরিপপূর্বক নির্ধারণ করে পাকা পিলার দিয়ে লাল পতাকা উঠিয়ে।
এরপরও মালঞ্চ তার বন্দোবস্তকৃত জমি বুঝে না পাওয়ায় সর্বশেষ গত ৫ মে পুনর্দখল বুঝে পেতে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি আবেদন করলে ইউএনও ৬ মে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনে কপিলমূনি ভূমি অফিসের ইউএলও ও স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বাবুল হোসেনকে বলেন। যার প্রাপ্তি নং-২৯৪।
সর্বশেষ ইউএনও’র অনুমতিতে স্থানীয় ইউএলও-স্থানীয় পুলিশের সহযোগীতায় ১৪ মে সকালে কপোতাক্ষ তীরের বন্দোবস্তপ্রাপ্ত খাস জমিতে তৃতীয় দফায় ঘর বাঁধতে গিয়েও দখলদারদের বাঁধার সম্মুখিন হন। ঐ ঘটনায় সহকর্মীদের সাথে সংবাদ সংগ্রহে যাওয়ায় গত ১৬ মে পাইকগাছা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্থানীয় তপন কুমার সাধুর ছেলে অমিত সাধু ওরফে শান্তর দায়ের করা মামলায় দৈনিক জন্মভূমির স্থানীয় সাংবাদিক তপন পালকে ৫ নং আসামী করা হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে তাৎক্ষণিক ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
এদিকে আদালত মামলাটির তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনে কপিলমূনি পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মোঃ বাবুল হোসেনকে দায়িত্ব দিলে তিনি গত ৩০ জুলাই পাইকগাছার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামীদের বিরুদ্ধে ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩৭৯/৪২৭/৫০৬(২) দ:বি: প্রাথমিকভাবে প্রমানিত হয়নি এবং মালঞ্চ বিবির সংশ্লিষ্ট জমির বন্দোবস্ত গ্রহনের কথা উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এতে বাদী পক্ষ আদালতে ঐ তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি পিটিশন দিলে আদালত ফের মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআই খুলনাকে দায়িত্ব দেন। পিবিআই খুলনা ইতোমধ্যে মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে।
এব্যাপারে স্থানীয় ভূমি অফিসের ইউএলএও মোঃ জাকির হোসেন জানান,আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে। যদি কেউ সরকারি সম্পত্তি ভোগ করে থাকেন, আইনী প্রক্রিয়ায় পর্যায়ক্রমে তাদের উচ্ছেদপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।