দাকোপে রাস্তা নির্মাণে অনিয়ম করায় ইট তুলে প্রতিবাদ

0
730

আজিজুর রহমান, দাকোপ থেকে ফিরে :
খুলনার দাকোপ উপজেলার চান্নিরচক গ্রামের চান্নিরচক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিবনগর জোয়ার্দ্দার বাড়ির অভিমূখে রাস্তা নির্মাণে অনিয়ম করায় ইট তুলে ফেলে প্রতিবাদ করেছিলেন এলাকাবাসী। এ ঘটনার পর উপজেলা প্রকৌশলী সরেজমিনে ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে কাজ বন্ধ রেখে নিম্নমানের ইট তোলার নির্দেশ দেন। রাস্তা নির্মাণের কাজটি করছেন বটিয়াঘাটা উপজেলা যুবলীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রাসেল কবির।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, আওয়ামী যুবলীগের ওই নেতা রাস্তা নির্মাণে ১ নম্বর ইটের পরিবর্তে ৩ নম্বর ইট ব্যবহার করেছেন। এ ছাড়া রাস্তাটি ১০ ফুট চওড়া করার কথা থাকলেও নয় ফুটের মতো করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে গ্রামবাসী তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তার নিম্নমানের ইট গত ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে তুলে ফেলে দেন। তবে ইট তুলতে ওই প্রতিবাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলেন স্থানীয় আর অ্যাণ্ড সি ক্লাবের যুবকরা। প্রতিবাদের পর থেকে প্রায় ২০ থেকে ২২ দিন নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল।

উপজেলার চান্নিরচক গ্রামের বাসিন্দা রবেন বর্মণ জানান, সিডিউল অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় এই প্রতিবাদ করা হয়। রাস্তাটি নির্মাণে ৩ নম্বর ইট ব্যবহার করে। নিম্নমানের ইট সরিয়ে ১ নম্বর ইট দিয়ে কাজ করার জন্য ঠিকাদারের বিরুদ্ধে বার বার প্রতিবাদ করা হয়। এরপরও কর্ণপাত না করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
নিম্নমানের ইট দিয়ে কাজ করার কথা স্বীকার করে ঠিকাদার রাসেল কবির খুলনাটাইমসকে বলেন, ইট ভাটা থেকে কাজের পাশে অন্য জায়গার নিম্নমানের ইট চলে আসে। পরে জানতে পেরে ওই ইট রাস্তা থেকে তুলে সরিয়ে ফেলা হয়। কাজ বন্ধের বিষয় জানতে চাইলে বলেন, নির্মাধীণ রাস্তারে পাশে চায়না ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ওয়াপদার রাস্তার কাজ করছে, এ কারণে চান্নিরচক রাস্তার পাশ থেকে মাটি নেওয়ায় আপাতত কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদার বলেন, এক ট্রলার খারাপ ইট কাজের পাশে এসেছিল। এলাকাবাসি জানানোর পর থেকে আর কোনো খারাপ ইট নিয়ে আসা হয়নি। রাস্তার নির্মাণ কাজ ভাল হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

কামারখোলা ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের (ইউপি) সদস্য সুশংকর বাছাড় জানান, চান্নিরচক ও জালিয়াখালী গ্রাম মিলে ৪৫০টি পরিবার বসবাস করে। এই দুই গ্রামের লোকজন একটি কাঁচা রাস্তা দিয়ে রাজনগর গ্রামে যাতায়াত করে। বর্ষাকালে এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যায় না। এ কারণে স্থানীয় লোকজন দীর্ঘদিন ধরে রাস্তটি পাকা করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি এলজিইডি দপ্তরের আওতায় ডাবল ইট সোলিংয়ের রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, চান্নিরচন গ্রামের মধ্যে থেকে একটি রাস্তা শিবনগরের দিকে চলে গেছে। রাস্তার দুই মাথায় ইট বিছানো। রাস্তার এক পাশ ধরে কিছু পথ গিয়ে মাঝখানে বালু ফেলানো আছে। এর দুই পাশে ইট পড়ে আছে। কাজের পাশে কোনো সাইন বোর্ড দেখা মেলেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কাজের একজন শ্রমিক রাস্তাটি খুঁড়ে দেখিয়ে বলেন, রাস্তার কাজ ঠিকমত হচ্ছে না। নিচের সোলিংয়ে ভাঙা (অর্ধেক) ইট দিয়ে কাজ করছে। কিছু কিছু জায়গায় ভাল ইট দিচ্ছে। বর্তমানে নির্মাণ কাজটি সপ্তাহখানেক ধরে বন্ধ রয়েছে।

উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সুত্রে জানা যায়, এলজিইডি’র অধীনে কেনিয়া স্থানচ্যুতি প্রভাব উন্নয়ন প্রতিক্রিয়া প্রকল্পের (কেডিআরডিআইপি) আওতায় কামারখোলা ইউনিয়নের চান্নিরচক থেকে জয়নগর বাজার পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার লম্বা ও ১০ ফুট চওড়া ডাবল ইটের সোলিং রাস্তা নির্মাণের জন্য প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কাজটি ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা উল্লেখ আছে। ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী নির্মাণ কাজ না করায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ করা হয়।

স্থানীয় আর অ্যাণ্ড সি ক্লাবের সদস্য সুদীপ্ত রায় বলেন, প্রথম থেকেই অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ চলছে। এ বিষয়ে ঠিকাদারকে বার বার বলা হলেও ঠিকাদার শুনেননি। এখানে ১ নম্বর ইট দিয়ে কোনও কাজ হচ্ছে না। তবে প্রতিবাদের চাপে পড়ে মাঝেমধ্যে কিছু ভাল ইট নিয়ে আসে। দুদিন পরে আবার আগের মতো নিম্নমানের ইট দিয়ে কাজ চালায়। এ কারণে এলাকাবাসী রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানালে কাজ বন্ধ রাখে।

ওই রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন মো. ফিরোজ হোসেন নামের একজন চালক। তিনি বললেন, রাস্তার নির্মাণ কাজে স্থানীয় বালু তো ব্যবহার করেছে। তারপরে কোনো জায়গায় ঠিকমত বালু দিচ্ছে না। রাস্তার ওপর দিয়ে গাড়ি চালালে ইট নড়বড় করে।

উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান গৌরপদ বাছাড় বলেন, রাস্তাটি নির্মাণ করতে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। ঘটনাস্থলে গিয়ে ৩ নম্বর ইট দেখে প্রতিবাদ করে কাজ বন্ধ করেছিলাম। পরে যদিও নিম্নমানের ওই ইট রাস্তা থেকে তুলে নেন। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার নিম্নমানের ইট দিয়ে কাজ করে ঠিকাদার। এতে রাস্তার নির্মাণ কাজের মান ভাল হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে দাকোপ উপজেলা প্রকৌশলী ননী গোপাল দাস মুঠোফোনে খুলনাটাইমসকে বলেন, শোনার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তাটি পরিদর্শন করে কাজ বন্ধ রেখে নিম্নমানের ইট তুলতে নির্দেশ দেয় ঠিকাদারকে। ইটের ভাটায় ভাল ইট না থাকায় বর্তমানে রাস্তার নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদার। প্রকল্পের নিয়মানুযায়ী নির্মাণ কাজের মেয়াদ শেষ হলেও কাজের জন্য এখনো অতিরিক্ত সময় পাবে। এরই মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।