দাকোপে জরাজীর্ণ ভবনে সরকারি কর্মচারীদের ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস

0
771

আজিজুর রহমান, দাকোপ থেকে :
স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ। কংক্রিট আর পলেস্তারা ভেঙে পড়ছে। বৃষ্টি হলে ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে। ছাদের সিলিংয়ে পানি শুকিয়ে যাওয়ার কালো ছোপ ছোপ দাগ। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় ভবনগুলো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। জরাজীর্ণ ভবন হলেও নিয়মানুযায়ী পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়নি। তবে সেই জরাজীর্ণ ভবনে দুর্ঘটনার আশঙ্কার মধ্যেই সরকারি কর্মচারীরা বাস করছেন।

এ চিত্র খুলনার দাকোপ উপজেলার সরকারি আবাসিক ভবনগুলোর। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য বাসা থাকলেও কয়েকজন কর্মকর্তা অন্যত্র ভাড়া বাসায় থাকেন। তবে ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও বাধ্য হয়ে বসবাস করছেন কর্মচারীরা। গাছপালা ঝোপঝাড়ে একাকার হয়ে যেন ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে এখানে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনগুলোর বাইরে ও ভেতরের দেয়ালের অনেক স্থানে বড় ফাটল। দরজা-জানালা ভেঙে গেছে। ছাদের পলেস্তারা খসে লোহার রড বেরিয়ে গেছে। কক্ষের ভেতর বাঁশের খুঁটিতে ছাদ ঠেকা দিয়ে রাখা হয়েছে। আবার কোনো কোনো ভবনের পলেস্তারা ও বৃষ্টির পানি ঠেকাতে পলিথিন ব্যবহার করছে।

কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃষ্টি এলে তাদের ব্যবহৃত পোশাক ও বিছানাপত্র পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। ঝড় হলে তো বিপদ বেশি। ভবন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় অনেকেই বাইরে আশ্রয় নেন। কক্ষের ভেতর থাকলে সব সময় একটা আতঙ্ক কাজ করে তাদের। তারা আরও বলেন, ভবনগুলোর এমন বেহাল দশা, সবাই এর ভেতরে ঢুকতেই ভয় পান। বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় অনেকেই এখানে থাকতে চান না, বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। কখনো কখনো ছাদের পলেস্তারা ভেঙে পড়ে। সবচেয়ে বেশি নাজুক অবস্থা কর্মচারী ডরমিটরি ভবনের।

জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করেন উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান গৌরপদ বাছাড়। তিনি পরিবার নিয়ে যে ভবনটিতে থাকেন সেটির জীর্ণদশা অনেক আগ থেকে। বর্ষা মৌসুমে একটি কক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছিল। তিনি বলেন, ছাদ ভেঙে যাওয়ার পরে পলিথিন টানিয়ে বাঁশের খুঁটি দিয়ে ছাদ ঠেকিয়ে কোনভাবে বসবাস করছি। অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও বসবাস করতে হচ্ছে। জণগনের সেবায় যথাসময়ে অফিসে পৌঁছতে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্ট করে থাকছি।

পাশ্ববর্তী ভবনে ২ হাজার ৫শ‘ টাকা ভাড়া দিয়ে থাকেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা দপ্তরের অফিস সহায়ক সেখ আব্দুস সামাদ। তার পাশের ভবনে স্ত্রী ও স্কুল পড়ুয়া দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করেন নিরাপত্তা প্রহরী রুহুল আমিন। তিনি জানান, ওই ভবনে ৪টি বাসা থাকলেও দুটি পরিবার থাকেন। দুইটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী ননীগোপাল দাস বলেন, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যে ভবনগুলোতে থাকেন, সেগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। যেকোনো সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদের পাঁচটি কর্মকর্তা-কর্মচারি আবাসিক ভবন ও একটি কর্মচারি ডরমিটরি ভবন রয়েছে। যা ১৯৮৪ সালের দিকে নির্মাণ করা হয়েছিল। ভবনগুলো অনেক পুরানো হওয়ায় সংস্কারের অভাবে বসবাসের অনুপোযুগী হয়ে পড়েছে। তাই অন্যত্র বাসা নিয়ে থাকা ছাড়া উপায় নেই।

দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল ওয়াদুদ খুলনাটাইমসকে বলেন, ‘জরাজীর্ণ ভবনের ঝুঁকির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের রেজ্যুলেশনে পরিত্যক্ত হিসেবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন জেলা প্রশাসক নিয়মানুযায়ী পরিত্যক্ত ঘোষণা করবেন এবং নতুন ভবন নির্মাণে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের জন্য দাপ্তরিক কাজ করবেন।’